
সবশেষ এশিয়া কাপের ফাইনালের জয়ের নায়ক তিলক বর্মা। ৫৩ বলে ৬৯ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে দলকে চ্যাম্পিয়ন করে মাঠ ছাড়েন তিনি। ফাইনালের সেই জয়ের এবার নায়ক শুনিয়েছেন তার জীবনের ভয়ঙ্কর এক গল্প। বিরল এক রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। বাংলাদেশে খেলতে এসে জানতে পারেন সেই রোগ সম্পর্কে।
ভারতের খ্যাতিমান সঞ্চালক গৌরব কাপুরের ইউটিউব শো ‘ব্রেকফাস্ট অব চ্যাম্পিয়নসে’ জীবনের ভয়ঙ্কর সেই অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন তিলক। ২০২২ সালে পেশির বিরল এবং কঠিন অসুখ র্যাবডোমায়োলাইসিসে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। জীবনের কঠিন সেই সময়ে বিসিসিআই ও মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের অন্যতম কর্ণধার আকাশ আম্বানীকে পাশে পেয়েছিলেন এই ভারতীয় ক্রিকেটার।
তিলক বর্মা বলেন, ‘প্রথমবার আইপিএল খেলার পর আমার শারীরিক কিছু সমস্যা হয়েছিল। সব সময় ফিট থাকতে চাই। কিন্তু পারছিলাম না। তারপর র্যাবডোমায়োলাইসিস নামে একটি অসুখ ধরা পড়ে আমার। এই অসুখে শরীরের পেশিগুলো নষ্ট হয়ে যায়। সেই সময় আমি টেস্ট খেলার স্বপ্ন দেখছি। নিয়মিত ঘরোয়া ক্রিকেট খেলছি। ভারত ‘এ’ দলে সুযোগ পাচ্ছি। বিভিন্ন প্রস্ততি শিবিরে যোগ দিচ্ছি। সে সময়ই সমস্যাটা ধরা পড়ে।’
ফিট থাকতে জিমে প্রচুর সময় কাটিয়ে নিজেই সমস্যা ডেকে এনেছিলেন তিলক। তিনি বলেন, ‘সব সময় ফিটনেস বৃদ্ধির কথা ভাবতাম। বিশ্রামের দিনেও জিমে চলে যেতাম। লক্ষ্য ছিল বিশ্বের সবচেয়ে ফিট প্লেয়ার এবং দুর্দান্ত ফিল্ডার হওয়া। তাই সমস্যা হলেও শুরুর দিকে সমাধানের কথা ভাবিনি। আইস বাথ নিতাম। কিন্তু শরীরকে বিশ্রামের যথেষ্ট সময় দিতাম না। শরীরকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময়ের প্রয়োজন। সে সব মানতাম না। যত বেশি সম্ভব পরিশ্রম করার কথা ভাবতাম। ফলে আমার পেশিগুলোর ওপর অত্যধিক চাপ পড়ত। ক্রমশ সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। পাশাপাশি শিরাগুলোও শক্ত হয়ে যাচ্ছিল।’
ভারত ‘এ’ দলের হয়ে বাংলাদেশ সফরে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিলক। সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ‘এ’ দলের হয়ে সিরিজ খেলতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ি। একটা ম্যাচে শতরানের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলাম। সে সময় হঠাৎ আমার চোখ থেকে পানি বের হতে শুরু করলো। হাতের আঙুলগুলো ঠিকমতো নাড়াতে পারছিলাম না। সব কিছু খুব কঠিন লাগছিল। নড়াচড়া করতে সমস্যা হচ্ছিল। নিজেকে পাথরের মতো লাগছিল। শতরান মাঠে ফেলে উঠে যেতে হয়েছিল। আঙুল শক্ত হয়ে যাওয়ায় গ্লাভসও খোলা যাচ্ছিল না। কেটে গ্লাভস খুলতে হয়েছিল। সেই কঠিন সময়ে পাশে পেয়েছিলাম আকাশ আম্বানীকে।’
সেই ঘটনার পর মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের মালিক আকাশ আম্বানি বিসিসিআইয়ের তৎকালীন সচিব জয় শাহর সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত তিলকের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। তিলক এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘মুম্বাই ইন্ডিয়ানস ও জয় শাহকে ধন্যবাদ। আমাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকেরা বলেছিলেন আর কয়েক ঘণ্টা দেরি করলেই পরিস্থিতি আরও খারাপ হতো। ইনজেকশন দেওয়ার সময় সুচ ভেঙে গিয়েছিল। খুব বাজে অবস্থা হয়েছিল সে সময়। মা ছিলেন আমার সঙ্গে।’