
তপ্ত গরমে নাগরিক জীবন ওষ্ঠাগত। দিনের প্রথম ভাগে বৃষ্টি হলেও বিকালে ভারী বৃষ্টি হয়েছে শহরে। বৃষ্টির আগেই প্রথম অনুশীলন। ঢাকা স্টেডিয়ামে জাতীয় ফুটবল প্রাথমিক দলের খেলোয়াড়রা। মাঠে নেমে ১৫ মিনিটও অনুশীলন করতে পারেননি জামাল ভূঁইয়া, তপু বর্মন, ফাহমিদুল ইসলাম, তাজ উদ্দিন, সাদ উদ্দিন, মোরসালিনরা। জাতীয় দলের স্প্যানিশ কোচ হ্যাভিয়ের কাবরেরা ও তার কোচিং স্টাফদের নিয়ে বৃষ্টির মধ্যেই মাঠে ছিলেন। বৃষ্টি পড়ছে সেটিও উপভোগ করছিলেন।
কিন্তু যখন বৃষ্টির মধ্যে আকাশে বিদ্যুৎ চমক দিচ্ছিল তখনো ঝুঁকি নেননি হ্যাভিয়ের। খেলোয়াড়রা যে যার মতো দৌড়ে ড্রেসিং রুমে ঠাঁই নিলেন। বৃষ্টির চোখ রাঙ্গানী কমলে, কোচ নিজে মাঠে গিয়ে হাঁটলেন, দেখলেন। কিন্তু অনুশীলনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে গেলেন। সবাইকে নিয়ে বাসে হোটেলের পথে রওনা হলেন। বজ্রপাতে প্রথম দিনের ফুটবল অনুশীলন বন্ধই হয়ে গেল।

৯ অক্টোবর ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে এবং ১৪ অক্টোবর হংকংয়ের মাঠে হংকংয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচ। এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে টিকে থাকার লড়াই। হংকংকে হারাতে পারলে টিকে থাকবে। আর হেরে গেলে অনেক যদি কিন্তুর হিসাব-নিকাশে চলে যাবে। যেখানে আর কোনো সুযোগ থাকবে না বলা যায়।
জাতীয় দলের ফুটবলারদের কাছে তাই ৯ অক্টোবরের ম্যাচটি ডু অর ডাই ম্যাচ।
গোলরক্ষক মিতুল মারমা, মিডফিল্ডার সোহেল রানাদের কণ্ঠেও সেকথাই উঠে আসল। গতকাল বিকালে অনুশীলনে নামার আগে মাঠে দাঁড়িয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন মিতুল মারমা এবং সোহেল রানা। মিতুল বলেন, ‘সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কোয়ালিফাই করতে হলে আমাদের এ দুটো ম্যাচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোন দল র্যাংকিংয়ে (হংকং ১৪৬) (বাংলাদেশ ১৮৪) কত নম্বরে আছে সেটা দেখতে চাচ্ছি না। আমাদের মেইন ফোকাস হচ্ছে যেভাবেই হোক জিততে হবে।’

বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ খেলার আগে চীন, কোরিয়া, ফিজি, জাপানের মতো দলের বিপক্ষে ম্যাচ খেলার তরতাজা অনুশীলন করে ঢাকায় আসবে হংকং। ৪৬ ধাপ উপরে থাকা সেই দলকে মোকাবিলা করতে বাংলাদেশের প্রস্তুতি বলতে ৬ সেপ্টেম্বর কাঠমান্ডুতে নেপালের বিপক্ষে একটি প্রীতি ম্যাচ। ‘আমরা যদি আরও বেশি ম্যাচ খেলতে পারতাম, আমাদের জন্য ইতিবাচক হতো। যেহেতু খেলতে পারিনি, সেটা নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। শুরু থেকে আমরা হংকং ম্যাচ ঘিরে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। লিগ বা যেখানেই বলি আমরা নিজেদের দিকে ফোকাস রেখেছিলাম, কারণ এটা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। আমাদের হাতে যেটুকু সময় আছে, ঐ টুকুতে নিজেদের ঝালিয়ে নিয়ে সেরাটা দিতে চাই- বললেন মিতুল।
বাফুফের দাবি বাংলাদেশ-হংকং ম্যাচের ১৯ হাজার ২০০ টিকিট বিক্রি হতে ৩০ মিনিটও লাগেনি। ৯ অক্টোবর দর্শকে স্টেডিয়াম উপচে পড়বে। এটা বাড়তি চাপ কিনা। মিডফিল্ডার সোহেল রানা এটাকে ফুটবলের জন্য ইতিবাচক হিসাবে দেখছেন। ‘একই সঙ্গে আমাদের খেলোয়াড়দের দায়িত্ব আরও বেড়ে যায়। কারণ সিঙ্গাপুর ম্যাচেও একই জিনিস ঘটেছে। দর্শকেরা চাচ্ছিল ম্যাচটা যেন আমরা জিততে পারি। কিন্তু পারিনি-বললেন সোহেল রানা।

সোহেল রানা বলেন, ‘সিঙ্গাপুর ম্যাচে আমাদের কিছু ভুল ছিল। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই ভুলগুলো করলে প্রতিপক্ষ কোনো সুযোগ দেবে না ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য। দেখলাম যে আমাদের নিজেদের ভুলের কারণেই সিঙ্গাপুর ম্যাচটা জিততে পেরেছে। আমরা এবার সেটি করতে দিতে চাই না।’
সোহেল রানা বললেন, ‘হংকংয়ের বিপক্ষে যে কাজগুলো করতে হবে, সেগুলো যদি সঠিকভাবে না করতে পারি, তাহলে আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। আমরা বিশ্বাস করি, হংকংয়ের বিপক্ষে আমরা জেতার মতো দল। এই আত্মবিশ্বাস আমাদের মধ্যে আছে। বিশ্বাস করি ম্যাচটা জিততে পারবো। কোয়ালিফাই করতে হলে এই ম্যাচ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যেভাবেই হোক জিততে হবে। এটাই আমাদের প্রথম ফোকাস।’