
এবার ভারতে অনুষ্ঠিত জুনিয়র বিশ্বকাপ হকিতে ২৪ দেশ অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে বাংলাদেশের হকি দল তাদের পারফরম্যান্স দিয়ে সাড়া ফেলেছে। অন্যান্য দেশ দেখেছে বাংলার তরুণ ছেলেরা কতটা ভালো পারফরম্যান্স করেছে। ২৪ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের আমিরুল ইসলাম ১৮ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন। এমন ইতিহাস আর নেই।
হকি ছাড়া অন্য কোনো বিশ্বকাপে বাংলাদেশের এমন পারফরম্যান্স নেই। এশিয়া ইউরোপ লাতিনের দেশ জুনিয়র বিশ্বকাপ খেলেছে। জুনিয়র বিশ্বকাপের খেলা দেখতে অনেক দেশের দর্শক এসেছিলেন। সেখানে শুধু সাধারণ দর্শকই ছিলেন না। খেলোয়াড়দের বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনও ছিলেন গ্যালারিতে।
অন্যান্য দেশের খেলোয়াড়রা যেভাবে সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন তার কিছুই পান না বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা। অভাব-অনটনের মধ্যে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা খেলেন পেটে-ভাতে। জার্সি ট্র্যাকস্যুট পান।
তবে এবার ২৫ দিনের জন্য ভাতা পেয়েছিলেন ৩০ ডলার করে। তা-ও কিনা এটা পেতে খেলোয়াড়দেরকে কথা বলতে হয়েছিল। খেলোয়াড়ারা তো বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে ক্যাম্পের ভেতরে ফুসছিলেন। ফেডারেশন ভালো উদ্যোগ নিয়েছিল। পকেট মানি বাড়িয়ে দিয়ে। কিন্তু এভাবে জাতীয় দল চলে না। জাতীয় দলে বেতন প্রথা চালুর পক্ষে আমিরুল ইসলাম। লিগ নেই খেলা নেই। হকি খেলে এখন ক্যারিয়ার গড়াই কঠিন। জাতীয় দলে যারা খেলবেন তারা যদি বেতন কাঠামোর মধ্যে চলে আসেন তাহলে খেলোয়াড়রা একটু ভালো থাকার সুযোগ পাবেন।
আমিরুল মনে করেন, খেলোয়াড়দের মধ্যে আগ্রহ বাড়বে। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, এখনই জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের নিয়ে বেতন কাঠামো প্রথা চালু করার সময় এসেছে। ফেডারেশনের আর্থিক সমস্যা রয়েছে আমরাও বুঝি। সমস্যা সমাধানে স্পন্সর প্রতিষ্ঠানগুলো যদি এগিয়ে আসেন তাহলে হকিতে প্রাণ ফিরবে। না হলে দেখবেন আমরা খেলব, কিছু দিন আমাদের নিয়ে আলোচনা হবে। দুদিন পর সব নিভে যাবে।’
বেতন প্রথা চালু করার কথা বলতে গিয়ে নিজের ক্যারিয়ারের কথা তুলে আনেন আমিরুল ইসলাম। বিকেএসপিতে যখন সুযোগ পেয়েছিলেন তখন তাকে ভর্তি করতে চায়নি বিকেএসপি। বিকেএসপি মনে করেছিল, হকিতে যে খরচ সেটা দিতে পারবে না আমিরুল। ‘ভর্তির যে খরচ সেটা আমি দিতে পারব না বলে আমাকে ভর্তি করতে চায়নি বিকেএসপি। কারণ আমার পরিবার দরিদ্র পরিবার, বহন করার ক্ষমতা নেই। ভর্তি হওয়ার জন্যই ৫৫ হাজার টাকার মতো লাগবে ড্রেস, খেলার সরঞ্জাম, জুতা, মোজা, জার্সি, প্যান্ট, কলেজ ড্রেস কিনতে হবে। এই টাকাটা আমার পারসোনাল জিনিসপত্র কিনতে লাগবে। তারা (বিকেএসপি) মনে করেছিল, আমার পরিবার এটা কিনতে পারবে না। তখন আমার কোচ নুরুল ইসলাম স্যার শক্তভাবে বলে ছিলেন, আপনারা (বিকেএসপি) যদি ভর্তি না করেন তাহলে আমি ভর্তি করব। উনি উদ্যোগ নেওয়ার পর আমি ভর্তি হয়েছিলাম। কারণ নুরুল ইসলাম স্যারের কাছে আমি খেলা শিখেছিলাম-বলছিলেন আমিরুল ইসলাম।
এবারের জুনিয়র বিশ্বকাপে ৫ হ্যাটট্রিক করা খেলোয়াড় আমিরুল বললেন, ‘একজন খেলোয়াড়কে হকি খেলতে হলে তার খরচ অনেক। ক্লাবের খেলা নেই। জাতীয় দলে খেলে বেতন নেই। এভাবে চলতে থাকলে হকিতে তরুণ প্রজন্ম আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। একটা পরিকল্পনা থাকা উচিত যেখানে আয় থাকবে। খেলোয়াড়রা আয় করতে পারবে। ফুটবল ক্রিকেটে দেখুন, ছোট লেভেলে খেললেও অর্থ পাচ্ছেন তারা।’