
হংকংয়ের বিপক্ষে ৪-৩ গোলে ম্যাচ হেরে বাংলাদেশের ফুটবল দর্শকের হৃদয় ভেঙেছে। হৃদয় ভেঙেছে সাধারণ দর্শকের। ক্ষুব্ধ দর্শক। নানা সমালোচনা করছেন। কোচ, খেলোয়াড়, ফেডারেশন-কেউ বাদ যাচ্ছেন না। একমাত্র প্রবাসী ফুটবলাররা প্রশংসা পাচ্ছেন। হংকংয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচের রেজাল্ট মেনে নিতে পারছেন না তারা। প্রবাসী ফুটবলাররা নামার পর খেলার পুরো ছবিটাই বদলে গিয়েছিল। আরেকটু সময় পেলে এভাবে হারতে হতো না।
সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে রক্ষভাগের ভুলে গোল হজম করে ম্যাচ হেরেছিল বাংলাদেশ। হামজা চৌধুরী এবার ঢাকা এসেও একই কথা বলেছিলেন সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ডিফেন্ডিংটা আরও একটু ভালো হলে…। এবার হংকংয়ের বিপক্ষে হারের সব কারণও ডিফেন্ডিং। গোলগুলো হয়েছে লেফটব্যাক সাদ উদ্দিনের এরিয়া দিয়ে।। হংকং ম্যাচ জিতলেও পুরো খেলায় এমন কোনো আক্রমণ করেনি, যেটা ঠেকাতে গিয়ে দুমড়ে-মুচড়ে যেতে হয়েছে।
ম্যাচ ভিডিও দেখলে বোঝা যায়, হংকংয়ের ৪ গোলের যতটা না কৃতিত্ব, তার চেয়েও বাংলাদেশের রক্ষণের ভুলের মাশুল বেশি। ফিফার র্যাংকিংয়ে এগিয়ে হংকং। তারা ভালো খেলবে, দুর্দান্ত খেলবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বৃহস্পতিবার ঢাকায় জাতীয় স্টেডিয়ামে ১৩ মিনিটে বাংলাদেশই গোল করে এগিয়ে গিয়েছিল। হামজা চৌধুরী অবিশ্বাস্য ফ্রি কিক থেকে গোল করে সাবাইকে আনন্দে ভাসিয়ে ছিলেন। কিন্তু সেই গোল ধরে রাখার দায়িত্ব কার?
হামজা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। তিনি আক্রমণে গেছেন। মিডফিল্ডে খেলেছেন। রক্ষণে এসেও দলকে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আর সাদ উদ্দিন, তারিক কাজী, শাকিল তপু, তাজ উদ্দিনরা কী করলেন? হ্যাটট্রিক করে গেলেন হংকংয়ের রাফায়েল মারকিস। সাদ উদ্দিনের দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে বল চলে যায়। গোটা বাংলাদেশ দেখছে রক্ষণে দাঁড়িয়ে সাদ উদ্দিন দলকে ডোবাচ্ছেন, তার পরও তাকে রেখে দিয়েছিলেন কোচ। মাঠ থেকে তুলে নেননি। কুয়েতি রেফারি সাউদের শেষ বাঁশি পর্যন্ত খেললেন সাদ উদ্দিন। তপুকে নামানো হয়েছিল। তিনিও কিছু করতে পারেননি।
হামজার গোলটা প্রথমার্ধ পর্যন্ত ধরে রাখলে দ্বিতীয়ার্ধটা নতুন পরিকল্পনায় খেলতে পারত বাংলাদেশ। প্রবাসী ফুটবলারদের নামানোর পর খেলার চিত্রটাই বদলে গিয়েছিল। হামজা চৌধুরীর সঙ্গে জায়ান আহমেদ, সামিত সোম, ফাহমিদুলদের সঙ্গে অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ারা হংকংকে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাদের রক্ষণ ভেঙেই দিয়েছিলেন। মোরসালিনের কর্নার থেকে সামিত সোম গোল করে দলকে নিশ্চিত হারের বৃত্ত থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু আবার সেই তপু-সাদ উদ্দিনদের রক্ষণে ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে গোল করে ম্যাচ জিতে যায় হংকং। তীরে এসে তরী ডোবানো, আর কত দিন।
কোচ কাবরেরা প্রমাণ করেছেন তিনি খেলোয়াড় পরিবর্তনে ভুল করেছিলেন। ভালো ভালো ফুটবলার বেঞ্চে বসিয়ে রেখে দলটাকে শুরু থেকেই পিছিয়ে দিয়েছেন। জামাল ভূঁইয়া, সামিত সোম, জায়ান আহমেদরা যদি একাদশে হামজাদের সঙ্গে নামতে পারতেন, তাহলে সেই দলটা কত শক্তিশালী হতো, সেটি এখন বুঝতে পারছেন কোচ।
ম্যাচ হেরে হোটেলে ফিরে মন খারাপ ছিল বাংলাদেশের ফুটবলারদের। হংকংয়ের বিপক্ষে ফিরতি ম্যাচ খেলতে গতকাল দুপুরে বিমান ধরতে যাওয়ার আগে সকালে হোটেলে গিয়েছিলেন বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল। সবাইকে সান্তনা দিয়েছেন। পরবর্তী ম্যাচের জন্য উজ্জীবীত করেছেন। তাতেও মন ভালো ছিল না ফুটবলারদের। মন খারাপ থাকায় রাতে দেরিতে ঘুমিয়েছেন। সকালে বিমানবন্দরে জামাল মুখ খুললেন। তারা একদাশে খেলতে চান।
বিমানবন্দরে জামাল বললেন, ‘আমি, সামিত, ফাহামিদুল, জায়ান যখন একসঙ্গে ওয়ার্ম-আপ শুরু করেছি, তখন ওদেরকে বলেছি আমরা যখন নামব, তখন পুরো খেলা পালটে দিতে হবে। হংকংকে সুযোগ দেওয়া যাবে না। আমাদের চার জনের ইমপ্যাক্ট ভালো ছিল। আমরা চার জনই একাদশে খেলতে চাই।’ কিন্তু তাদের কথা কোচ শুনতে পান না। ‘আপনি (জামাল ভূঁইয়া) খেলছেন না। ‘এটা নিয়ে আমি বলব। আমি তো সব ম্যাচ খেলতে চাই। কিন্তু দিনশেষে কারা খেলবে, এটা কোচের সিদ্ধান্ত।’

বাংলাদেশ ১-০তে এগিয়ে থাকার পর প্রথমার্ধের ইনজুরি টাইমে গোল হজম করেছে। সামিত গোল শোধ করে ম্যাচটা ড্রয়ের পথে নিচ্ছিলেন। সেটা হয়নি সেবারও ইনজুরি টাইমে গোল হজম করেছে। জামাল বলেন, ‘আমাদের ইতিহাসটাই এরকম। পুরো ম্যাচে মনোযোগী থাকতে হবে। কিন্তু আমরা পারিনি।’ আশা ছাড়ছেন না জামাল। ‘আমাদের হাতে তিন ম্যাচ আছে। তিনটি ম্যাচই জিততে হবে। এক পয়েন্ট হারালেই আমাদের বিদায়।’ ভালো ফুটবলারদের বসিয়ে রেখে কী পেলেন কোচ।
তীরে এসে তরী ডোবানো আর কত দিন। হংকং গোল হজমের পরই একটা ভালো সুযোগ পেয়েছিল। মিতুল ফ্লাই করে বল বাইরে পাঠিয়েছিলেন। এছাড়া আর কি করেছে হংকং। সব গোলই হংকংকে উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ। একাদশ গঠনে কোচের দুর্বলতা, আর সাদ উদ্দিনের মতো বাংলাদেশি ফুটবলারদের অদূরদর্শীতা চলতে তাহলে হামজা চৌধুরী একটা সময় লাল-সবুজ জার্সি গায়ে খেলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।