
প্রায় ৬৬ বছর আগে ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংকে (পরবর্তীকালে পূবালী ব্যাংক) ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান (পরে সোনালী ব্যাংক) যে বিনিয়োগ করেছিল, সেই ৩৮ হাজার ৩৩৫টি শেয়ার এখন ফেরত চাইছে সোনালী ব্যাংক। এই বিষয়ে কয়েক বছর ধরে উভয় ব্যাংকের মধ্যে চিঠি চালাচালি এবং বৈঠক হয়েছে।
সম্প্রতি এই বিনিয়োগ ফেরত পেতে সোনালী ব্যাংক সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে আরও এক দফা চিঠি দিয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়কে দেওয়া চিঠিতে জানানো হয়েছে, ১৯৫৯ সালে পূবালী ব্যাংকের ৩৮ হাজার ৩৩৫টি শেয়ার কিনেছিল সোনালী ব্যাংক। ১৯৬৮, ৬৯ ও ৭০ সালে বোনাস শেয়ারসহ সেই সংখ্যা ৫১ হাজার ২২টিতে দাঁড়ায়, যার তৎকালীন অভিহিত মূল্য ছিল পাঁচ লাখ ১০ হাজার ২২০ টাকা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) পূবালী ব্যাংকের প্রতিটি শেয়ারের দাম ২৭ টাকা ৪০ পয়সা হিসাবে বর্তমানে ৫১ হাজার ২২টি শেয়ারের বাজারমূল্য দাঁড়ায় প্রায় ১৪ লাখ টাকা।
দেশ স্বাধীনের পর ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংকের নাম পূবালী ব্যাংক এবং ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের নাম সোনালী ব্যাংক হয়, এবং দুটিকেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৮৩ সালে পূবালী ব্যাংককে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। সে সময় ‘ভেন্ডর এগ্রিমেন্টের’ আওতায় শেয়ারের অধিকার প্রতিষ্ঠায় শেয়ারধারীদের আবেদন করার অনুরোধ করা হয়েছিল।
আবেদনের প্রেক্ষিতে অন্য শেয়ারধারীদের শেয়ার ফেরত দেওয়া হলেও কোনো কারণে সোনালী ব্যাংক তা ফেরত পায়নি। সোনালী ব্যাংক তাদের শেয়ারের অধিকার প্রতিষ্ঠায় পূবালী ব্যাংককে চিঠি দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সময় অর্থ মন্ত্রণালয়ের শরণাপন্ন হয়েছে। ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন যুগ্ম সচিব (ব্যাংকিং) আমিনুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি জানান, এ জাতীয় দাবি কখনও বিলুপ্ত হয় না। পূবালী ব্যাংক যদি এ দাবি পরিশোধ না করে তাহলে এর দায় সরকারের ওপর বর্তাবে।
এই বিষয়টি নিয়ে ২০১৬ সালের অক্টোবরে অতিরিক্ত সচিব মো. ফজলুল হকের সভাপতিত্বে আরও একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বেশ কয়েক দফা সভা ও চিঠি চালাচালি হলেও সমঝোতা হয়নি। সোনালী ব্যাংক জানিয়েছে, গত বছরের ৮ ডিসেম্বর বিষয়টি নিয়ে পূবালী ব্যাংকে চিঠি দিলেও তারা কোনো সাড়া দেয়নি।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘১৯৮৩ সালে বেসরকারীকরণের সময় ভেন্ডর এগ্রিমেন্টের আওতায় শেয়ার ফেরত দেওয়ার জন্য শেয়ারধারীদের আবেদন করার অনুরোধ করা হয়েছিল। আবেদনের প্রেক্ষিতে শেয়ারধারীদের তা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তখন বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ার কথা।’ তিনি আরও জানান, বর্তমানে পূবালী ব্যাংকের ব্যালান্স শিটেও সোনালী ব্যাংকের শেয়ার বিনিয়োগের বিষয়টি উল্লেখ নেই।