
বলিউডে বহু সুপার হিট সিনেমা উপহার দিয়েছেন ধর্মেন্দ্র-হেমা মালিনী জুটি। সিনেমার জন্য তারা যেমন জনপ্রিয় ছিলেন, তেমনি আলোচিত ছিল তাদের প্রেম কাহিনী।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ধর্মেন্দ্র-হেমার সে প্রেমের শুরু হয় ‘শোলে’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়। সেই সময় হেমাকে ঘিরে অদ্ভুত সব কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন ধর্মেন্দ্র।
তখন শুটিং চলছিল পুরোদমে। এর মধ্যে ‘শোলে’ সিনেমার একটি দৃশ্য ছিল ধর্মেন্দ্র হেমা মালিনীকে রিভলবার দিয়ে গুলি করতে শেখাচ্ছেন। এই দৃশ্য ঠিকমতো শুটিং করতেই ঘটে যত গন্ডগোল। কোনোমতেই ঠিকমতো শুটিং করা যাচ্ছিল না। আর এর মূলে ছিলেন স্বয়ং ধর্মেন্দ্র নিজেই।
দৃশ্যটি যেন এক টেকে ঠিকমতো না হয়, সে জন্য শুটিংয়ের লাইটম্যানদের হাত করেন এই অভিনেতা। তাদের জানান, প্রতিবার কোনো না কোনো একটি ভুল করতে হবে।
ধর্মেন্দ্র নিজেই বলেছিলেন, ভুল করলে তিনি লাইটম্যানদের প্রতিবার ২০ টাকা করে দেবেন। যে কথা সেই কাজ। পরিচালক লাইট ক্যামেরা অ্যাকশন বললেই, চিত্রনাট্যের পাতা অনুযায়ী হেমা মালিনীকে কাছে এনে গুলি করতে শেখানোর দৃশ্যটি শুরু হয়।
কিছু সময় পর লাইটম্যানেরা বলে ওঠেন, ‘আবার শুটিং করতে হবে। লাইটে সমস্যা ছিল।’
এ ঘটনা একের পর এক ঘটতে থাকে। শুরুতে না হলেও পরে বেশ মেজাজ খারাপ হয় হেমার; কিন্তু মনটা ভালো ছিল ধর্মেন্দ্রের। এভাবে একের পর এক শুটিংয়ে ব্যাঘাত ঘটানোর জন্য লাইটের লোকদের ২ হাজার টাকার বেশি দিয়েছিলেন এই অভিনেতা। এর একমাত্র কারণ ছিল হেমাকে ইচ্ছেমতো জড়িয়ে ধরার সুযোগ পাওয়া, তার কাছাকাছি থাকা।
পরে তাদের প্রেম ছিল সবচেয়ে বেশি আলোচনায়। এর মধ্যে হেমা মালিনীর বিয়ে ভাঙাসহ নানা ঘটনার জন্ম দেন ধর্মেন্দ্র। কাছাকাছি আসেন এই দুই আলোচিত তারকা। কিন্তু হেমার পরিবার প্রথম থেকেই এই সম্পর্কের বিরোধিতা করে। কারণ, ধর্মেন্দ্র তখনো প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স দেননি। তবু ভালোবাসার কমতি ছিল না।
হেমা মালিনীর সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করলেও ধর্মেন্দ্র তখন বিবাহিত, স্ত্রী প্রকাশ কৌর তাকে ডিভোর্স দিতে রাজি নন। তাই একসঙ্গে থাকার জন্য দুজনই ধর্ম পরিবর্তন করেন। ১৯৭৯ সালে ধর্মেন্দ্র ‘দিলওয়ার খান কেওয়াল কৃষ্ণ’ নামে পরিচিত হন, আর হেমা নাম নেন ‘আয়েশা বি আর চক্রবর্তী’।
১৯৭৯ সালের ২১ আগস্ট বিয়ে সম্পন্ন হয়, মোহরানা ধার্য হয় ১ লাখ ১১ হাজার রুপি। পরে ১৯৮০ সালের ২ মে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের ঘোষণা দেন।
এই বিয়ে নিয়ে তুমুল আলোচনা–সমালোচনা বলিউড ছাড়িয়ে পুরো ভারতে ছড়িয়ে পড়ে। তবে কোনো কিছুকেই প্রাধান্য দেননি ধর্মেন্দ্র ও হেমা মালিনী। তারা মনে করতেন একে অপরের জীবনে তারা অপরিহার্য। ১৯৮১ সালে জন্ম নেয় তাদের প্রথম মেয়ে এশা দেওল। ১৯৮৫ সালে আসে দ্বিতীয় কন্যা আহানা।
দুজন একসঙ্গে কাজ করেছেন ৪২টি ছবিতে—শোলে, সীতা অউর গীতা থেকে শুরু করে নসীব ও আন্ধা কানুনসহ বহু চলচ্চিত্রে তাদের রসায়ন দর্শকদের মুগ্ধ করে যায়।
গত ২৪ নভেম্বর ৮৯ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা ধর্মেন্দ্র।
শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কারণে গত অক্টোবরের শেষের দিকে তাকে মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়িতে ফিরেছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না, ১২ দিন পর নিজ বাড়িতেই পরপারে পাড়ি জমান ধর্মেন্দ্র।