
চল্লিশের কোঠায় পা রেখেও তারা যেন সময়ের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা দুই নাম। লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। যাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ফুটবলের এক অমর অধ্যায়। বয়স বাড়ছে, কিন্তু প্রতিযোগিতা এখনো আগের মতোই তীব্র। ফুটবল ভক্তদের মনে দ্বৈরথটা এখনো জীবন্ত। একজন আমেরিকার মাটিতে একের পর এক রেকর্ড গড়ছেন।
অন্যজন মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমির দেশে গোলের পর গোল করে লিখছেন নতুন ইতিহাস। সৌদিতে রাতের আকাশে রোনালদোর রকেট গতির শটে যখন আল ফাতেহের জাল কাঁপে, ঠিক পরদিন সকালেই মায়ামির মাঠে মেসির হ্যাটট্রিকে উল্লাসে মেতে উঠে সারাবিশ্বের ভক্তরা। ফুটবলের দুই বরপুত্রের এমন দৃশ্য কেবল একটাই বার্তা দেয়-বয়স কেবল সংখ্যা, ক্লাস চিরকালীন।
রোনালদোর গল্পটা এখন অধ্যবসায়ের প্রতীক। ৪১ বছর বয়সেও তার পায়ের গতি, শারীরিক সক্ষমতা ও তীব্র ক্ষুধা বিস্ময় জাগায়। সৌদি প্রো লিগে পেনাল্টি মিস করেও পরের মিনিটেই গোল করেন সিআরসেভেন। সেটাই প্রমাণ, কিংবদন্তিরা ব্যর্থতায় নয় বরং পুনর্জন্মে বিশ্বাসী। সেই গোলের পর তার উন্মত্ত উদযাপন যেন বলছিল, ‘আমি এখনো শেষ হইনি।’ প্রতিটি ম্যাচেই তিনি প্রমাণ দিচ্ছেন, শৃঙ্খলা আর আত্মবিশ্বাসে কীভাবে ফুটবলে দীর্ঘায়ু পাওয়া যায়।
ওদিকে ৩৮ বছরের মেসি নিজের গল্প লিখছেন ভিন্ন ছকে। ইন্টার মায়ামির হয়ে দ্বিতীয় মৌসুমের শেষ ম্যাচে হ্যাটট্রিক করে মেসি যেন সময়কে থামিয়ে দিলেন। চলতি মৌসুমে ২৯ গোল ও ১৯ অ্যাসিস্ট। যা এমএলএস ইতিহাসের অন্যতম সেরা মৌসুম। যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে এটাই আর্জেন্টাইন জাদুকরের প্রথম গোল্ডেন বুট। মৌসুম শেষে ৪৮টি গোলে সরাসরি অবদান রেখে তিনি আবারও দেখালেন, বয়স তার ছন্দ কেড়ে নিতে পারেনি।
দুই কিংবদন্তির রেকর্ড লড়াই এখন ইতিহাসের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর অধ্যায়। রোনালদোর পেশাদার ক্যারিয়ারে গোলসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৪৯, আর মেসির ৮৮৯। পার্থক্য যতই থাকুক, দুজনের যাত্রাপথই অবিশ্বাস্য। রোনালদো হাজার গোলের দোরগোড়ায়। আর মাত্র একটি অ্যাসিস্টেই মেসি প্রথম ফুটবলার হিসেবে ৪০০ অ্যাসিস্টের নাগাল পেতে চলেছেন। কিন্তু সংখ্যাই তো সব নয়। রোনালদোর শক্তি, দৃঢ়তা ও পরিপূর্ণ পেশাদারিত্বের বিপরীতে মেসির আছে অনিন্দ্যসুন্দর ছন্দ, মায়াবী টাচ আর অবিশ্বাস্য সৃজনশীলতা।
একজন লড়াইয়ের প্রতীক, অন্যজন শিল্পের প্রতিমূর্তি। অথচ দুজনের গল্পে আছে এক অদ্ভুত মিল। নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা। ম্যাচ জিতে রোনালদো এক্স (সাবেক টুইটার) এ লিখেছেন, ‘সাফল্য কোনো দুর্ঘটনা নয়।’ মেসির জীবন যেন সেই বাক্যেরই প্রতিধ্বনি। অগণিত ঘাম আর প্রতিদিনের পরিশ্রম। দুই জন দুই মহাদেশে খেললেও, প্রতিটি গোল আর প্রতিটি স্পর্শে যেন একে অপরকে মনে করিয়ে দেন, কিংবদন্তিদের লড়াই এখনো শেষ হয়নি।
একে অপরের সাফল্য যেন অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে পরের দিনের জন্য। আজ তারা দুই জন দুই ভিন্ন লিগে। কিন্তু তাদের প্রতিটি জাদুকরী মুহূর্ত আবারও প্রমাণ করে, ফুটবল এখনো তাদের হাতেই সবচেয়ে নিরাপদ। সময়ের ঘড়ি এগোলেও, মেসি-রোনালদোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা চিরসবুজ। তাদের গল্পও অমরত্বের প্রতীক হয়ে বেঁচে থাকবে চিরকাল। দুই মহাদেশের দুই প্রান্তে, একই সূর্যের আলোয়।