
বিপিএলের স্পট ফিক্সিং নিয়ে বিসিবির হাতে এসেছে ৯০০ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন। কিন্তু বিস্ময়ের বিষয়-প্রতিবেদনে যাদের নাম এসেছে, সেই অভিযুক্তদের পরিচয় গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোর্ড। মানবিক দিক বিবেচনায় তারা নাম প্রকাশ করবে না, তবে নীরবে তাদের খেলা থেকে দূরে রাখা হবে। প্রশ্ন উঠছে, এটি কি সত্যিই মানবিকতার প্রয়াস, নাকি দায় এড়ানোর কৌশল? যারা অপরাধ করেছে, তাদের নাম প্রকাশে বিসিবি বাধা কোথায়?
বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, ‘এখনই নাম প্রকাশ করার মতো পরিস্থিতি নেই, তবে ইভেনচুয়ালি করব।’ অর্থাৎ ভবিষ্যতে কোনো একসময় হয়তো প্রকাশ করবে-তবে সেটা কখন, কীভাবে, বা আদৌ হবে কি না, তা অস্পষ্ট। এর মধ্যেই বোর্ডের অভ্যন্তরে ‘গোপনে যোগাযোগ’ এবং অভিযুক্তদের মাঠের বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত আসলে বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
বিসিবি পরিচালনা পর্ষদের সহ-সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছেন, কারো নাম প্রকাশ পাবে না, কিন্তু দোষী ক্রিকেটার খেলতে পারবে না। তার ভাষায়, ‘আমরা আদালত না। প্রত্যেকের ব্যক্তিগত অধিকার ও হিউম্যান রাইটস আছে।’ কিন্তু এখানেই প্রশ্ন-যখন কোনো খেলোয়াড় বা কর্মকর্তা ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকে, তখন সেটি কেবল ব্যক্তিগত বিষয় নয়, বরং জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট একটি অপরাধ। নাম গোপন রেখে যদি বোর্ডই সিদ্ধান্ত নেয় কে খেলবে, কে খেলবে না, তাহলে স্বচ্ছতার জায়গাটা কোথায়?
বোর্ডের এই অবস্থান অনেকের চোখে নৈতিক দোদুল্যমানতা। যেখানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুর্নীতি দমন সংস্থা সবকিছু প্রকাশ্যে আনে, সেখানে বাংলাদেশের বোর্ড কেন গোপনীয়তার দেয়াল তুলছে-এ প্রশ্নই এখন ঘুরছে ক্রিকেটপাড়ায়। বিপিএলের অতীত ইতিহাসে ফিক্সিং, ম্যাচ গড়াপেটা, কিংবা ফ্র্যাঞ্চাইজির আর্থিক অনিয়মের ঘটনা নতুন নয়। এমন বাস্তবতায় নাম গোপন রাখা মানে কি অপরাধীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় তৈরি করা নয়?
স্পোর্টস ইন্টিগ্রিটির মূল চাবিকাঠি হলো স্বচ্ছতা। অথচ বিসিবি এখন সেটিকে মানবিকতার আড়ালে ঢেকে রাখছে। যদি সত্যিই অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া হয়, তবে তাদের নাম প্রকাশ্যে না আনার মানে- জনগণকে অন্ধকারে রাখা। আবার নাম না প্রকাশ করেই কিছু খেলোয়াড় বা কর্মকর্তাকে মাঠের বাইরে রাখা এক ধরনের ‘গোপন বিচার’-যা আইনের চোখে যেমন দুর্বল, তেমনি ক্রিকেটের আস্থার জায়গায়ও আঘাত। অতএব প্রশ্নটা এখন সোজা-বিসিবি কি সত্যিই ফিক্সিংয়ের বিরুদ্ধে লড়ছে, নাকি নিজেদেরই সুরক্ষা দিচ্ছে, অপরাধীদের আড়াল করছে?
স্পট ফিক্সিং ইস্যুর পাশাপাশি আবার সামনে এসেছে স্বার্থের সংঘাত। বিসিবির কয়েক জন পরিচালক বিপিএলে নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে। বরিশালের জন্য ‘আকাশবাড়ি হলিডে’, রাজশাহীর জন্য ‘নাবিল গ্রুপ’ ও নোয়াখালীর জন্য ‘বাংলা মার্ক’-এই তিন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই নাকি আছেন বিসিবির তিন পরিচালক। বোর্ড জানিয়েছে, গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্যদের মধ্যে কেউ যদি কোনোভাবে ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তাহলে তাকে পদত্যাগ করতে হবে।
সহ-সভাপতি শাখাওয়াত হোসেনের ভাষায়, ‘এবার আমাদের পরিচালকদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ইনডেমনিটি নেওয়া হবে। প্রত্যেককে সেলফ-ডিক্লারেশন দিতে হবে-কে কোন দলের সঙ্গে যুক্ত আছেন।’ সদস্যসচিব ইফতেখার রহমান মিঠুও আশাবাদী-‘গভর্নিং বডির কেউ কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত থাকলে, সেই সভায় তাকে আমন্ত্রণ করা হবে না।’