
সংশোধিত শ্রম আইনে মাত্র ২০ জন শ্রমিকের সম্মতিতে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের সুযোগ রেখে যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর নেতারা। তাদের আশঙ্কা, এ ধরনের বিধান বাস্তবায়িত হলে শিল্পে অন্তর্দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি পাবে, উৎপাদন ব্যাহত হবে এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাজধানীর উত্তরার বিজিএমইএ ভবনের মিলনায়তনে সাতটি ব্যবসায়ী সংগঠনের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
আয়োজক সংগঠনগুলো হলো—বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ), বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএপিএমইএ), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই), লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলএফএমইএবি) এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ (বাপি)।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান। তিনি বলেন, “ত্রিপক্ষীয় সমন্বয় কমিটির আলোচনায় শ্রমিকসংখ্যার ভিত্তিতে ইউনিয়ন গঠনের জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। প্রস্তাব অনুযায়ী ৫০ থেকে ৫০০ শ্রমিকের কারখানায় ৫০ জন শ্রমিকের সম্মতিতে ইউনিয়ন গঠনের সুযোগ রাখার কথা ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় তা পরিবর্তন করে ২০ থেকে ৩০০ শ্রমিক নির্ধারণ করা হয়েছে, যা বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।”
তিনি আরও বলেন, “ভারতে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে ১০ শতাংশ বা ন্যূনতম ১০০ শ্রমিকের সম্মতি লাগে, পাকিস্তানে লাগে ২০ শতাংশ। অথচ আমাদের দেশে মাত্র ২০ শ্রমিকের সম্মতিতেই ইউনিয়ন গঠনের সুযোগ রাখা হয়েছে—এটি দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে দুর্বল কাঠামো তৈরি করবে।”
মাহমুদ হাসান খান আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এই সিদ্ধান্ত বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে নেতিবাচক বার্তা দেবে।
সংবাদা সম্মেলনে বক্তারা বলেন, প্রস্তাবিত আইনে ভবিষ্যৎ তহবিল, শ্রমিকের সংজ্ঞা এবং অন্যান্য ধারায় অস্পষ্টতা রয়েছে, যা শিল্পে বিশৃঙ্খলা ও অনিশ্চয়তা তৈরি করতে পারে। এতে শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সমস্যা দেখা দেবে, রপ্তানি কমবে এবং সামগ্রিক অর্থনীতি দুর্বল হবে। তারা অনুমোদিত “বাংলাদেশ শ্রম আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫” পুনর্বিবেচনার দাবি জানান।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদ শ্রম আইন সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, নতুন আইনটি আধুনিক, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন এবং শ্রমিক-উদ্যোক্তা উভয় পক্ষের স্বার্থ রক্ষায় ভারসাম্যপূর্ণ।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম বন্দরের সেবা মাশুল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, “টাকার অবমূল্যায়নের কারণে উদ্যোক্তাদের প্রকৃত মাশুল ৩০০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। সরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার জন্য নয়, জনগণকে সেবা দেওয়ার জন্য কাজ করার কথা। তবু কেন মাশুল বাড়ানো হলো, তা উদ্যোক্তাদের বোধগম্য নয়।”
শিল্পের স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখতে শ্রম আইন সংশোধনের প্রস্তাবগুলো পুনর্মূল্যায়নে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান ব্যবসায়ী নেতারা।