Dark Mode Light Mode

Keep Up to Date with the Most Important News

By pressing the Subscribe button, you confirm that you have read and are agreeing to our Privacy Policy and Terms of Use
Follow Us
Follow Us
English English

অতিরিক্ত রেগে যাওয়া অনুভূতির প্রকাশ নাকি একটি রোগ?  

অতিরিক্ত রেগে যাওয়া অনুভূতির প্রকাশ নাকি একটি রোগ?   অতিরিক্ত রেগে যাওয়া অনুভূতির প্রকাশ নাকি একটি রোগ?  
অতিরিক্ত রেগে যাওয়া অনুভূতির প্রকাশ নাকি একটি রোগ?  


আপনি এমন কাউকে কখনো দেখেছেন কি- যিনি এমন একটি বিষয়ে খুব দ্রুত রাগে- ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন, কিন্তু ওই বিষয়টিতে হয়তো ততটা উত্তেজনা বা প্রতিক্রিয়া দেখানোর কোনো প্রয়োজন আসলে ছিল না? ওই সময় আপনি কি ওই রাগান্বিত ব্যক্তির চেহারা কখনো খেয়াল করেছেন?

এ সময় তার মুখ ঘামতে শুরু করে এবং সে সহিংস বা হিংসাত্মক শব্দ ব্যবহার বা অস্পষ্টভাবে এসব শব্দ উচ্চারণ করতেও শোনা যায়। অথবা আপনি কি ওই একই ব্যক্তিকে তার রাগ বা ক্রোধের পর শান্ত, সংযত এবং তার ওই আচরণের জন্য অনুতপ্ত হতে দেখেছেন? 

Advertisement

আপনি হয়তো ওই ব্যক্তিদের এমন কথা বলে ন্যায্যতা দিতে শুনবেন যে তারা বলছে, এই রাগ তাদের ব্যক্তিত্ব বা চরিত্রের অংশ। অথবা এই রাগ মানুষ হিসেবে আমাদের অনুভূতিরই একটা অংশ। 

যদিও চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই দ্রুত ও তীব্র রাগের বহিঃপ্রকাশকে একটি রোগ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এটি ‘ইন্টারমিটেন্ট এক্সপ্লোসিভ ডিসঅর্ডার’ রোগ নামে পরিচিত।

আমরা মাঝে মাঝে এমন কথা বলি যে, ‘সে রেগে গেছে’ বা ‘রাগে ফেটে পড়েছে’– এমন সব রাগ বা ক্রোধের আচরণের ক্ষেত্রে এই রোগ ‘ইন্টারমিটেন্ট এক্সপ্লোসিভ ডিসঅর্ডার’ প্রযোজ্য হতে পারে।

কিন্তু সব ধরনের রাগই কি এই এক্সপ্লোসিভ ডিসঅর্ডার বোঝায়?

নাকি রাগ একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া এবং আমাদের অনুভূতি প্রকাশের জন্য মানব প্রকৃতি ও মানুষের আচরণের একটি অংশ হতে পারে? 

রাগের এই ‘ইন্টারমিটেন্ট এক্সপ্লোসিভ ডিসঅর্ডার’ রোগ নির্ণয়ের প্রথম মানদণ্ড বা বৈশিষ্ট্য হলো পরিস্থিতির প্রতি অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতিক্রিয়া। এর অর্থ দাঁড়ায় তীব্র রাগ হলো এমন একটি প্রতিক্রিয়া যখন কোনো পরিস্থিতির জন্য এমন উত্তেজনা বা ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ করা, যতটা করার আসলে কোনো প্রয়োজন নেই।

অনেকেই আছেন এমন ভয়ঙ্কর রেগে যান যে অন্যদের প্রতি সহিংস বা হিংসাত্মক আচরণ করেন। কিন্তু ওই ঘটনার সময় তাদের মেজাজ যে খারাপ ছিল বিষয়টি কিন্তু এমন নয়।

লেবানিজ আমেরিকান ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের মনোরোগ বিভাগের প্রধান জোসেলিন আজার বলেন, এই এক্সপ্লোসিভ অ্যাঙ্গার ডিসঅর্ডার বা বিস্ফোরক রাগ ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবনযাপন করেন। এমন ব্যক্তিরা তীব্রভাবে রেগে যাওয়ার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত সারাদিনই স্বাভাবিক আচরণ করেন। 

আগে এটা শুনিনি কেন আমরা? 

সায়েন্স ডাইরেক্ট সর্বশেষ যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, ১৭টি পৃথক দেশের ২৯টি গবেষণায় পাওয়া গেছে– এই ইন্টারমিটেন্ট এক্সপ্লোসিভ ডিসঅর্ডারে পাঁচ দশমিক এক শতাংশ মানুষ আজীবনের জন্য আক্রান্ত হন।

এক লাখ ৮২ হাজার ১১২ জন মানুষের ওপর এই গবেষণা করা হয়েছে। এই ইন্টারমিটেন্ট এক্সপ্লোসিভ ডিসঅর্ডার হলো মানসিক স্বাস্থ্যের একটি অবস্থা।

এ ধরনের অবস্থায় হঠাৎ, অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং আগ্রাসনমূলক আচরণের একটি আক্রমণাত্মক বিস্ফোরণ ঘটে। এ ধরনের আচরণ ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিক্যাল ম্যানুয়াল অফ মেন্টাল ডিসঅর্ডারস এ তালিকাভুক্ত।

আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের মতে, এমন কিছু ফ্যাক্টর বা কারণ রয়েছে, যেটি রোগ নির্ণয়ের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। সেই সাথে এটি অন্যান্য চিকিৎসার সাথে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে।

যেমন: বর্ডারলাইন পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার, বাইপোলার ডিসঅর্ডার এবং কখনো কখনো মনোযোগ ঘাটতিজনিত হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার বা এডিএইচডির সাথে বিভ্রান্তি তৈরি করে এই অতিরিক্ত রাগজনিত রোগের লক্ষণগুলো।

আবার আরেকটি সহজ কারণ হলো, অনেকেই এরকম রাগের প্রবণতা (অ্যাঙ্গার অ্যাটাক) বা লক্ষণ দেখা দিলেও চিকিৎসক বা মনোবিজ্ঞানীর পরামর্শ নেন না। 

লেবানিজ আমেরিকান ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের প্রধান জোসেলিন আজার ব্যাখ্যা করে বলেন, যদিও অন্যান্য হেলথ কন্ডিশন বা স্বাস্থ্যগত অবস্থার সাথে এই রোগটি বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে।

এই এক্সপ্লোসিভ ডিসঅর্ডার মাঝে মাঝে হতে পারে এবং ‘চরিত্র বা ব্যক্তিত্বের অংশ’ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন, যখন এমন একটি পরিস্থিতি দেখা দেয় যেটি কোনো ব্যক্তির মধ্যে একটি তীব্র, অযৌক্তিক মানসিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং তারপর তারা খুব দ্রুত শান্ত হয়ে যায়। এরকম পরিস্থিতিতে ওই ব্যক্তি নার্ভাস বলে উল্লেখ করা হয়। এটি বিবেচনা করা হয় না যে, তাদের আচরণ তাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

আজার আরো বলেন, যদি আপনি দীর্ঘদিন ধরে ওই ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ না রাখেন, তাহলে কোনো সমস্যা আছে এ বিষয়টি আপনি লক্ষ্য করবেন না। আপনি হয়তো ধারণা করবেন যে ওই ব্যক্তির রাগ হঠাৎ করেই অথবা আপনার অজানা কোনো কারণে হয়েছে। 

নার্ভাস প্রকৃতির কোনো ব্যক্তি কি আছেন?

আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের মতে, বিজ্ঞানের ভাষায় রাগকে একটি নেতিবাচক অনুভূতি বা আবেগ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এই অ্যাসোসিয়েশনের মতে, হতাশা, আঘাত কিংবা কারো দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতির ফলে এই উত্তেজনা বা শত্রুতাপূর্ণ পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে।

বাস্তবে হোক বা কল্পনায় হোক এই নেতিবাচক রাগ অন্যায় বা হুমকির অনুভূতির ফলেও তৈরি হয়।

একাধিক বৈজ্ঞানিক গবেষণার ওপর ভিত্তি করে দ্য গার্ডিয়ান ২০১৯ সালে ‘দ্য সায়েন্স অব অ্যাঙ্গার’ শিরোনামে একটি আর্টিকেল প্রকাশ করে।

এই আর্টিকেলে উল্লেখ করা হয়েছে, বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, লাখ লাখ বছরের বিবর্তনের ফলে রাগের ক্ষমতা মস্তিষ্কে দৃঢ়ভাবে প্রোথিত হয়ে আছে। এটি সম্পদের জন্য প্রতিযোগিতা করা, যে কোনো হুমকির মুখোমুখি হওয়া এবং মানুষের সামাজিক আচার-আচরণ প্রয়োগের প্রবৃত্তিরই একটি অংশ।

এতে আরও বলা হয়েছে, এই রাগের ভিত্তিমূল মানুষের মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সার্কিট্রির একেবারে গভীরে। মস্তিষ্কের এই রিওয়ার্ড বা পুরস্কার সার্কিট স্নায়বিক নেটওয়ার্ক দিয়ে গঠিত এমন একটি অঞ্চল যা মানুষের আনন্দের অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং আচরণকে প্রভাবিত করে।

আজার বলেন, আসলে এই রাগ কখনো কখনো কেবল স্বাভাবিক রাগ নয় বরং পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার বা ব্যক্তিত্বের ব্যাধির একটি অংশ।

মাঝে মাঝেই ঘটে এমন এই এক্সপ্লোসিভ ডিসঅর্ডার সম্পর্কে আজার বলেন, আমরা সাধারণত পরিস্থিতির প্রতি অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতিক্রিয়ার কথা বলি, যেটির অর্থ হলো এই কারণগুলো সাধারণত এই প্রতিক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করে না।

আজার আরো বলেন, কিন্তু লেবাননের মতো দেশের ক্ষেত্রে যেখানে বেশিরভাগ মানুষই এই চাপ সহ্য করতে পারেন না। তারা উদ্বিগ্ন হন এবং তারা এমনকি হতাশায়ও ভোগেন। এরকম ক্ষেত্রে তাদের ডিসঅর্ডার বা ব্যাধি নয় বরং অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়াই কারণ হতে পারে।

তাই আজারের মতে, কোন পরিস্থিতিতে একজন ব্যক্তির রাগের উদ্রেক হয় সেটি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া ওই ব্যক্তির অন্য কোনো লক্ষণ আছে কিনা যা ইঙ্গিত করবে যে, তিনি নির্দিষ্ট কোনো মানসিক ডিসঅর্ডার বা রোগে ভুগছেন কিনা তাও পরীক্ষা করতে হবে।

অথবা এই লক্ষণগুলো আইসোলেটেড বা বিচ্ছিন্ন কিনা।

একজন ব্যক্তি বিষন্নতা বা অন্য কোনো রোগে নাও ভুগতে পারেন অথবা তারা মাদক ব্যবহার নাও করতে পারে। কিন্তু তারা রাগের বিস্ফোরণের অনুভূতির মুখোমুখি হতে পারেন। এই বিস্ফোরক অনুভূতিগুলো ছাড়া, তাদের জীবন স্বাভাবিক, ব্যাখ্যা করেন আজার। 

ড. আজারের মতে, এ কারণে এই রোগটি সুপরিচিত নয়, তবে এটি খুবই সাধারণ।

এই সংখ্যা বিশ্বব্যাপী সাত শতাংশে পৌঁছাতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এক্সপ্লোসিভ ডিসঅর্ডারের লক্ষণ

এই ইন্টারমিটেন্ট এক্সপ্লোসিভ ডিসঅর্ডার বা আকস্মিক বিস্ফোরক ব্যাধিতে হঠাৎ করে মানুষ যখন রাগের আক্রমণের শিকার হয়, তখন নানা ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়।

সহজেই খিটখিটে ভাব, উত্তেজনা ও শক্তি বৃদ্ধি, অতিরিক্ত চিন্তা করা, উত্তেজনা বা রাগ, বুকে টানটান ভাব, শরীরে কাঁপুনি, হৃদস্পন্দন দ্রুত হওয়া বা ধড়ফড় করা এবং শরীরে ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দের অনুভূতির লক্ষণ দেখা দেয় এ ধরনের ব্যক্তির দেহে।

মায়ো ক্লিনিকের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, পরিণতি বিবেচনা না করেই এ ধরনের রাগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৌখিক এবং আচরণগত বিস্ফোরণের তীব্রতা সংশ্লিষ্ট পরিস্থিতির তীব্রতার চেয়ে অনেক বেশি হয়।

এই ওয়েবসাইটের মতে, রাগের এই এক্সপ্লোসিভ অ্যাটাক বা বিস্ফোরক আক্রমণের মধ্যে নিম্নলিখিত আচরণগুলোও অন্তর্ভূক্ত থাকতে পারে:

১. রাগ বা মেজাজ খারাপ হওয়া।

২. রাগের দীর্ঘস্থায়ী বিস্ফোরণ।

৩. উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় ও চিৎকার করা।

৪. চড় বা শারীরিক ধাক্কাধাক্কি এবং ঝগড়া করা।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের মতে, মেজাজ খারাপ আচরণের মধ্যে সম্পত্তি ভাঙচুর বা ধ্বংস করা এবং মানুষ বা প্রাণীকে ক্ষতি করা বা হুমকি দেওয়াও অন্তর্ভুক্ত।

রাগের এ ধরনের আক্রমণগুলো হঠাৎ করে, খুব সামান্য বা কোনো ধরনের সতর্কতা ছাড়াই হতে পারে। রাগের এই এক্সপ্লোসিভ এপিসোডের পরে একজন ব্যক্তি সাধারণত মানসিকভাবে স্বাচ্ছন্দ্য এবং শারীরিকভাবে ক্লান্ত বোধ করে।

পরে অবশ্য তারা তাদের কাজের জন্য দোষী বা অনুতপ্ত বোধ করেন। এছাড়া প্রতিক্রিয়া দেখেও বিব্রত বোধ করেন। যদিও অনেকের ক্ষেত্রেই এই আচরণ স্বাভাবিক যেমন: ক্রোধ বা ক্ষোভ প্রকাশের পর অনুশোচনা বা বিব্রত বোধ করা।

এই আচরণ ইন্টারমিটেন্ট এক্সপ্লোসিভ ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য একেবারেই কমন বিষয়।

আজার জানান, ১৫ থেকে ৩০ মিনিট পরে এই ব্যক্তি সাধারণত শান্ত হন। তার ক্রোধ বা রাগের আচরণের জন্য অনুশোচনার অনুভূতিসহ এই এপিসোডটি ৩০ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

“কিন্তু অপরাধবোধ ওই কাজ বা আচরণ পুনরায় করা থেকে বাধা দেয় না” বলেন আজার।

তিনি আরও জানান, রাগ বা ক্রোধের এই অবস্থার লক্ষণ নির্ধারণের মানদণ্ডগুলো মানসিক ব্যাধির ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিক্যাল ম্যানুয়ালে প্রকাশিত হয়েছে।

তিনি উল্লেখ করেন, যদি তিন মাস ধরে প্রতি সপ্তাহে দুইবার এ রকম রাগের লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে বুঝতে হবে, কোনো সমস্যা আছে। অথবা ১২ মাসে অন্তত তিনটি গুরুতর আক্রমণ হলে আমরা বলতে পারি, এই রোগটি আসলেই আছে এবং ওই ব্যক্তির চিকিৎসা করা প্রয়োজন।

কারণ কী?

এই ইন্টারমিটেন্ট এক্সপ্লোসিভ ডিসঅর্ডারের নানা কারণ থাকতে পারে।

এর মধ্যে জৈবিক কারণ ছাড়াও কোনো ব্যক্তি যে পরিস্থিতি বা পরিবেশে বাস করে, তার সাথে সম্পর্কিত সামাজিক কারণগুলোও এর সাথে সম্পর্কিত থাকতে পারে। এছাড়া কিছু কারণ জেনেটিকও হতে পারে।

এই এক্সপ্লোসিভ ডিসঅর্ডার সংক্রান্ত গবেষণার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো শৈশবের ট্রমা, শোষণ এবং শারীরিক নির্যাতন, বুলির শিকার হওয়াও রাগ বা ক্রোধের পেছনে ভূমিকা রাখে।

একইসাথে দুর্বিসহ এবং ট্রমাটিক ঘটনার অভিজ্ঞতাও এই এক্সপ্লোসিভ ডিসঅর্ডারের কারণ। একজন ব্যক্তির পারিবারিক পরিবেশ এবং পরিস্থিতিও এতে করে প্রভাবিত হয়।

আজার উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, একটি শিশু যদি বাড়িতে এমন পরিবেশে থাকে যে, সে অনবরত বাবা-মায়ের বকুনির মুখোমুখি হয়। তাহলে নিঃসন্দেহে তার এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

গবেষণায় দেখা গেছে, মাদক ও অ্যালকোহল এই অবস্থাকে আরো খারাপ করার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে।

আমাদের মস্তিষ্কের ভেতরে কী চলছে?

অ্যামিগডালা আমাদের মস্তিষ্কের সেই অংশ যেটি আবেগ বিশেষত ভয় এবং উদ্বেগ তৈরির জন্য দায়ী। এটি আবেগের সাথে স্মৃতির সংযোগ করে। মস্তিষ্কের গভীরে অবস্থিত আমন্ড বাদামের আকৃতির এই অংশটি সাধারণ মানুষের চাইতে ইন্টারমিটেন্ট এক্সপ্লোসিভ ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে রাগের উদ্দীপনার ক্ষেত্রে বেশি প্রতিক্রিয়া এবং মিথষ্ক্রিয়া তৈরি করে।

সায়েন্স ডাইরেক্টে ২০১৬ সালে প্রকাশিত এই গবেষণাটি এমআরআই প্রমাণ করেছিল। এই ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, মস্তিষ্কের এই অ্যামিগডালা অংশটি ইন্টারমিটেন্ট এক্সপ্লোসিভ ডিসঅর্ডারের ক্ষেত্রে অতি সক্রিয়।

একজন ব্যক্তির মুড বা মানসিক আচরণ, ঘুম, ক্ষুধা, হজম এবং অন্যান্য অবস্থার জন্য দায়ী নিউরোট্রান্সমিটার এবং হরমোন। ভূমিকা পালন করে সেরোটোনিনও।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, এক্সপ্লোসিভ ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সেরোটোনিনের কার্যকারিতার পরিবর্তন হয়।

যার ফলে ডোপামিন ভারসাম্যহীনতার (সুখ ও উৎসাহের হরমোন) কারণে ব্যক্তির মধ্যে আক্রমণাত্মক আচরণ দেখা দেয়। সেরোটোনিন এবং অ্যামিগডালার মধ্যে একটি সম্পর্ক রয়েছে। কারণ মানসিক প্রতিক্রিয়ার সময় সেরোটোনিন অ্যামিগডালার ভূমিকা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১১ সালের এক গবেষণা এবং ২০১৬ সালে সায়েন্স ডাইরেক্টের একটি গবেষণায় এমন ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, ইন্টারমিটেন্ট এক্সপ্লোসিভ ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রায়শই অতিরিক্ত সক্রিয় অ্যামিগডালা এবং সেরোটোনিনের মাত্রা কম থাকে। 

শারীরিক ও সামাজিক প্রভাব

ঘন ঘন রাগের বহিঃপ্রকাশ একজন ব্যক্তির শরীরের ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে– যার ফলে স্ট্রোক, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।

কিন্তু শুধুমাত্র স্বাস্থ্যগত সমস্যার মধ্যেই এর প্রভাব সীমাবদ্ধ নয়। একজন রাগী ব্যক্তি যখন প্রচণ্ড রাগ বা ক্রোধের সম্মুখীন হন যেমন: কারো ক্ষতি করা, সম্পত্তি ধ্বংস করা অথা মৌখিকভাবে তাদের গালি-গালাজ করা তখন আইনি সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন।

এই ইন্টারমিটেন্ট এক্সপ্লোসিভ ডিসঅর্ডারের আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করে। তখন মানুষ এরকম দ্রুত ভয়াবহ রেগে যান বা হঠাৎ প্রতিক্রিয়া দেখান এমন ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করেন।

ব্যক্তির এমন আচরণে তার নিকটাত্মীয় পরিবার বা বন্ধুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

আজার বলেন, আমরা শুধু রাগের কথা বলছি না বরং একটি অগ্রহণযোগ্য এবং অনিয়ন্ত্রিত প্রতিক্রিয়ার কথা বলছি।

যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তখন আর ফিরে যাওয়ার সুযোগ থাকে না। সেসময় একজন ব্যক্তি তার আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে না উল্লেখ করেন তিনি।

পরিবারের ভূমিকা কী?

এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং যেসব লক্ষণের কথা আলোচনা করা হয়েছে, সেগুলো দেখা দিলে একজন বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করা উচিত বলে উল্লেখ করেন লেবানিজ আমেরিকান ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের মনোরোগ বিভাগের প্রধান জোসেলিন আজার।

তিনি গুরুত্বারোপ করেন, যদি পরিবারের অন্য সদস্যরা ওই আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে বেশি সময় কাটান তাহলে তারা রাগের এই আক্রমণের ফ্রিকোয়েন্সি, সংখ্যা এবং তীব্রতা পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।

এই ইন্টারমিটেন্ট এক্সপ্লোসিভ ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তি প্রায়শই খুব সহজেই উত্তেজিত ও বিরক্ত হয়ে পড়েন। তারা কোনো বাধার মুখোমুখি হওয়া বা বিভ্রান্ত হওয়া পছন্দ করেন না বলেও জানান মিজ আজার।

তার মতে, শান্ত হতে বলা হলে তারা আরো বিরক্তিকর হয়ে উঠতে পারে।

বেশিরভাগ গবেষণায় রোগীর পরিবারকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, কোনো ধরনের বাঁধা ছাড়াই তাকে যেন নিজেকে প্রকাশ করার সুযোগ দেওয়া হয়। তার রাগের কারণগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো এড়িয়ে চলা এবং তার প্রতিক্রিয়ার জন্য তাকে দোষারোপ না করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে এসব গবেষণায়।

পরিবারের সদস্যদের শান্ত থেকে বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ, তাদের নিজেদের নিরাপত্তা এবং আহত ব্যক্তির চিকিৎসাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এসব গবেষণায়।

চিকিৎসা কী?

এই ইন্টারমিটেন্ট এক্সপ্লোসিভ ডিসঅর্ডার চিকিৎসার একাধিক উপায় আছে। আগের তুলনায় চিকিৎসক এবং সাইকোথেরাপিস্টের চাহিদা এখনকার দিনে অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন মিজ আজার।

বেশিরভাগ সময়ই মানুষ ওষুধ খাওয়া এড়াতে একজন থেরাপিস্টের কাছে পরামর্শ নিতে পছন্দ করেন। যদিও অন্ততপক্ষ এক বছর ধরে চিকিৎসা এবং ফলোআপ সেশনের কারণে এই পদ্ধতিটি ব্যয়বহুল হতে পারে।

কিন্তু রোগীর জন্য কোন সাইকোথেরাপিস্ট ও চিকিৎসা পদ্ধতি সঠিক, সেটি জানা বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন আজার। বেশ কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি আছে। যেমন: কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি, রিলাক্সেশন এবং ব্রিদিং টেকনিক এবং রাগের কারণ এড়িয়ে চলা।

তবে, যেসব রোগীর ক্ষেত্রে রোগের মাত্রা অনেক বেশি হয় বা তীব্র ও বারবার আক্রমণ হয় তাদের ক্ষেত্রে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হতে পারে। ড. আজার ব্যাখ্যা করেন, যদি ওষুধের প্রয়োজন হয় তাহলে তা অবশ্যই নেওয়া উচিত।

এই ওষুধগুলোর মধ্যে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস (মানসিক রোগীদের জন্য যেসব ওষুধ দেওয়া হয়) এবং মেজাজ স্থিতিশীলতার ওষুধ অন্তর্ভুক্ত। 





Source link

Keep Up to Date with the Most Important News

By pressing the Subscribe button, you confirm that you have read and are agreeing to our Privacy Policy and Terms of Use
Add a comment Add a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous Post
গাজায় যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটেছে: ট্রাম্প

গাজায় যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটেছে: ট্রাম্প

Next Post
ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র ছাড়া মধ্যপ্রাচ্য ধ্বংস হবে

ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র ছাড়া মধ্যপ্রাচ্য ধ্বংস হবে

Advertisement