
ক্লাব ফুটবলের অভ্যন্তরে চোখ রাখলে অনেক অন্ধকার দিক খুঁজে পাওয়া যায়। ক্লাবের কাছ থেকে পুরো পেমেন্ট পেয়েছেন এমন খেলোয়াড় খুঁজে পাওয়া কঠিন। দেশি ফুটবলারদের বেলায় এই চিত্র ভুরিভুরি। কমবেশি সবাই বলতে পারবেন তারা ক্লাবের কাছ থেকে চুক্তির পুরো টাকা পাননি। দেশি ফুটবলারদের মধ্যে দুই-চার জন ছিলেন, যারা চুক্তির পুরো টাকা আদায় করে ছেড়েছেন। এসব ক্ষেত্রে সফলতার হার বেশি শতভাগ বিদেশি ফুটবলারদের ক্ষেত্রে।
কিন্তু দেশিদের বেলায় অনেকে হাল ছেড়ে দেন, যেমনটি করছেন বসুন্ধরা কিংসের তারিক কাজী। তিনি চলে গেছেন, কিন্তু যাওয়ার আগে জানিয়েছেন, অনেক খেলোয়াড় রয়েছেন যারা সরাসরি প্রকাশ করতে পারছেন না। পেমেন্ট নিয়ে ক্লাবগুলোর ভেতরে থাকা অন্ধকার দিক উন্মোচন করলেও সেখানে আরও এক ধাপ রয়েছে। কমিশন বাণিজ্য।
ক্লাবগুলোতে কমিশন বাণিজ্য ওপেন সিক্রেট। খেলোয়াড় চুক্তির সঙ্গে জড়িত থাকে ক্লাব বাণিজ্য। খেলোয়াড়কে বলা হয় একরকম আর ক্লাব কর্মকর্তারা পারিশ্রমিক নিয়ে তথ্য পান আরেক রকম। ক্লাবের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা যারা রয়েছেন, তারা কখনো চুক্তি হতে যাওয়া খেলোয়াড়ের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন না। কথা বললেও তিনি পারিশ্রমিক নিয়ে আলোচনা করেন না। ক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, ডাইরেক্টর ইনচার্জ, ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যানরদের কাছে চুক্তি হতে যাওয়া ফুটবলারকে নিয়ে হাজির করা হলেও তারা পারিশ্রমিক নিয়ে খেলোয়াড়কে সরাসরি প্রশ্ন করেন না। প্রশ্ন করলেও আগে থেকে সবকিছু সাজানো থাকে। কী প্রশ্নে উত্তর দিতে হবে। খেলোয়াড়রাও শেখানো মুখস্ত বুলি বলেন।
বিভিন্ন সূত্রের খবর একজন ফুটবলার যখন ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেন-তখন চুক্তিপত্রে পারিশ্রমিকের অঙ্কটাকে কাগজ দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। মৌখিকভাবে একজন ফুটবলার তার পছন্দের ক্লাবের সঙ্গে যত টাকা চুক্তি করতে রাজি হয়েছেন-তিনি সেই টাকাই পাবেন। সেখানে কোনো ভুল নেই। মাঝখানে একটা মধ্যস্বত্ব ভোগী একজন, দুই জন যারা থাকেন, তারাই শুধু জানতে পারেন সত্যিকার অর্থে কার সঙ্গে কত টাকায় চুক্তি হয়েছে। ক্লাবের শীর্ষ পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তা চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়ের নাম শুনে বলতেও পারবেন না কত টাকায় চুক্তি হয়েছে। জানতে হলে ক্লাবের আলমারিতে চুক্তিবদ্ধ ফাইল রয়েছে সেটা দেখে বলতে হবে।
দেশের ফুটবলে কমিশন বাণিজ্য নতুন কিছু নয়। এটা পুরোনো। ক্লাবের নীতি-নির্ধারকরা কখনো ফুটবলারের সঙ্গে চুক্তির সময় থাকতে চান না ব্যস্ততার কারণে। মাথাও ঘামাতে চান না। তারা টাকা পাঠিয়ে দেন। বিশ্বাসের ওপর ছেড়ে দেন। যারা শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিশ্বাসের সেতু তৈরি করে চোখ ফাঁকি দিচ্ছেন কি না, সেটা জানতে পারেন দুই একজন। পুরোটাই অন্ধকারে থেকে যায়। এমনও ফুটবলার আছেন, যার সঙ্গে চুক্তি ৭০ লাখ টাকায়। কিন্তু সেই খেলোয়াড় পেয়েছেন ৫০ লাখ।
একটা সময় ক্লাব ফুটবলের প্রকৃত সংগঠকরা দলবদলের আগে নিজে খেলোয়াড়কে খুঁজে বের করে টাকা হাতে ধরিয়ে দিতেন। অনুরোধ করতেন আমার ক্লাবে খেলতে হবে। বাসা থেকে টাকা এনে খেলোয়াড়ের বাসায় গিয়ে দিয়ে আসতেন। সাদেক হোসেন খোকা, আরশাদ আলী মঙ্গল, মনজুর হোসেন মালু, আনোয়ারুল হক হেলাল, তানভীর মাজহার তান্না, অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু, মনজুর কাদের প্রমুখদের আমলের সেই দিন হারিয়ে গেছে।
এখন ক্লাবের শীর্ষ কর্তারা ছেড়ে দিয়েছেন অন্যদের ওপর, তারা খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলেন। ক্লাবে এমনও কিছু মানুষ দায়িত্ব পালন করেন, যারা শীর্ষ কর্মকর্তাকে জানান এই প্লেয়ারটাকে না রাখতে পারলে দলের জন্য ক্ষতি হবে। সে এত (বড় অঙ্ক) টাকায় ওমুক ক্লাবে চলে যাবেন। আমি এত কমের মধ্যে তাকে রাখছি।’ তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, একটি ক্লাব ৩০ লাখ টাকাও দিতে চাইছে না, সেই ফুটবলার অন্য ক্লাবের কাগজে-কলমে ৭০ লাখ টাকা নিয়েছেন। ফুটবলে এভাবেই চলে কমিশন বাণিজ্য।