
গত ৫৪ বছর ধরে কোন সরকার নদী সমস্যা সমাধানে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ কোনো উদ্যোগ নেয়নি বলে জানিয়েছেন নদী গবেষক ও পরিবেশবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব নদী দিবস ২০২৫ উপলক্ষে নোঙর ট্রাস্টের উদ্যোগে ‘আত্মাসীমান্ত নদী এবং নদী সংস্কৃতি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘অভিন্ন নদীর পানি প্রবাহের উপর সবারই অধিকার আছে। এই প্রবাহের ওপর কেউ বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না। বাংলাদেশে নদী নিয়ে কখনো আমরা গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ পাইনি। শুধু ১৫ বছরের না, ৫৪ বছরের সমস্যা। ৫৪ বছর ধরে যে সমস্ত দল সরকারে এসেছে বা দলের বাইরে যারা সরকারে এসেছে-মাঝে মধ্যে কিছু উদ্যোগ হলেও নদী নিয়ে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ পাইনি।’
তিনি বলেন, ‘যৌথ নদী কমিশন কেন কাজ করে না? শুধু যৌথ নদী কমিশন নয়, আমরা অনেক ক্ষেত্রেই দেখি যে, যেসব কমিটি বা কমিশন হয় অন্যান্য দেশের সঙ্গে বা আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে দর কষাকষি বা আলোচনার জন্য, সেখানে আমাদের প্রস্তুতি, দক্ষতা, সক্ষমতার বড় একটা ঘাটতি দেখা যায়।’
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, ‘এই সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরে সবারই প্রত্যাশা ছিল যে, কিছু পরিবর্তনের সূচনা হবে। এগুলো নিয়ে কাজ করা এই সরকারের পক্ষে খুবই সহজ ছিল। প্রথম দরকার ছিল, যারা নদী নিয়ে কাজ করছেন- এই ব্যক্তিদের যুক্ত করে নদী নিয়ে কাজ করা। এই সরকার সংস্কার নিয়ে অনেক কথা বলে, সংস্কারের যত কথা গত এক বছরে শুনেছি, গত ৫৪ বছরে এত শুনিনি ‘সংস্কার’ শব্দটা। একমাত্র সংবিধান নিয়ে সংস্কারের কিছু সুনির্দিষ্ট আলোচনা দেখতে পাই, এর বাইরে অন্য কোনো বিষয়ে সংস্কারের প্রকৃত উদ্যোগ দেখিনি। নদী নিয়ে তো কোনো সমস্যার কমিশনই হয়নি। অথচ নদী আমাদের অস্তিত্বের অংশ, অস্তিত্বই থাকবে না যদি নদী না থাকে। সেই নদী নিয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। একটা খুব সহজ কাজ ছিল- সরকারের জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক কনভেনশন ১৯৯৭ সালের সেটিতে অনুস্বাক্ষর করা। এই আন্তর্জাতিক পানি কনভেনশনে ভারত স্বাক্ষর করেনি, ভারত যেহেতু স্বাক্ষর করেনি, সে কারণেই আমাদের স্বাক্ষর করা উচিত।’
অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন নোঙর ট্রাস্টের চেয়ারম্যান সুমন শামস। এতে প্রস্তাব করা হয়, নদীগুলোকে রক্ষা করতে জাতীয় নদী দিবস ঘোষণা করা এবং নদী সম্পদ মন্ত্রণালয় গঠন করার। ২৩ মে জাতীয় নদী দিবস ঘোষণার প্রস্তাব দেওয়া হয়। ২৩ মে জাতীয় নদী দিবস ঘোষণা করার প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়- নৌপথের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং নদী রক্ষায় ভাবচেতনতা বৃদ্ধি করা। এটি সাধারণ মানুষকে নদীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে এবং এর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অনুপ্রাণিত করবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন মাহবুব সিদ্দিকী, শেখ রোকন, তোফায়েল আহমেদ, মিহির বিশ্বাস, হালিমদাদ খান, কামরুজ্জামান, শর্মিলা খানম প্রমুখ।