
এমনটা কেউ ভাবেই নাই, বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপের ১৫০০ মিটার পুরুষদের ফাইনালে আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন জশ কের, নিয়েলস লারস, কিংবা ফিরে আসা জেক ওয়াইটম্যান। কিন্তু সব হিসাব-নিকাশ ভেঙে দিয়ে সোনার মুকুট উঠল পর্তুগালের আইজ্যাক নাদেরের মাথায়। এ যেন সিনেমার চিত্রনাট্য। মৌসুমে ডায়মন্ড লিগ জিতেছিলেন, নিয়মিত টপ-ফাইভে থেকেছেন, তবু ফাইনালের আগে খুব কম মানুষই ভেবেছিলেন সোনা তার হাতে যাবে।
ধীরগতির রেসে যখন মনে হচ্ছিল লারসের দুরন্ত স্প্রিন্টই সবকিছু নির্ধারণ করবে, ঠিক তখন শেষ মোড়ে জ্বলে ওঠেন নাদের। চোখধাঁধানো দৌড়ে ব্রিটিশ তারকা ওয়াইটম্যানকে মাত্র দুই শতাংশ সেকেন্ডে পেছনে ফেলে ইতিহাস লিখলেন তিনি। সময় দাঁড়ায় ৩ মিনিট ৩৪.১০ সেকেন্ডে-যা আগের দুই আসরের তুলনায় পাঁচ সেকেন্ড ধীর হলেও উত্তেজনার কমতি রাখেনি একটুও। আর ওয়াইটম্যান স্পিন্ট শেষ করেন ৩ মিনিট ৩৪.১২ সেকেন্ডে। নাদেরের এই অর্জন পর্তুগালের জন্য প্রথম। এর আগে কখনো বিশ্ব অ্যাথলেটিকসের ১৫০০ মিটারে দেশটির কোনো স্প্রিন্টার স্বর্ণ পদক জেতেনি।
বুধবার রাতের ফাইনালটা শুরু হয়েছিল থমথমে উত্তেজনায়। লাইনে দাঁড়িয়ে হাসছিলেন ব্রিটিশ তারকা স্পিন্টার জশ কের, আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতে তাকাচ্ছিলেন নিয়েলস লারস, প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখতে চেয়েছিলেন জেক ওয়াইটম্যান। গ্যালারিতে শোনা যাচ্ছিল গুঞ্জন-এদের কারও হাতেই উঠবে সোনার মুকুট। কিন্তু কে জানত, আলগার্ভের সেই ছেলেটিই শেষ হাসি হাসবে? তবে কে যেন দুঃখের নায়ক। ঘোষণায় বলেছিলেন, ‘যে নিতে আসবে, যুদ্ধ করেই নিতে হবে।’
কিন্তু যুদ্ধটা তাকে করতে হলো নিজের শরীরের সঙ্গে। দেড় ল্যাপ বাকি থাকতে হঠাৎ ব্যথায় থমকে গেলেন, একেকটা পদক্ষেপ হয়ে উঠল দুঃসহ যন্ত্রণার প্রতীক। সবার আগে আসার স্বপ্ন মুছে গিয়ে তিনি শেষ করলেন রেস, অর্ধ মিনিট পিছিয়ে। স্টেডিয়াম তখন নিস্তব্ধ, যেন এক ট্র্যাজেডির পর্দা নেমে এলো।
অবিশ্বাস্য স্প্রিন্ট শেষে নাদের পর্তুগিজ এক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার বলার মতো কোনো ভাষা নেই। আজ আর কেউ বলতে পারবে না যে আইজ্যাক নাদের শেষ মিটার পর্যন্ত লড়াই করেনি, কেউ বলতে পারবে না যে আইজ্যাক নাদের পেছনে তাকিয়েছে।’
এ সময় তিনি নিজের অর্জন নিয়ে আরও বলেন, ‘এটা এক স্বপ্নের মতো অর্জন। আমি এর জন্যই এতদিন ধরে কষ্ট করে আসছিলাম। অনেকেই সমালোচনা করেছে, কিন্তু আসল বিষয় হলো-আমি বিশ্বাস করি, আমার পরিবার বিশ্বাস করে, আমার কোচ বিশ্বাস করে যে আমি পারবো। সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই সমালোচনা করেছে, অনেকেই বলেছে এটা কোনোদিন সম্ভব নয়। কিন্তু আজ আমি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, আর কেউ এই পদক আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারবে না।’
অন্যদিকে ওয়াইটম্যান যখন শেষ মোড়ে লাফিয়ে এগোলেন, মনে হচ্ছিল-এবার বুঝি ইতিহাস পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছে। তার বাবার কণ্ঠেই তখন কমেন্ট্রি বেজে উঠছিল, আবেগে ভেসে যাচ্ছিল ব্রিটিশ গ্যালারি। আর ঠিক তখনই বজ্রপাত! নাদের হঠাৎ বিস্ফোরিত হলেন। এক নিখুঁত টাইমিংয়ে যেন ছিঁড়ে ফেললেন সব শিকল, বাতাস কেটে উড়ে গেলেন সামনের দিকে।
শেষ লাইনে পৌঁছে দেখা গেল, দুই শতাংশ সেকেন্ডের ব্যবধান! ওয়াইটম্যান হতভম্ব, লারস হারিয়ে গেলেন ছায়ায়, আর গলায় স্বর্ণপদক ঝুলেছে নাদেরের। কেনিয়ার দুই চেরুইয়টের লড়াইও যেন নতুন নাটকীয়তা যোগ করল। ২০১৯-এর সোনাজয়ী টিমোথি এবার স্লিপ করলেন, কিন্তু সতীর্থ রেইনল্ড ছিনিয়ে নিলেন ব্রোঞ্জ। তরুণ লারসের স্বপ্ন ছিল সবচেয়ে কম বয়সে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার- তবে তা ভেঙে চুরমার হয়ে রইল পঞ্চম স্থানে।