
ফ্রান্সের বিখ্যাত ল্যুভর জাদুঘরে ঘটেছে চাঞ্চল্যকর চুরি। রোববার (২০ অক্টোবর) দিনের আলোয় সংঘটিত এই ঘটনাটি এখন বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। চোরেরা এখনো ধরা না পড়ায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
ফরেনসিক দল ইতোমধ্যে জাদুঘর ও আশপাশের এলাকাগুলো ঘুরে প্রমাণ সংগ্রহ করেছে। ঘটনাস্থলের সড়ক ও প্রবেশপথের সিসিটিভি ফুটেজ জব্দ করে তাতে কোনো সন্দেহজনক গতিবিধি আছে কি না, তা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি, ঘটনার সময় দায়িত্বে থাকা কর্মীদের কাছ থেকেও আলাদাভাবে তথ্য সংগ্রহের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
ফরাসি সংস্কৃতিমন্ত্রী রাশিদা দাতি জানিয়েছেন, এই চুরির পেছনে কাজ করেছে পেশাদার অপরাধচক্র। তার ভাষায়, ‘আজকাল সংঘবদ্ধ অপরাধীরা শিল্পকর্মকে নিশানা বানাচ্ছে, আর জাদুঘরগুলোই তাদের প্রধান লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠছে।’ তিনি জাদুঘরগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করার আহ্বান জানান।
ল্যুভর জাদুঘরের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়। এক শতাব্দীরও বেশি আগে, ১৯১১ সালে এখান থেকেই চুরি হয়েছিল বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত চিত্রকর্ম ‘মোনালিসা’। দীর্ঘ দুই বছর নিখোঁজ থাকার পর ১৯১৩ সালে ইতালির এক হোটেল থেকে এটি উদ্ধার করা হয় এবং পরে পুনরায় জাদুঘরে ফেরত আনা হয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ল্যুভরের জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া। গত বছর প্রায় ৮৭ লাখ দর্শনার্থী এই জাদুঘর দেখতে গেছেন। তবে এত বিপুল ভিড় সামলাতে কর্মীদের ওপর বাড়তি চাপ পড়েছে। এরই জেরে গত জুনে তারা নতুন কর্মী নিয়োগ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতির দাবিতে ধর্মঘটও করেছিলেন।
রোববারের এই দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনায় ফ্রান্সজুড়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। নাগরিক ও রাজনীতিক উভয়েই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এত বিখ্যাত একটি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে লিখেছেন, ‘যদি ল্যুভরের মতো সুরক্ষিত স্থানে শিল্পকর্ম চুরি হতে পারে, তাহলে অন্য জাদুঘরগুলোর নিরাপত্তার কী অবস্থা?’
সরকারি কর্মকর্তারা আশ্বাস দিয়েছেন, দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে চোরদের গ্রেপ্তার করা হবে এবং ল্যুভরের নিরাপত্তা কাঠামো পুনর্বিবেচনা করা হবে। তবে এই ঘটনার পর থেকে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। শিল্প ও ঐতিহ্যের এই অভয়ারণ্য কি সত্যিই নিরাপদ?