
ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো অঞ্চলের ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক পুলিশি অভিযানের পর শহরে শত শত লোক বিক্ষোভ মিছিল করেছে। তারা রাজ্যটির গভর্নর ক্লডিও কাস্ত্রোর পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন।
আল জাজিরা জানিয়েছে, শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) বিক্ষোভকারীরা ভিলা ক্রুজেইরোতে জড়ো হয়, যেখানে পুলিশ প্রাণঘাতী অভিযান চালিয়েছিল। গত সপ্তাহের অভিযানের চার পুলিশ কর্মকর্তাসহ কমপক্ষে ১২১ জন নিহত হয়।
গত মঙ্গলবার রিওজুড়ে প্রায় ২৫০০ পুলিশ এবং সৈন্য ‘কমপ্লেক্সো দে আলেমাও’ এবং ‘কমপ্লেক্সো দা পেনহা ফাভেলাসে’ কুখ্যাত গ্যাং কমান্ডো ভারমেলহো (রেড কমান্ড)’কে লক্ষ্য করে খাড়া পাহাড়ের ঢালে নির্মিত নিম্ন-আয়ের এবং জনাকীর্ণ এলাকা ফাভেলাসে অভিযান চালায়।
সাঁজোয়া যান এবং হেলিকপ্টারের সাপোর্টে থাকা অফিসাররা গ্যাং সদস্যদের কাছ থেকে প্রতিশোধের শিকার হন। এর ফলে শহরজুড়ে বিশৃঙ্খলার দৃশ্য দেখা দেয়।
সরকারের ঘোষিত উদ্দেশ্য ছিল, গ্যাং নেতাদের ধরা এবং তাদের কমান্ডের আঞ্চলিক সম্প্রসারণকে চ্যালেঞ্জ করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্যাংটি শহরের ফাভেলা এবং অন্যান্য এলাকার ওপর নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি করেছে।
কর্তৃপক্ষ প্রথমে দাবি করেছিল, মাত্র ৬৪ জন নিহত হয়েছে। কিন্তু পরের দিন বাসিন্দারা কাছাকাছি একটি জঙ্গলে আরও অনেক মৃতদেহ দেখতে পান।
শুক্রবার স্থানীয়রা, রাজনীতিবিদ, মানবাধিকারকর্মী ও পূর্ববর্তী অভিযানে ছেলেদের হারানো শোকাহত মায়েরা ভিলা ক্রুজেইরোতে জড়ো হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বেশিরভাগ লোকের ক্ষোভ রিও রাজ্যের ডানপন্থী গভর্নর কাস্ত্রোর প্রতি ছিল। বিক্ষোভকারীরা তাকে ‘হত্যাকারী’ বলে অভিহিত করেন।
গভর্নরের পদত্যাগ দাবি করে এবং তাকে কারাগারে পাঠানোর দাবি জানিয়ে বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দেন, ‘কাস্ত্রোকে বাদ দাও, গণহত্যা বন্ধ করো!’
স্থানীয় কাউন্সিলর মনিকা বেনিসিও বলেন, ‘ফাভেলাসে তরুণদের হত্যা করা জনসাধারণের নীতি নয়। এটি একটি গণহত্যা।’
গভর্নর কাস্ত্রো ‘মাদক-সন্ত্রাসীদের’ বিরুদ্ধে অভিযানকে ‘সফল’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, নিহতরা ছিল অপরাধী; তারা পুলিশের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল।
রাজ্য সরকার দাবি করেছে, এখন পর্যন্ত চিহ্নিত ৯৯ জন সন্দেহভাজনের মধ্যে ৪২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি ছিল এবং কমপক্ষে ৭৮ জনের বিরুদ্ধে ব্যাপক অপরাধমূলক রেকর্ড ছিল।
শুক্রবারের বিক্ষোভের একটি প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘১২০ জন প্রাণ হারানো কোনো সাফল্য নয়।’ অন্য একটিতে লেখা ছিল, ‘কাস্ত্রোর হাতে রক্ত লেগে আছে।’
অনেকে মৃতদেহগুলো যে অবস্থায় পাওয়া গেছে, সেটির নিন্দাও করেছেন। অন্তত একজনের শিরশ্ছেদ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। অন্যদের দেহে ক্ষতবিক্ষত বা বাঁধা অবস্থায় পাওয়া গেছে।
রিও পুলিশের অভিযানে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ মৃত্যুর সংখ্যা এটিই। ঘটনাটি মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং জাতিসংঘে নিন্দার ঝড় তুলেছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এই ‘বিপর্যয়কর অভিযান’-এর নিন্দা জানিয়েছে এবং ব্রাজিলীয় কর্তৃপক্ষকে ‘প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের দ্রুত, পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং স্বাধীন তদন্ত নিশ্চিত করার’ আহ্বান জানিয়েছে।
ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট এবং এমপিরা কাস্ত্রোকে কীভাবে অভিযান পরিচালিত হয়েছে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আলেকজান্দ্রে ডি মোরেস ৩ নভেম্বর কাস্ত্রো এবং সামরিক ও বেসামরিক পুলিশ প্রধানদের সঙ্গে শুনানির দিন নির্ধারণ করেছেন।
গভর্নর কাস্ত্রো ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভার প্রশাসনের বিরুদ্ধে ‘অপরাধের প্রতি নরম মনোভাবের’ অভিযোগ এনে বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রিও আঞ্চলিক সরকারকে কোনো সাহায্য করছে না।