
নেদারল্যান্ডসের মধ্যপন্থী দল ডি৬৬-এর নেতা রব জেটেন দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে কমবয়সী ও প্রথম প্রকাশ্যে সমকামী প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। গত বুধবারের নির্বাচনে তার দলের শক্তিশালী ফলাফলই তাকে এই সম্ভাবনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। খবর রয়টার্সের
৩৮ বছর বয়সী জেটেন প্রচারণার সময় নিজেকে নতুনভাবে উপস্থাপন করেছেন—একজন জলবায়ু মন্ত্রী থেকে হয়ে উঠেছেন উদ্যমী, ইতিবাচক ও আশাবাদী রাজনীতিবিদ। ‘হ্যাঁ, আমরা পারি’ এ ধরনের বার্তা ও দক্ষ প্রচারণা কৌশলে তিনি তরুণ ভোটারদের পাশাপাশি কেন্দ্রপন্থী ও কিছু ডানপন্থী ভোটারকেও আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছেন।
জেটেন শুধু জলবায়ু ও শিক্ষার মতো প্রচলিত উদারনৈতিক বিষয়েই সীমাবদ্ধ থাকেননি; বরং অভিবাসন সংকট, আবাসন ঘাটতি ও সামাজিক বিভাজনের মতো ইস্যুতেও সরাসরি অবস্থান নিয়েছেন। তিনি কট্টর-ডানপন্থী নেতা গির্ট ওয়াইল্ডার্সকে অভিযুক্ত করেছেন ডাচ পরিচয়কে বিকৃত করার জন্য এবং মুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে তাকে সমালোচনা করেছেন।
নির্বাচনের দিন সকালে ইনস্টাগ্রামে জেটেন লিখেছিলেন, ‘এখন ইতিবাচক শক্তির জয়ের সময়। একসঙ্গে আমরা ‘ওয়াইল্ডার্সকে’ হারাতে পারি— আমি প্রস্তুত।’
তার দল সর্বাধিক আসন পাওয়ার পথে থাকায়, জেটেন এখন জোট সরকার গঠনের প্রথম সুযোগ পেতে চলেছেন। দলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাজসা ওলংগ্রেন বলেছেন, ‘রব জোটেন নিঃসন্দেহে নেদারল্যান্ডসের সবচেয়ে মেধাবী রাজনীতিবিদদের একজন। তিনি দেশকে ঐক্যবদ্ধ করতে এবং ওয়াইল্ডার্সের তৈরি নেতিবাচক পরিবেশ বদলে দিতে পারবেন।’
যদিও জেটেনের যৌনতা তার রাজনৈতিক প্রচারণায় মুখ্য ভূমিকা নেয়নি, তিনি নেদারল্যান্ডসের প্রথম প্রকাশ্যে সমকামী প্রধানমন্ত্রী হবেন। দেশটি এলজিবিটিকিউ অধিকারে অগ্রণী— বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে সমকামী বিবাহ বৈধ করে।
২০২১ সালে টিকটকে অন্য এক রাজনীতিবিদের সঙ্গে তার রোমান্টিক ভিডিও ভাইরাল হয়, যা তাকে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়। পরবর্তীতে তিনি আর্জেন্টিনার হকি খেলোয়াড় নিকোলাস কিনানের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান, যাকে তিনি ‘সুপারমার্কেটে হঠাৎ দেখা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাদের বিয়ে হওয়ার কথা আগামী আগস্টে।
রাজনীতিতে জেটেনকে ভিন্ন করে তুলেছে তার সহযোগিতামূলক ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। তিনি অভিবাসন নীতিতে সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছেন—ইইউর বাইরে থেকেই আশ্রয়ের আবেদন নেওয়া, নতুন অভিবাসীদের জন্য ভাষা ও সংহতি প্রশিক্ষণ বৃদ্ধি, এবং অপরাধীদের নির্বাসিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
আবাসন সংকট মোকাবিলায় তিনি দশটি নতুন শহর নির্মাণ এবং প্রতিবছর এক লাখ নতুন বাড়ি তৈরির ঘোষণা করেছেন। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে তিনি বার্ষিক দুই বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছেন।
ডানপন্থী দলগুলো ডি৬৬-কে প্রগতিশীল অভিজাতদের দল হিসেবে সমালোচনা করলেও, জেটেনের সংযত কিন্তু দৃঢ় অবস্থান, টেলিভিশন কুইজ শোতে অংশগ্রহণ এবং সহিংস বিক্ষোভের পর সংলাপমুখী বক্তব্য তাকে ভোটারদের কাছে ‘মানবিক ও বাস্তববাদী’ নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। যদি সবকিছু পরিকল্পনা মতো এগোয়, তবে রব জেটেন শুধু নেদারল্যান্ডস নয়, ইউরোপীয় রাজনীতিতেও নতুন এক প্রজন্মের নেতৃত্বের প্রতীক হয়ে উঠবেন।