
জাপানের রাজধানী টোকিও বিশাল শহরটি কয়েক ভাগে বিভক্ত। সিনাগাওয়া একটি অংশ। সিনাগাওয়ার তাকানাওয়া মিনাতো এলাকাটায় আন্তর্জাতিক চেইন হোটেল, পৃথিবীর সব বড় বড় হোটেলের শাখা এই এলাকায়। ৩০ তলা, ৪০ তলা, ৫০ তলা উঁচু ভবন রয়েছে। এখানেই বিভিন্ন হোটেলে উঠেছেন বিশ্ব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে খেলতে আসা অ্যাথলেটরা। প্রিন্স হোটেলে অ্যাথলেট, কোচ, কর্মকর্তারে পদচারণায় গিজ গিজ করছে।
হোটেল লবিতে সবার ভিড়। সবাই হাসিখুশি মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ফ্রান্সের অ্যাথলেটরা কথা বলছেন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাথলেটদের সঙ্গে, রোমানিয়ান অ্যাথলেটরা কথা বলছেন জামাইকার অ্যাথলেটদের সঙ্গে। সবাই যেন সবার কাছের বন্ধু, বুকে বুক মিলিয়ে আপনজনের সঙ্গে দেখা হলো। অনেকের সঙ্গে দেখা হলো প্যারিস অলিম্পিক গেমসের পর। দেখা হতেই একজন আরেক জনকে জড়িয়ে ধরছেন। ভিড়ের মধ্যে বাংলাদেশের অ্যাথলেট নাজমুল হোসেন রনিকে সহজেই চেনা গেল। প্রথম দেখাতেই মনে হলো চোখে-মুখে রাজ্যের হতাশা। একেবারে মলিন মুখে হোটেল লবিতে হাঁটছিলেন। এত বড় বড় তারকার মধ্যে নিজেকে যেন খুঁজেই পাচ্ছিলেন না। সবাই অচেনা। এত তারকার মধ্যে নিজেকে চিনতে পারছিলেন না।
প্রথম বার বিশ্ব অ্যাথলেটিকসে খেলতে এলেন রনি। স্বীকার করেই নিয়েছেন বিশ্ব অ্যাথলেটিকসের বড় আসর যেন মহাসমুদ্র। এই মহাসমুদ্রে নিজেকে ক্ষুদ্র কণাই মনে হবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মেনে নিতে পারছেন না জাপানের খ্যাটা। প্রিন্স হোটেলের ২৯ তলায় বার, তার নিচেই অ্যাথলেটদের খাওয়ার ব্যবস্থা। সেখানে খেতে গিয়ে রনির কপাল কুঁচকে গিয়েছে। থরে থরে সাজানো কতশত খাবার। কিন্তু কোনোটাই মন টানছিল না রনির। প্লেটে কিছু একটা তুললেই নাকে গন্ধ আসে। ৪০০ মিটার হার্ডলসে লড়াই করতে বিশ্ব অ্যাথলেটিকসে খেলতে আসা রনি রুটিকলা খেয়ে প্রথম দুই দিন কাটিয়েছেন। কোনো খাবারই গলা দিয়ে নামছে না বগুড়ার ছেলে রনির।
পরশু সকালে হোটেলে এসে দুই দিন ধরে খাওয়ার কষ্ট করছেন। পছন্দের খাবার খেতে পারছেন না। ‘অনেক আইটেম আছে। কিন্তু আমাদের জন্য না। সবই এ দেশীয় (জাপান) খাবার। আমরা এ খাবারে অভ্যস্ত না। অনেক খাবার আছে, সব চেনাও যায় না। এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত কয়েক বার ঘোরাঘুরি করেছি। কিন্তু পছন্দ হচ্ছিল না। পরে পছন্দের দুই-একটা খাবার নিয়েছি-বললেন রনি।
জানালেন তিনি সাদা ভাত ভাত,সস, ফল আর রুটি খেয়েছেন। রাতেও একই খাবার খেয়েছেন। ভাত ও টম্যাটো সস। এসব খেয়ে কি খেলা যাবে? প্রশ্ন শুনে রনি বলেন, ‘দেখা যাক, কয়েক দিন কষ্ট করি। মানিয়ে নেব।’ প্রথমবার কেউ জাপানে এলে খাওয়া-দাওয়া নিয়ে সমস্যা হয়। রনির হয়তো সেটাই হয়েছে। তবে রনির বিশ্বাস মানিয়ে নিতে পারবেন। ‘কী আর করবো। এখন কষ্ট হচ্ছে হয়তো ঠিক হয়ে যাবে, মানিয়ে নেব।’
জাপানে এসে তিক্ত অভিজ্ঞতার এখানেই শেষ নয়, হোটেলে পৌঁছে বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন জাতীয় অ্যাথলেটিকসে ৪০০ মিটার হার্ডলসে স্বর্ণজয়ী রনি। মঙ্গলবার দুপুরে রওনা দিয়ে ঢাকা ব্যাংকক হয়ে জাপানের নারিতা বিমানবন্দরে নেমেছেন বুধবার সকালে। তাদের জন্য নির্ধারিত প্রিন্স হোটেলে গিয়ে ঘুমাতে চেয়েছিলেন রনি। ভ্রমণক্লান্তি কাটানোর চিন্তা করে শেষ পর্যন্ত হোটেলের লবিতেই পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। হোটেল কর্তৃপক্ষ রুম দেবে দুপুরের পর। চোখে ঘুম নিয়ে দাঁড়িয়ে লবিতে রনি। সব খেলোয়াড়, কোচ কর্মকর্তার রেজিস্ট্রেশন হবে তারপর সিরিয়াল অনুযায়ী রুম দেওয়া হবে। ১৫ তলায় সেই রুম পাওয়া গেছে বিকাল ৫টার পর।
সব অ্যাথলেটকেই ভোগান্তি মেনে নিতে হয়েছে। রনি বলেন, ‘বিকাল ৩টার আগে কেউ রুম পায়নি।’ অপেক্ষার মধ্যে অ্যাথলেটদের ফটোশুট হয়েছে। যে পোশাকে রনি খেলবেন, সেই পোশাক পরিয়ে হোটেলের ওপর ফটোশুট করা হয়। এরই মধ্যে সন্ধ্যায় পরিচয় হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাথলেট শেলবি ম্যাকউয়েনের সঙ্গে। এ মার্কিন অ্যাথলেট প্যারিস অলিম্পিক গেমস অ্যাথলেটিকসের হাই জাম্পে রৌপ্য পদক জয় করেছিলেন। কথা বলেন রনির সঙ্গে। হাত মেলান, জানতে চান কোন শেলবি, কোন ইভেন্ট। অ্যাথলেটের সঙ্গে কথা হওয়ায় রনি সারা দিনের ক্লান্তি ভুলে গেছেন।