
ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো শহরের উত্তরাঞ্চলের আলেমাও এবং পেনহা এলাকার বস্তিগুলোতে (ফ্যাভেলা) মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) পুলিশের এক অভিযানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৩২ জনে দাঁড়িয়েছে। শহরের ইতিহাসে ‘সবচেয়ে প্রাণঘাতী পুলিশি অভিযান’ হিসেবে এটিকে উল্লেখ করা হচ্ছে।
দরিদ্রদের আইনি সহায়তা প্রদানকারী সরকারি সংস্থা পাবলিক ডিফেন্ডার অফিস বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকালে এই নতুন মৃতের সংখ্যা প্রকাশ করে। এই অভিযান দীর্ঘকাল ধরে শহরের দরিদ্র এলাকাগুলো নিয়ন্ত্রণকারী গ্যাংদের দমনের উদ্দেশ্যে কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করে।
অভিযানের পর শোকাহত বাসিন্দারা পেনহা এলাকার একটি চত্বরে ডজনখানেক লাশ রাখেন এবং ব্রাজিলের গণমাধ্যম সে সময় মৃতের সংখ্যা অন্তত ৫০ থেকে ৭০ জনের বেশি বলে অনুমান করেছিল। বহু মরদেহ পার্শ্ববর্তী একটি পাহাড় থেকে উদ্ধার করা হয়, যেখানে পুলিশ জানিয়েছে বেশিরভাগ প্রাণঘাতী সংঘর্ষ সংঘটিত হয়েছিল।
পাবলিক ডিফেন্ডার অফিসের দেওয়া ১৩২ জনের পরিসংখ্যান সম্পর্কে জানতে চাইলে রিও রাজ্যের গভর্নর ক্লাউদিও কাস্ত্রো জানান, ফরেনসিক কাজ এখনও চলছে, তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার কাছে নিহতের সরকারি সংখ্যা ৫৮ জন; যদিও তিনি স্বীকার করেন, এই সংখ্যা ‘নিশ্চিতভাবে বাড়তে পারে’।
এর আগে নিহতদের ‘অপরাধী’ বলে মন্তব্য করায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে গভর্নর কাস্ত্রো বলেন, ‘আসলে সংঘর্ষ কোনো জনবসতিপূর্ণ এলাকায় হয়নি, সবই জঙ্গলে হয়েছিল। তাই আমি বিশ্বাস করি না যে সংঘর্ষের দিনে কেউ শুধু জঙ্গলে ঘোরাফেরা করছিল। একারণেই আমরা সহজেই তাদের এক কাতারে ফেলতে পারি।’
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভাও মৃতের সংখ্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই সংখ্যাটি অভিযানের পরপর প্রকাশিত পরিসংখ্যানের দ্বিগুণেরও বেশি হওয়ার আগেই জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় এই পুলিশি অভিযানে ‘ভীত’ হওয়ার কথা জানিয়েছিল।
রিওর বাসিন্দাদের মতে, কর্মকর্তা ও সশস্ত্র ব্যক্তিদের মধ্যে তীব্র গোলাগুলির ঘটনা ঘটে এবং ব্যারিকেড তৈরি করতে বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশের মতে, রেড কমান্ডের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বস্তিগুলোতে যখন কর্মকর্তারা ছড়িয়ে পড়ছিলেন, তখন গ্যাং সদস্যরা ড্রোন ব্যবহার করে তাদের ওপর বিস্ফোরক ফেলে।
গভর্নর কাস্ত্রো জানান, এই অভিযান দুই মাস ধরে পরিকল্পিত ছিল এবং একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের ভিত্তিতে এটি পরিচালিত হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রেড কমান্ডের একজন শীর্ষস্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীও রয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
রিওতে অপরাধ নিয়ে কাজ করা ব্রাজিলিয়ান সাংবাদিক রাফায়েল সোয়ারেস জানান, এই পুলিশি অভিযান আগামী বছরের নির্বাচনের আগে গভর্নর কাস্ত্রোর তার রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের এবং শহরে অপরাধের বিরুদ্ধে একটি আঘাত হানার প্রচেষ্টার অংশ। সোয়ারেস আরও বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রেড কমান্ড আগ্রাসী হয়ে উঠেছে এবং ফার্স্ট ক্যাপিটাল কমান্ড (পিসিসি) এর কাছে হারানো অঞ্চল পুনরুদ্ধার করছে।
রিওতে বিশাল পুলিশি অভিযান অস্বাভাবিক না হলেও, মঙ্গলবারের অভিযানে হতাহতের সংখ্যা নজিরবিহীন। সোয়ারেসের মতে, ব্রাজিলে ২০ জনের বেশি নিহত হয় এমন পুলিশি অভিযান ‘খুব বিরল’ এবং যেগুলো ঘটে, সেগুলোর বেশিরভাগই রিওতে হয়েছে।
রিও ডি জেনিরোর জননিরাপত্তা মন্ত্রী ভিক্টর সান্তোস বলেন, ‘আমরা রিও ডি জেনিরোতে একটি যুদ্ধ দেখছি। পৌরসভা, রাজ্য এবং ফেডারেল – সকল প্রতিষ্ঠানের কয়েক দশকের নিষ্ক্রিয়তা আমাদের অঞ্চলে অপরাধকে প্রসারিত করার সুযোগ দিয়েছে।’
সূত্র: বিবিসি