
ছোট বেলায় খেলতেন বাস্কেটবল। বড় হয়ে তিনি এখন ফুটবলের কাজকর্মে সিদ্ধহস্ত। দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে বাংলাদেশের প্রথম নারী ম্যাচ কমিশনার তিনি। নাম সুবহা রহমান। বাস্কেটবলের দুনিয়া যাকে ঘিরে রাখত, সেই মানুষটির ভেতরে ফুটবলের উত্তেজনা প্রবাহিত হয়। ফুটবলে প্রশাসনিক কাজে যোগ দিয়েছিলেন সুবহা রহমান। কাজের দক্ষতা স্পৃহা আর কাজের অদম্য আগ্রহ সুবহা রহমানকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছে। সুবহা রহমান ফুটবলের ম্যাচ কমিশনার হয়েও যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না, তিনি এত দূর এগিয়েছেন। বাংলাদেশে আর কোনো নারী ফুটবলে ম্যাচ কমিশনার হয়নি। এবারই প্রথম।
সাবেক ফিফা রেফারি আজাদ রহমান জানিয়েছেন, এটা একটা ইতিহাস। বাংলাদেশের কোনো নারী প্রথম বার ম্যাচ কমিশনার হয়েছেন। সুবহা রহমান সম্পর্কে তিনি বললেন, সুবহা রহমান ইন্টিলিজেন্ট এবং স্মার্ট। ভালো ভালো। এটা বিশাল ব্যাপার। মেয়েদের মধ্যে আগে কেউ ম্যাচ কমিশনার ছিলেন না। এএফসি স্বীকৃত ম্যাচ কমিশনার হিসেবে সুবাহ রহমান প্রথম।
আগস্টে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে এএফসির কার্যালয়ে পরীক্ষা দিয়ে এসেছেন। অধীর অপেক্ষায় ছিলেন কবে জানা যাবে পরীক্ষার ফলাফল। শিক্ষা জীবনেও পরীক্ষা শেষে এতটা টেনশন হয়নি সুবহার, যতটা হয়েছিল এবার। রেজাল্ট জানার কৌতূহলী মনটাকে প্রতিদিন সান্ত্বনা দিতে হয়েছে। সেই প্রতীক্ষার অবসান হলো। গতকালই এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন থেকে খবর পেয়েছেন, তিনি ম্যাচ কমিশনার হওয়ার পরীক্ষায় পাশ করেছেন।
এমন দিনে কার না খুশি লাগবে। সেটি যদি হয় বাংলাদেশ থেকে ম্যাচ কমিশনার হওয়া প্রথম কোনো নারী। ম্যাচ কমিশনার হতে ৩০ বছর বয়স হতে হবে, সুবহা রহমান এবছরই ৩০-এর কোটা পূরণ করেছেন। প্রথম বার আবেদন করলেন এবং প্রথম বারই পাশ। মেধা, দক্ষতা যাচাই-বাছাইয়ের পরীক্ষায় এশিয়ার অনেকের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। বর্তমানে কাজ করছেন ঢাকায় সাফের অফিসে।
বাবা মশিউর রহমান, মা জিন্নাত রহমান। এই দম্পতির তিন কন্যার মধ্যে সুবহা রহমান সবার বড়। ইংল্যান্ডে মাস্টার্স শেষ করে ৫ বছর আগে সাফে যোগ দেন তিনি। সাফের শুরু থেকেই কাজ করছেন সুবাহ। এখন সাফের হেড অব হিউম্যান রিসোর্স, প্ল্যানিং এবং ম্যানেজার কম্পিটিশন। ঢাকায় সাফের অফিসে যোগ দেওয়ার পর, প্রায় সবখানেই কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছে। বয়সভিত্তিক সাফ থেকে শুরু করে সিনিয়র সাফ পর্যন্ত, প্রায় ৪ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা ম্যাচ কমিশনার হওয়ার পথে কাজে লেগেছে।
অথচ বিভিন্ন সময় নানা কথা সুবহার কানে পৌঁছেছে—মেয়েরা ফুটবলের কী বুঝবে। সেসবে কান না দিয়ে নিজের কাজে মনযোগী ছিলেন তিনি। লক্ষ্য ছিল দায়িত্বটা যেন নিপুণতার সঙ্গে সম্পন্ন করা যায়। নিজের লক্ষ্যে অবিচল থাকা সুবহা একটি মাইলফলক স্পর্শ করেছেন। তারপরও বিশ্বাস হচ্ছে না। ‘আমি এখনো ফিল করতে পারছি না। আমি ম্যাচ কমিশনার হয়েছি। আমাদের দেশে প্রথম নারী ম্যাচ কমিশনার।’ কাজের চলার পথে অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে সুবহা বলেন, ‘আমাকে শুনতে হয়েছে ফুটবলে আমার কী কাজ। মেয়ে বলে এধরনের প্রশ্ন তোলা হয়। আমাকে বুঝাতে হয়েছে ফুটবলে মেয়েরা কী কাজ করতে পারে, তারা কীভাবে ফুটবলের জন্য অবদান রাখতে পারে।’
প্রথম নারী বাংলাদেশের মাহফুজা আক্তার কিরণ ফিফার সদস্য হয়েছিলেন। আর কেউ সেটি হতে পারেননি। নারী ফুটবলে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে, এগিয়ে যাচ্ছে। নারী রেফারি আছেন। ফিফা ব্যাজও পেয়েছে। এবার বড় খবর, ম্যাচ কমিশনার হয়েছেন নারী। সুবহা রহমান পথ দেখালেন।