
মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেট মানেই যেন বিতর্কের আরেক নাম। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলে এর আলোচনা-সমালোচনা। ব্যাটারদের জন্য চ্যালেঞ্জিং, বোলারদের জন্য আশীর্বাদ-এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে প্রায়ই। চলমান ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজেও সেই চিত্রই দেখা যাচ্ছে।
যে অভিযোগের কারণে আগের কিউরেটর গামিনি ডি সিলভাকে দূরে সরানো হলো, সেই একই সমালোচনার মুখে এখন বিসিবির নতুন টার্ফ ম্যানেজমেন্ট প্রধান অস্ট্রেলিয়ান কিউরেটর টনি হেমিংও। তার তৈরি উইকেটেও ব্যাটারদের মুখ থুবড়ে পড়া অবস্থা। তবে এই ‘কালো উইকেট’ নিয়েই আশার আলো দেখছেন দেশের দুই সাবেক অধিনায়ক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু ও মোহাম্মদ আশরাফুল।
তাদের মতে, ২০২৭ সালের বিশ্বকাপে সরাসরি অংশ নিতে হলে আইসিসি র্যাংকিংয়ে উন্নতি করতেই হবে বাংলাদেশকে। বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান ১০ নম্বরে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে জিততে পারলে বাংলাদেশ উঠবে ৯ নম্বরে। নান্নু ও আশরাফুলের যুক্তি, এই অবস্থায় ঘরের মাঠের উইকেটের সুবিধা নেওয়া একেবারেই দোষের কিছু নয়-বরং সেটাই বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ।
গতকাল নান্নু বলেছেন, ‘মিরপুরে যতগুলো উইকেট আছে, প্রায় সবই একই ধরনের। টিম ম্যানেজমেন্ট চাইলে ফ্ল্যাট উইকেটও বানানো সম্ভব। কিন্তু এই মুহূর্তে দলের সবচেয়ে বেশি দরকার ফলাফল। তাই দলের শক্তির জায়গা বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’ তার মতে, মিরপুরের উইকেটে ব্যাটারদের টিকে থাকা কঠিন, কারণ এখানে বল টার্ন করে, বাউন্স করে যে কোনো ব্যাটার বিপদে পড়ে। ‘এখানে ব্যাটারদের করণীয় খুব সীমিত। প্রথম ওয়ানডেতে আমাদের ব্যাটাররা সহনশীলভাবে রান করেছে, এই উইকেটে সেটাই প্রশংসনীয়,’ যোগ করেন তিনি।
অন্যদিকে আশরাফুলের দৃষ্টিতে, এখন বাংলাদেশ এমন এক অবস্থায় আছে যেখানে মিরপুরের এই কালো উইকেটই ভরসা। তিনি বলেছেন, ‘আমরা টেবিলের ১০ নম্বরে আছি, বিশ্বকাপে সরাসরি যেতে হলে ৯ নম্বরে উঠতে হবে। এই তিন ম্যাচ তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মিরপুরে এই উইকেটেই আমরা ফেভারিট। ফ্ল্যাট উইকেট হলে খেলা ভিন্ন হতো।’
তিনি মনে করেন, এই উইকেট নিয়ে নেতিবাচক আলোচনা না করে বরং এটাকে সুযোগ হিসেবে দেখা উচিত। ‘দলের আত্মবিশ্বাস ফেরাতে এমন উইকেট দরকার ছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ তো ভারতে টেস্ট খেলে এসেছে, সেখানে ফ্ল্যাট উইকেটে ভালো খেলেছে। কিন্তু এই কন্ডিশনে তাদের পরীক্ষা নেওয়া দরকার। এটা নিয়ে নেতিবাচক সংবাদ না ছড়িয়ে বরং মনোযোগ দিতে হবে দলের মনোবল ফেরানোর দিকে।’
আশরাফুল আরও বলেছেন, ‘বিশ্বকাপের আগে যখন বড় টুর্নামেন্টে যাব, তার দেড়-দুই মাস আগে প্রপার কন্ডিশনের প্র্যাকটিস হলে আমরা তখন মানিয়ে নিতে পারব। এখন দরকার আত্মবিশ্বাস। মিরপুরে এমন উইকেট সবসময়ই থাকে, এবারেরটা একটু কালো দেখাচ্ছে কারণ ঘাস দেওয়া হয়নি। তবে খেলোয়াড়রা এতে অভ্যস্ত, তারা জানে কীভাবে খেলতে হয়।’
এই কালো উইকেটের সঙ্গে এখন জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের নতুন এক আশা-রিশাদ হোসেন। বহু বছর ধরে একজন মানসম্পন্ন লেগ স্পিনারের খোঁজে ছিল বাংলাদেশ। জুবায়ের হোসেন লিখন থেকে শুরু করে তানবীর হায়দার বা আমিনুল ইসলাম বিপ্লব-সবাই এসেছিলেন ঝলক দেখিয়ে, তারপর মিলিয়ে গেছেন। কিন্তু রিশাদ যেন ব্যতিক্রম। ধীরে ধীরে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন জাতীয় দলে, আর প্রথম ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বিপর্যস্ত করে নিজের নাম তুলেছেন রেকর্ড বইয়ে। ম্যাচে ৬ উইকেট নিয়ে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশের ঘূর্ণি আক্রমণে নতুন সূর্য উঠেছে।
সবমিলিয়ে, যে উইকেট নিয়ে এত আলোচনা-সমালোচনা, সেটিই এখন বাংলাদেশের শক্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে। ব্যাটারদের কষ্ট হলেও, এই বোলিংবান্ধব উইকেটই হয়তো ২০২৭ বিশ্বকাপের পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পারে। তাতে মিরপুরের কালো উইকেটই এখন বাংলাদেশের ‘আশার আলো’।