
দেশে অন্ধ মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ। প্রতি বছর নতুন করে অন্ধ হচ্ছেন আরও প্রায় ৪০ হাজার জন। দেশে মোট অন্ধ ব্যক্তির এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ৫ লাখ ২৬ হাজার মানুষ শুধু কর্নিয়াজনিত কারণে দৃষ্টিহীন এবং বিশ্বে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা প্রায় ২৮ দশমিক ৫ কোটি বলে জানা যায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মানুষগুলোর দৃষ্টি ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে। মরণোত্তর চক্ষু দানের মাধ্যমে আমরা এই অসহায় মানুষের দৃষ্টি ফিরিয়ে দিতে পারি।
বিশেষজ্ঞরা জানান, চোখের ওপর যে কালো গোলাকার স্বচ্ছ ও পুনঃস্থাপনযোগ্য পর্দা তাকেই কর্নিয়া বলে। কর্নিয়া সংক্রমণের কারণে যখন দৃষ্টিশক্তি লোপ পায় তাকেই কর্নিয়াজনিত অন্ধত্ব বলে। কর্নিয়াজনিত অন্ধত্বের কারণ—ভিটামিন-‘এ’র অভাব, ব্যাকটেরিয়া থেকে কিংবা ভাইরাসজনিত সংক্রমণ, আঘাতজনিত কারণ, কর্নিয়ার আলসার ইত্যাদি।
কর্নিয়াজনিত অন্ধত্ব দূর করার একমাত্র উপায় মানব চক্ষুর কর্নিয়া প্রতিস্থাপন। সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতিই বাংলাদেশে একমাত্র প্রতিষ্ঠান যারা কর্নিয়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ, সরবরাহ ও প্রতিস্থাপন করে আসছে। কিন্তু বর্তমানে সন্ধানী প্রতি বছর গড়ে ২০-৩০টি কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করে থাকে, প্রয়োজনের তুলনায় যা খুবই কম।
সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. ফজলুল হক কাশেম ইত্তেফাককে বলেন, আগামী ১০ বছরের মধ্যে দেশ থেকে কর্নিয়াজনিত অন্ধত্ব দূর করতে প্রতি বছর ৩৬ হাজার কর্নিয়া সংগ্রহ করা প্রয়োজন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এটি অর্জন করা মোটেই দুরূহ নয়। বর্তমানে দেশের মোট মৃত ব্যক্তিদের মাত্র ২ শতাংশের কর্নিয়া সংগ্রহ করতে পারলেই, আমরা আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব। তাই দেশের ৫ লাখ ২৬ হাজার অন্ধ ব্যক্তির চোখের আলো ফিরিয়ে দিতে আমাদের কর্নিয়া দানে এগিয়ে আসতে হবে।
সবাই কর্নিয়া দান করতে পারে। তবে যেসব ব্যক্তি এইডস, ভাইরাল হেপাটাইটিস, জলাতঙ্ক, সিফিলিস, ধনুষ্টংকার রোগের কারণে মারা যান, তারা ছাড়া—বাকি সব ব্যক্তিকেই চক্ষুদানের জন্য উপযুক্ত ধরা হয়।
স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ছয় থেকে আট ঘণ্টার মধ্যে চক্ষু কিংবা কর্নিয়া সংগ্রহ করতে হয়। কিন্তু হিমঘরে রাখা অবস্থায় ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত চক্ষু কিংবা কর্নিয়া সংগ্রহ করা যায়।
আজ ২ নভেম্বর ‘জাতীয় স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান দিবস’। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং সন্ধানী কেন্দ্রীয় পরিষদ ও সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতির উদ্যোগে আজ দিবসটি যথাযথভাবে দেশব্যাপী পালিত হবে। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে— ‘রক্তদানে হয় না ক্ষতি, চোখ ছুঁয়ে যাক চোখের জ্যোতি’।
দিবসের কর্মসূচি : আজ সকাল ৮টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে শোভাযাত্রা বের হবে। শোভাযাত্রাটি বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চত্বরে গিয়ে শেষ হবে। সকাল ৯টায় স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের লেকচার হলে।
বাংলাদেশে স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান আন্দোলনের পথিকৃৎ ‘সন্ধানী’। রক্তদানের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি মানুষের চক্ষু ব্যাংক হিসেবেও কাজ করে। সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতির মহাসচিব ডা. মোহাম্মদ মনির হোসেন জানান, তাদের এই সমিতি ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ৪ হাজার ১৮৮টি কর্নিয়া সংগ্রহের মাধ্যমে ৩ হাজার ৫২৫ জন অন্ধ মানুষের চোখের দৃষ্টি ফিরিয়ে দিতে পেরেছে।