
নিজেদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ২০টি ইউরোফাইটার টাইফুন যুদ্ধবিমান কেনার প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলারের এক ঐতিহাসিক চুক্তি করেছে তুরস্ক। সোমবার (২৭ অক্টোবর) আঙ্কারায় এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার।
আঙ্কারার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে দুই দেশের নেতারা করমর্দন করে এই চুক্তি সম্পন্ন করেন। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় একে ‘এক প্রজন্মের সবচেয়ে বড় যুদ্ধবিমান বিক্রয় চুক্তি’ বলে আখ্যায়িত করেছে। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন, ‘এটি দুই ঘনিষ্ঠ মিত্রের কৌশলগত সম্পর্কের নতুন প্রতীক।’
স্টারমার বলেন, এই চুক্তি শুধু যুক্তরাজ্য ও তুরস্কের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককেই নয়, ন্যাটোর প্রতিরক্ষা শক্তিকেও আরও দৃঢ় করবে। ‘এটি ন্যাটোর দক্ষিণ-পূর্ব ফ্ল্যাঙ্কে অবস্থান করছে, আর যুক্তরাজ্যের সঙ্গে এই সক্ষমতা সংযুক্ত হওয়া ন্যাটোর জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,’ বলেন তিনি।
চুক্তির অধীনে প্রথম ইউরোফাইটার বিমানগুলো ২০৩০ সালের মধ্যে তুরস্কে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। এর আগে চলতি বছরের জুলাইয়ে তুরস্ক ও যুক্তরাজ্য ৪০টি ইউরোফাইটার কেনার প্রাথমিক সমঝোতায় পৌঁছেছিল, যা জার্মানি, ইতালি ও স্পেনসহ ইউরোফাইটার কনসোর্টিয়ামের অন্যান্য সদস্যও অনুমোদন দেয়।
তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশটি নিজেদের তৈরি পঞ্চম প্রজন্মের কেএএএন (KAAN) যুদ্ধবিমান চালুর আগে অন্তত ১২০টি যুদ্ধবিমান ক্রয়ের পরিকল্পনা করছে, যাতে বিমানবাহিনীর সক্ষমতা ধরে রাখা যায়। এজন্য কাতার ও ওমান থেকেও ১২টি করে টাইফুন কেনার আলোচনা চলছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
এর আগে গত বছর তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ৪০টি এফ–১৬ যুদ্ধবিমান কেনার ৭ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছিল, যা এখনও বাস্তবায়নে বিলম্বিত। এ ছাড়া প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ওয়াশিংটন-নেতৃত্বাধীন এফ–৩৫ প্রকল্পে পুনরায় যোগদানের সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা করেছেন। ২০১৯ সালে রুশ এস–৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার কারণে তুরস্ককে ওই প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়া হয়।
স্টারমারের এই সফরটি তার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তুরস্কে প্রথম আনুষ্ঠানিক সফর। তবে সফরের দিনই আঙ্কারার রাজনীতি নতুন উত্তাপে জর্জরিত হয়, যখন ইস্তাম্বুলের কারাবন্দি মেয়র একরেম ইমামওগলুর বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ আনা হয়। তুর্কি প্রসিকিউটররা ইমামওগলুকে ‘রাজনৈতিক গুপ্তচরবৃত্তি’র সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন। ইমামওগলু অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, এসব মামলা তার রাজনৈতিক অবস্থান দুর্বল করার উদ্দেশ্যেই সাজানো হয়েছে।
তুরস্ক ও যুক্তরাজ্যের এই নতুন প্রতিরক্ষা চুক্তি শুধু দুই দেশের সামরিক সহযোগিতার নতুন দিগন্তই নয়, বরং ন্যাটো জোটের ভূরাজনৈতিক ভারসাম্যেও তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে বলে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।