
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হলেও ঢাকার বাতাসের মান প্রত্যাশিতভাবে ভালো হয়নি, বরং আজও তা ‘অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায় রয়েছে।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের তথ্যানুযায়ী, বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সকাল সোয়া আটটার দিকে ঢাকার গড় বায়ুমান ছিল ১৬০, যা বিশ্বের ১২৫টি নগরীর মধ্যে পঞ্চম অবস্থানে। বুধবার একই সময়ে ঢাকার অবস্থান ছিল চতুর্থ।
আইকিউএয়ারের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, আজ রাজধানীর মোট সাতটি স্থানে বায়ু অনেক বেশি দূষিত, যার মধ্যে শীর্ষে আছে পুরান ঢাকার বেচারাম দেউড়ি, যার স্কোর ১৭০, এবং এই মানকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলে বিবেচনা করা হয়। অন্য ছয়টি দূষিত এলাকা হলো: দক্ষিণ পল্লবী (১৭০), বে’জ এজ ওয়াটার (১৬৩), ইস্টার্ন হাউজিং (১৬৩), গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল (১৫৭), কল্যাণপুর (১৫৬) এবং গোরান (১৫১)।
বায়ুদূষণে বিশ্বের শীর্ষে আছে পাকিস্তানের লাহোর, যার স্কোর ৪৯৫, যা ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ পর্যায়ে। এরপরেই দ্বিতীয় স্থানে আছে ভারতের দিল্লির স্কোর ৪৪৭, তৃতীয় স্থানে চীনের বেইজিংয়ের স্কোর ২০৬ এবং চতুর্থ স্থানে থাকা পাকিস্তানের আরেক শহর করাচির স্কোর ১৭০।
বায়ুমানের এই পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আইকিউএয়ার নগরবাসীর জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে: ঘরের বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরে যাওয়া, জানালা বন্ধ রাখা এবং ঘরের বাইরে ব্যায়াম যতটুকু সম্ভব এড়িয়ে যাওয়া। যেসব এলাকায় বায়ুর মান অস্বাস্থ্যকর, সেসব এলাকায় অবশ্যই বাড়ির বাইরে গেলে মাস্ক পরতে হবে।
বায়ুদূষণ বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশিত আয়ুর জন্য সবচেয়ে বড় বাহ্যিক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট (ইপিআইসি) কর্তৃক তৈরি এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্সে (একিউএলআই) ২০২৫ সালের হালনাগাদ বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশের মানুষের আয়ু গড়ে সাড়ে পাঁচ বছর কমছে এবং বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশ।
অন্যদিকে, সিঙ্গাপুরের নানিয়াং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনটিইউ) এক গবেষণায় দেখা গেছে, বায়ুদূষণের কারণে ১৯৮০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বে প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি মানুষের অকালমৃত্যু হয়েছে।
বিশ্বব্যাংক গত বছর ‘দ্য বাংলাদেশ কান্ট্রি এনভায়রনমেন্ট অ্যানালিসিস (সিইএ)’ নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে বলা হয়, বাংলাদেশে ২০১৯ সালে বায়ুদূষণসহ চার ধরনের পরিবেশদূষণে ২ লাখ ৭২ হাজারের বেশি মানুষের অকালমৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ৫৫ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বায়ুদূষণের কারণে। এছাড়াও, দূষণের কারণে ওই বছর দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৭ দশমিক ৬ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে।