
উত্তর ক্যারিবীয় অঞ্চলে ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালানোর পর হারিকেন মেলিসার আঘাতে বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) পর্যন্ত জ্যামাইকা ও হাইতির সরকারি প্রতিবেদন অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ৪৯ জনে। এই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়টি এখন গতি বাড়িয়ে বারমুডার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
জ্যামাইকার তথ্যমন্ত্রী নিশ্চিত করেছেন, দেশটিতে ১৯ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে এবং কর্তৃপক্ষ এখনও অনুসন্ধান ও উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ঝড়টি দেশটির লাখ লাখ মানুষকে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় রেখে গেছে, অসংখ্য ভবনের ছাদ উড়িয়ে নিয়েছে এবং মাঠগুলোতে ধ্বংসস্তূপ ছড়িয়ে আছে।
হাইতিতে আগের দিনই মেলিসার প্রভাবে সৃষ্ট বৃষ্টি ও বন্যায় ২৫ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছিল; বৃহস্পতিবার দেশটির কর্তৃপক্ষ আরও ৫ জনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছে এবং ২০ জন এখনও নিখোঁজ। অনুসন্ধান ও উদ্ধার তৎপরতায় সহযোগিতা করতে জ্যামাইকার সামরিক বাহিনী তাদের রিজার্ভ সদস্যদের ডেকে পাঠিয়েছে।
মেলিসা গত মঙ্গলবার দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমে ৫ মাত্রার শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হয়ে আঘাত হেনেছিল, যা এখন পর্যন্ত জ্যামাইকার ইতিহাসে সরাসরি তীরে আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়। ১৯৮৮ সালের পর এটিই প্রথম কোনো বড় হারিকেন যা সরাসরি দেশটির ভূখণ্ডে আছড়ে পড়ল। 
অ্যাকুওয়েদারের পূর্বাভাসবিদরা বলছেন, ভূমিতে আঘাত হানার সময় বাতাসের গতি বিবেচনায় নিলে এটি রেকর্ড রাখা শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত আটলান্টিক মহাসাগর থেকে উদ্ভূত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হারিকেনের সঙ্গে যৌথ অবস্থানে থাকবে। ঝড়ের কারণে পশ্চিম ক্যারিবীয় অঞ্চলের ক্ষয়ক্ষতি ৪ হাজার ৮০০ থেকে ৫ হাজার ২০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
মেলিসা ৩ মাত্রার শক্তি নিয়ে কিউবার পূর্বাঞ্চলেও আঘাত হেনেছিল। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেখানকার সরকার আগে থেকেই প্রায় ৭ লাখ ৩৫ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়েছিল। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশটিতে ঘূর্ণিঝড়ে কোনো মৃত্যুর খবর না মিললেও মেলিসা সেখানে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
মেলিসা সরাসরি আঘাত না হানলেও শ্লথগতিতে অগ্রসর হওয়া ঝড়ের প্রভাবে হাইতিতে টানা বৃষ্টিতে ভোগান্তি হয়েছে। দেশটির বেশিরভাগ মৃত্যুই দেখেছে দক্ষিণের শহর পেটি-গাভ, যেখানে নদীর পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যম লু নুভেলিস্ত জানিয়েছে, নদী এক জায়গায় জাতীয় মহাসড়কের একটি অংশ ভেঙে নিয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে মেলিসা ছিল ১ মাত্রার ঝড়, অবস্থান করছিল নর্থ আটলান্টিক ব্রিটিশ দ্বীপ অঞ্চল থেকে ৪০৯ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে এবং বাতাসের সর্বোচ্চ গতি ছিল ঘণ্টায় ১৬৯ কিলোমিটার। রাত ১১টায় মেলিসা শক্তি বাড়িয়ে ২ মাত্রার ঝড়ে পরিণত হয়।
বারমুডার দিকে এগুলেও এটি খানিকটা দূর দিয়ে বয়ে যাবে বলে পূর্বাভাসে ধারণা মেলায় দ্বীপটির বাসিন্দারা আপাত স্বস্তিতে রয়েছে। তবে এরপরও কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার রাতে তাদের উঁচু সংযোগ সড়ক বন্ধ রাখবে এবং সাবধানতার অংশ হিসেবে শুক্রবার স্কুল ও ফেরিও বন্ধ রাখা হয়েছে।
সূত্র: রয়টার্স
 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	