
বাংলাদেশে পরবর্তী মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র একটি উজ্জ্বল ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের দিকে যাত্রায় বাংলাদেশকে সমর্থন করে। নিয়োগ নিশ্চিত হলে তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এবং পরবর্তীতে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তুলতে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের টিমের নেতৃত্ব দেবেন। একই সঙ্গে মার্কিন ব্যবসার জন্য সুযোগ তৈরি, বাণিজ্য বাধা, বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস এবং যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে কাজ করবেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার মার্কিন সিনেটের পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির শুনানিতে তিনি এসব কথা জানান। সিনেট অনুমোদন দিলে তার নিয়োগ আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হবে।
ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেন, নিয়োগ চূড়ান্ত হলে আমি বাংলাদেশে মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির স্বার্থ এগিয়ে নিতে সিনেট কমিটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করব। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ। কিন্তু বৃহত্তর প্রতিবেশীদের ছায়াবৃত থাকায় দেশটি প্রায়ই যথাযথ মনোযোগ পায় না। একজন কূটনীতিক হিসেবে এবং বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন নীতির ওপর ২০ বছরেরও বেশি সময় কাজ করার অভিজ্ঞতার কারণে, আমি এর গুরুত্ব এবং সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থগুলো ভালোভাবে বুঝতে পারি। কৌশলগত অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ একটি উন্মুক্ত, নিরাপদ এবং সমৃদ্ধ ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণকারী দেশ।
ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেন, বাংলাদেশ এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে রয়েছে। ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের ফলে ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা একটি সরকারের পতন ঘটেছে। একটি নতুন সরকার এবং একটি নতুন ভবিষ্যতের পথ বেছে নিতে বাংলাদেশের জনগণ আগামী বছরের শুরুতে ভোট দেবে—যা দেশটির কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র একটি উজ্জ্বল ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের দিকে যাত্রায় বাংলাদেশকে সমর্থন করে। যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।
শুনানিতে তিনি বলেন, প্রায়ই নতুন এশিয়ান টাইগারদের মধ্যে একটি হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সম্ভাবনা প্রদর্শন করেছে। বিপুল চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে, বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা থেকে উত্তরণের দ্বারপ্রান্তে, যা দেশটির জনগণের স্থিতিস্থাপকতা এবং অধ্যবসায়ের প্রতি সত্যিকারের সম্মান প্রদর্শন। আমি নিয়োগ পেলে মার্কিন ব্যবসার জন্য সুযোগ তৈরি, বাণিজ্য বাধা এবং বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস এবং মার্কিন-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার জন্য কাজ করব।
ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেন, আট বছরেরও বেশি সময় ধরে, বাংলাদেশ বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটিকে আশ্রয় দিয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসার পর বর্তমানে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজার এলাকায় বাস করছে। বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ২০১৭ সাল থেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কাজ করেছে। আমি নিজে রোহিঙ্গা শিবিরে গিয়েছি এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কথা বলেছি।
তবে, এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের তহবিলের অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রচেষ্টা টেকসই নয়। আমাদের ওপর থেকে এই বোঝা কমাতে অন্য আরো দেশগুলোর আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। যদি নিয়োগ চূড়ান্ত হয়, তাহলে আমি বাংলাদেশ সরকার, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং এই কমিটি-সহ মার্কিন সরকারের সহকর্মীদের সঙ্গে একটি কার্যকর এবং স্থায়ী পথ তৈরির জন্য কাজ করব। পরিশেষে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অংশীদারত্বকে এগিয়ে নেওয়া এবং রাষ্ট্রদূত হিসেবে বাংলাদেশে যেতে পারা আমার জন্য সম্মানের বিষয় হবে।
প্রসঙ্গত, গত ২ সেপ্টেম্বর ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেনকে বাংলাদেশে পরবর্তী মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউজের ঘোষণায় বলা হয়, মার্কিন ফরেন সার্ভিসের অভিজ্ঞ কূটনীতিক ভার্জিনিয়ার ক্রিস্টেনসেনকে ‘অ্যাম্বাসেডর এক্সট্রাঅর্ডিনারি অ্যান্ড প্লেনিপোটেনশিয়ারি’ মর্যাদায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে বাংলাদেশে নিয়োগের জন্য মনোনীত করা হলো। পরে মনোনয়নটি অনুমোদনের জন্য সিনেটে পাঠানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল সিনেটে শুনানি হয়েছে। এখন সিনেট অনুমোদন দিলে তিনি ঢাকায় সবশেষ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের স্থলাভিষিক্ত হবেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ক কাউন্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০২ সালে ফরেন সার্ভিসে যোগদানের আগে তিনি নিউ ইয়র্ক ও হিউস্টনে ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করেছেন।