
ভারতীয় ওষুধ তৈরির কোম্পানি শ্রেসান ফার্মাসিউটিক্যালসের তৈরি কাশির সিরাপ ‘কোল্ডরিফ’ খেয়ে গত সেপ্টেম্বর ১ থেকে ৫ বছরের ১৭ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে।ঘটনাটি দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে, কারণ ভারতের তৈরি কাশির সিরাপ নিয়ে আগেও একাধিক দেশে ভয়াবহ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল।
শিশুদের কাশির সিরাপ তৈরিতে খুবই সীমিত মাত্রায় ডিয়েথিলিন গ্লাইকোল নামের এক প্রকার রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। সিরাপ তৈরির সময় যদি এটি নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়, তাহলে সেই সিরাপ সেবনে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা থাকে।
গবেষণায় দেখা গেছে কোল্ডরিফ সিরাপে নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে ৫০০ গুণ বেশি ডিয়েথিলেন গ্লাইকোল ব্যবহার করা হয়েছে।
কোম্পানির কারখানা ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তামিলনাড়ুতে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে শ্রেসান ফার্মাসিউটিক্যালসের মালিক ও শীর্ষ নির্বাহী জি. রঙ্গনাথনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল রয়টার্স, তবে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
ভারতের প্রচলতি আইনে কোনো ভারতীয় ওষুধ কোম্পানিকে তাদের পণ্য বাজারে ছাড়ার আগে সেসব পণ্যের প্রতিটি ব্যাচের ওষুধের মান পরীক্ষা করাতে কঠোরভাবে নির্দেশ দেওায়া হয়েছে।
শ্রেসান ফার্মাসিউটিক্যালস অবশ্য ওষুধ রপ্তানি করে না। এই কোম্পানির ওষুধ শুধুমাত্র ভারতের স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয়।
এদিকে, ১ মাসে ১৭ শিশুর মৃত্যুর পর নড়েচড়ে বসেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। দেশটির ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়ার প্রধান নির্বাহী রাজীব রঘুবংশী ইতোমধ্যে বাজারে সহজলভ্য শিশুদের কাশির সিরাপগুলোর ব্যাপারে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
২০২৩ সালে উজবেকিস্তান, ক্যামেরুন এবং গাম্বিয়ায় ভারতীয় কোম্পানির কফ সিরাপ সেবনের জেরে ১৪১ জন শিশুর মৃত্যুর পর বিদেশে রপ্তানির জন্য নির্ধারিত ওষুধগুলোর মান সরকার নির্ধারিত পরীক্ষাগারে যাচাইয়ের নির্দেশ দিয়েছিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের ওষুধ শিল্প বিশ্বজুড়ে বৃহৎ হলেও মান নিয়ন্ত্রণের দুর্বলতা এর সুনামকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে। আন্তর্জাতিক মহল এখন ভারতকে ওষুধ রপ্তানির আগে আরও কঠোর পরীক্ষার আহ্বান জানাচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা আর না ঘটে।