
ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’। আজ সন্ধ্যার মধ্যে দেশটির কাকিনাডার কাছে, মাচিলিপাটনম ও কালিঙ্গাপট্টনমের মধ্যবর্তী এলাকায় আছড়ে পড়তে পারে এই ঘূর্ণিঝড়।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের (আইএমডি) সর্বশেষ বুলেটিন অনুসারে, শেষ ছয় ঘণ্টায় দক্ষিণ-পশ্চিম এবং সংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১৭ কিলোমিটার গতিতে স্থলভাগের দিকে এগোচ্ছে ‘মোন্থা’।
আইএমডি বুলেটিনের তথ্য বলছে, মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য অন্ধ্রের কাকিনাড়া এবং কলিঙ্গপত্তনম উপকূলের মধ্যবর্তী অংশে আছড়ে পড়বে ‘মোন্থা’।
ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তরের মহাপরিচালক ড. এম. মোহাপাত্র বলেন, এই ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে অন্ধ্রপ্রদেশ, এরপর ওড়িশা ও ছত্তিশগড়। ২৮ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, ছত্তিশগড় ও তামিলনাড়ুতে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। মন্থা অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে আঘাত হানবে একটি তীব্র ঘূর্ণিঝড় হিসেবে। এর সর্বোচ্চ বেগ ঘণ্টায় ৯০-১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। উপকূলে আঘাত হানার পর ঘূর্ণিঝড়টি কিছুটা দুর্বল হয়ে ওড়িশার দিকে অগ্রসর হবে বলে জানিয়েছেন ড. মোহাপাত্র।
মন্থা বর্তমানে চেন্নাই থেকে ৪২০ কিমি, বিশাখাপত্তনম থেকে ৫০০ কিমি, এবং কাকিনাডা থেকে ৪৫০ কিমি দূরে অবস্থান করছে। এটি ঘণ্টায় প্রায় ১৫ কিমি গতিতে এগোচ্ছে। উপকূলীয় অন্ধ্রপ্রদেশে ইতোমধ্যে প্রবল বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া শুরু হয়েছে। পুরো উপকূলীয় অঞ্চলকে হাই অ্যালার্টে রাখা হয়েছে।
অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডু রাজ্য সচিবালয়ের রিয়েল টাইম গভর্নেন্স সোসাইটি সেন্টার থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি জানিয়েছেন, প্রশাসন যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন এবং রাজ্যকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
এনডিআরএফ-এর ২২টি দল মোতায়েন করা হয়েছে পাঁচটি রাজ্যে- অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, পুদুচেরি, তামিলনাড়ু ও ছত্তিশগড়ে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়টি অন্ধ্রপ্রদেশের ১৪১৯টি গ্রাম ও ৪৪টি শহরকে প্রভাবিত করতে পারে। মানুষকে ঘরের ভেতরে থাকতে বলা হয়েছে এবং উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের ত্রাণকেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সাগরে উত্তাল ঢেউ ও জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কায় মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে না যেতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। সব সৈকত পর্যটকদের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ওড়িশা সরকার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে মানুষ সরিয়ে নিচ্ছে। রাজ্যের দক্ষিণের আটটি জেলায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। সেখানে ইতোমধ্যে হালকা বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সম্ভাব্য পথ পরিবর্তনের আশঙ্কায় সব জেলা প্রশাসনকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছড়া দেশটির আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ সতর্কতা অনুযায়ী, মোন্থা মঙ্গলবার সন্ধ্যার মধ্যে স্থলভাগে প্রবেশ করবে এবং প্রবল বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো বাতাসের কারণে নিম্নাঞ্চলে বন্যা ও বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।