
পাকিস্তানের লাহোরে ফিলিস্তিনের পক্ষে আয়োজিত এক বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন পুলিশ কর্মকর্তাও রয়েছেন বলে জানা গেছে। সোমবার (১৩ অক্টোবর) পাঞ্জাব প্রদেশের এ সহিংসতা ঘটে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা। খবর বার্তা সংস্থা এপি’র।
পাঞ্জাব পুলিশের মহাপরিদর্শক উসমান আনোয়ার জানান, বিক্ষোভকারীরা প্রথমে পুলিশের দিকে গুলি ছোড়ে। এতে এক কর্মকর্তা নিহত ও কয়েকজন আহত হন। পরে সংঘর্ষে তিনজন বিক্ষোভকারী এবং এক পথচারীও নিহত হয়।
এই বিক্ষোভের আয়োজন করেছিল রাজনৈতিক দল তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান (টিএলপি)। দলটির দাবি, পুলিশের হামলায় তাদের শতাধিক সমর্থক আহত হয়েছে এবং নিহতের সংখ্যা সরকার যে তথ্য দিচ্ছে, তা আসল সংখ্যার চেয়ে অনেক কম।
আজ সোমবার দলটি প্রকাশিত এক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সংঘর্ষ চলাকালে কয়েকটি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে। আগুন লাগা যানবাহনের একটি ছিল একটি ট্রাক, যেখানে টিএলপি’র কয়েকজন শীর্ষ নেতা অবস্থান করছিলেন। এই নেতারাই গত শুক্রবার লাহোর থেকে রাজধানী ইসলামাবাদ অভিমুখে লংমার্চের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।
বার্তা সংস্থা এপি জানায়, বিক্ষোভকারীদের লংমার্চ থেকেই মূলত উত্তেজনার সূচনা হয়। এর আগে, শনিবারের একটি বিক্ষোভ থেকে পুলিশ তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান (টিএলপি)-এর ১০০ জনের বেশি সমর্থককে গ্রেপ্তার করে।
আজ সংঘর্ষ শুরু হওয়ার সময় বিক্ষোভকারীরা পুলিশের বসানো কনটেইনার সরিয়ে সড়ক খুলে দেওয়ার চেষ্টা করছিল। লাহোরে পুলিশের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষের পর তারা শহরের উপকণ্ঠে মুরিদকে এলাকায় অবস্থান নেয় এবং সেখান থেকে আবার রাজধানী ইসলামাবাদ অভিমুখে যাত্রা শুরু করে।
এর আগে আজ সোমবার ভোরে টিএলপির নেতা সাদ রিজভী একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি নিরাপত্তা বাহিনীকে গুলি বন্ধ করার আহ্বান জানান এবং আলোচনায় বসতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। ভিডিওতে তার বক্তব্যের সময় গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল।
টিএলপি জানায়, সাদ রিজভীও সোমবারের সংঘর্ষে আহত হয়েছেন। তবে তাঁর অবস্থান জানা যায়নি। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁকে এবং অন্যান্য নেতাকে খুঁজে বের করতে অভিযান চলছে।
পুলিশপ্রধান উসমান আনোয়ার বলেন, বিক্ষোভকারীরা ইসলামাবাদে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের সামনে সমাবেশ করতে চেয়েছিল। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে গেলে পুলিশ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। ‘আমরা এখনো ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ হিসাব নিচ্ছি,’ বলেন তিনি। তবে অনেকে পাকিস্তান সরকারের কঠোর পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন; বিশেষ করে বিক্ষোভ শুরুর আগেই প্রধান সড়কগুলো বন্ধ করে দেওয়ার কারণে।
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস গত সপ্তাহে নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করে সম্ভাব্য অস্থিরতার বিষয়ে সতর্ক করেছিল। তারা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের সতর্ক থাকারও পরামর্শ দিয়েছিল।
টিএলপি পাকিস্তানে বিতর্কিত একটি ইসলামপন্থী দল, যারা প্রায়ই সহিংস বিক্ষোভের জন্য পরিচিত। ২০১৮ সালের নির্বাচনে টিএলপি আলোচনায় আসে দেশের ধর্ম অবমাননা আইনের (ব্লাসফেমি আইন) পক্ষে প্রচার চালিয়ে। এরপর থেকে দলটি বেশ কয়েকবার সহিংস বিক্ষোভ করেছে, বিশেষত বিদেশে কোরআন অবমাননার ঘটনায়।
টিএলপি অতীতেও লাহোরসহ বিভিন্ন শহরে ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিক্ষোভ করেছে। এবার দলটির লক্ষ্য ছিল ইসলামাবাদে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের সামনে গিয়ে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানানো।