
এশিয়ান কাপের অ্যাওয়ে ম্যাচে হংকংয়ের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্রয়ের ম্যাচে বাংলাদেশের ফুটবলাররা মাঠে থাকা অবস্থায় জানতেন না বিদায় হয়ে গেছে। মাঠ থেকেই ভারত-সিঙ্গাপুর ম্যাচের খবর রেখে ছিলেন। ম্যানেজার আমের খান ঢাকায় ফিরে জানিয়েছেন তারা মাঠে দাঁড়িয়ে শুনলেন ভারত ১-০ গোলে এগিয়ে রয়েছে। আর হোটেলে ফিরে শুনলেন ভারত ১-২ গোলে সিঙ্গাপুরের কাছে হেরে গেছে।
ভারতের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের বিদায় নিশ্চিত হয়ে যায়। আনুষ্ঠানিক বিদায়। এত দিন বিদায় বিদায় বলা হলেও অঙ্কের হিসাবে এশিয়ান কাপে টিকে ছিল বাংলাদেশ। দুই ম্যাচ এখনো হাতে থাকলেও দরজা বন্ধ হয়ে গেছে।
এখন আর আফসোস করে কি হবে। বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে গোল শূন্য ড্র করেছিল। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ২-১ গোলে হেরেছিল। হংকংয়ের বিপক্ষে ৪-৩ গোলে হার এবং অ্যাওয়ে ম্যাচে ১-১ গোলে ড্র। তিন ম্যাচ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সব ম্যাচে বাংলাদেশের ফুটবলাররা কাণ্ডজ্ঞানহীন ভুল করে গেছেন বারবার। ভারত, সিঙ্গাপুর এবং হংকং-কোনো দলই আহামরি কোনো ফুটবল খেলেনি। ৪ ম্যাচের কোনোটিতে বাংলাদেশকে ছোঁ মেরে উড়িয়ে দিয়েছে-এ কথা প্রতিপক্ষ দাবি করতে পারবে না।
প্রতিপক্ষের দক্ষতার চেয়ে বাংলাদেশের ফুটবলাদের ভুলভ্রান্তি ছিল অসংখ্য। এমন সব ভুল করেছেন সেগুলোকে ফুটবলীয় ভুলও বলা যায় না। দুইবার ভারতের বিপক্ষে ওপেন নেট পেয়েও গোল করতে পারেননি, মজিবর রহমান জনি, হৃদয়রা। পুরো পোস্ট ফাঁকা পেয়েও ২৪ মার্চের ম্যাচে গোল করতে পারেননি। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ঢাকায়ও ছিল ভুল। গতকাল সকালে হংকং থেকে ঢাকা ফিরে বিমানবন্দরে বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া হোম ম্যাচ নিয়ে আফসোস করে বলছিলেন, ‘আমরা হোম ম্যাচে হংকংকে ৩ গোল উপহার দিয়েছিলাম।’ রক্ষণভাগের ভুলে ৩ গোল হজম করে সুযোগ নিতে না পারার ব্যর্থতা হৃদয় রক্তাক্ত করেছিল।
অথচ ঢাকার ম্যাচে ড্রয়ের সুযোগ হাতের মুঠোয় থেকে বেরিয়ে যায়। সামিত সোমের গোলে স্কোর লাইন, ৩-৩। গোলের আনন্দে ডাগ আউট থেকে দৌড়ে যান কোচ হ্যাভিয়ের কাবরেরা, সঙ্গে তার কোচিং স্টাফ গোলের আনন্দে লুটিয়ে পড়লেন। অথচ ফুটবল বিশেষজ্ঞরা বলছেন ঐ সময়টায় কোচ তার খেলোয়াড়দের কাছে পাওয়ার সুযোগে খেলা নিয়ন্ত্রণে রাখার পরামর্শ দেবেন। প্রয়োজনে বল নষ্ট করার কথা কানে তুলে দেবেন। বাংলাদেশ নামার সঙ্গে সঙ্গে হংকংয়ের ৪ নম্বর গোল হজম করে ম্যাচটা ৪-৩ গোলে হেরে যায়। হাতের মুঠোয় থেকে ম্যাচ চলে যায়।
মঙ্গলবার একই কাণ্ড ঘটেছে হংকংয়ের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচে। ১-০তে পিছিয়ে ছিল। ৮৪ মিনিটে রাকিব গোল করে ম্যাচে ফেরালেন। গোলটা করেই তিনি উৎসবে চলে গেলেন। মাঠের বাইরে ডিজিটাল বোর্ডে বসে গোলের সেলিব্রেশন করলেন। তার সঙ্গে যোগ দিলেন মোরাসালিন, ফাহিম, রহমত মিয়াসহ অন্য ফুটবলার, কোচিং স্টাফরা। হাতে তখনো অনেকটা সময় রয়ে গেছে। বাংলাদেশের সামনে ১০ জনের হংকং। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে গোল করলো।
বাংলাদেশের আক্রমণে হংকং চাপের মুখে থাকবে, আতঙ্কে ভীত থাকবে। সামনে ৪৫ হাজার দর্শক। রাকিবের গোলের পর হাতে ছিল ৬ মিনিট, সঙ্গে যোগ হয়েছিল ইনজুরি টাইম ৬ মিনিট। ১২ মিনিটের মধ্যে বাংলাদেশ সেলিব্রেশন করতেই কয়েক মিনিট কাটিয়ে দেয়। গোল সেলিব্রেশনে নষ্ট রিদম নতুন করে ফিরে পেতে পেতে জাপানি রেফারির খেলা শেষের বাঁশি।
অথচ গোল করে জালে জড়িয়ে থাকা বলটা নিজেরাই বের করে কিক অফ স্পটে বসিয়ে একদিকে সমটায় বাঁচাতে পারতেন। অন্যদিকে খেলার রিদমটাও উজ্জীবিত রাখতে পারতেন ফাহিম-রাকিবরা।
রাকিব যখন গোল করে ফেললেন তখন হামজা-জামালরা উৎসবে যোগ না দিয়ে তারা হংকংয়ের জাল থেকে বল তুলে আনতে গেছেন, মূল্যবান সময়টা বাঁচানোর জন্য। হংকংয়ের ওপর আক্রমণ অব্যাহত রাখতে। রাকিবদের গোল উৎসবের চিত্র দেখে ব্যথিত হয়েছেন হামজারা। তাই হয়তো হংকং থেকে লন্ডনে যাওয়ার আগে হামজা বলে গিয়েছেন ‘সবই ঠিক ছিল তবে মনটা ভালো নেই।’