
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় দেশের স্বাস্থ্য খাতের অন্তত ১০টি প্রধান সংকট চিহ্নিত করেছে। এসব সমস্যার সমাধান না হলে স্বাস্থ্য খাতের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে জানানো হয়। রাজধানীর শহীদ আবু সাঈদ আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বৃহস্পতিবার এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, দেশে এখনো প্রতিদিন প্রায় ১০-১২ হাজার রোগী হাসপাতালের মেঝেতে চিকিত্সা নিচ্ছেন। এই সংকট নিরসনে কমপক্ষে ১৫ হাজার শয্যা বাড়ানো প্রয়োজন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান, স্বাস্থ্যসেবা সচিব মো. সাইদুর রহমান এবং প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তারা জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই স্বাস্থ্য খাতের সংস্কারে কাজ শুরু হয়েছে এবং ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য খাতের অন্তত ১০টি গুরুতর সংকটকে ‘রোগ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেক সমস্যার সমাধান সম্ভব, আর কিছু ক্ষেত্রে কাজ শুরু করা হচ্ছে ভবিষ্যত্ উন্নয়নের জন্য। চিহ্নিত সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে মেধা ও যোগ্যতাভিত্তিক নিয়োগের অভাব, অতিমাত্রায় কেন্দ্রীয়করণ, প্রাথমিক চিকিত্সা অবহেলা, স্বচ্ছতার অভাব, জবাবদিহিতার সংকট, স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা ও মর্যাদাহানি, নৈতিক অবক্ষয়, বিদেশনির্ভরতা এবং পরিকল্পনা ও বরাদ্দের অসামঞ্জস্যতা। এসব সমস্যা মোকাবিলায় সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তিনি আরো বলেন, কিছু সংকট আমরা নিরাময় করতে পারব, আর কিছু কাজ শুরু করে দিতে পারব যেন ভবিষ্যতে তা সমাধান করা যায়। ইতিমধ্যে কোটা প্রথা বাতিল করে মেধা, কর্মদক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পদায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে স্বজনপ্রীতির অবসান ঘটবে।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, গত এক বছরে আহতদের চিকিত্সা, চিকিত্সক নিয়োগ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং আইন সংস্কারে একাধিক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হয়েছে। আন্দোলনে আহত ৭৮ জনকে বিদেশে চিকিত্সার জন্য পাঠানো হয়েছে, যাদের মধ্যে চার জনকে জরুরি ভিত্তিতে সিংগাপুরে পাঠানো হয়। তিনি জানান, অনেক আহতের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে, তবু চিকিত্সকরা ভয় উপেক্ষা করে সেবা দিয়েছেন। এমনকি সাতটি দেশের চিকিত্সকও সহযোগিতা করেছেন। স্বাস্থ্য খাতে একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেও তা মোকাবিলা সম্ভব হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
নূরজাহান বেগম আরো জানান, দেশে চিকিত্সকের ঘাটতি ৭ হাজার। সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৩ হাজার চিকিত্সক নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। পদোন্নতির ক্ষেত্রে ৭ হাজার সুপার নিউমারারি পদ সৃষ্টি এবং ৪৩ হাজার সিনিয়র নার্সের মধ্যে পদোন্নতির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ডিজিটাইজেশন প্রক্রিয়ায় পদোন্নতির ক্ষেত্রে বাণিজ্য বন্ধ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তাছাড়া বিদেশ নির্ভরতা কমাতে অঙ্গ প্রতিস্থাপন আইন সংস্কার করা হচ্ছে। সংশোধিত আইন আগামী সপ্তাহেই প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ হবে বলে জানান তিনি। মেডিক্যাল শিক্ষায় মানোন্নয়নে ১৯টি নতুন ছাত্রাবাস তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে ১০ হাজার শিক্ষার্থী থাকতে পারবে। শিক্ষক সংকট নিরসনে বেতন দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মাইলস্টোনের ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও বিদেশি চিকিত্সকদের প্রশংসার বিষয়টিও তুলে ধরেন তিনি। তিনি বলেন, চিকিত্সকদের প্রশিক্ষণে চীনের সহযোগিতায় ২৭ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, আরো ১৫ জনকে দেওয়া হবে। এয়ার অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় বিদেশ থেকে ভাড়া করতে হয়েছে। চিকিত্সা খাতের নিয়োগে সততা ও দক্ষতা নিশ্চিত করতে নিরপেক্ষভাবে কাজ চলছে বলে জানান নূরজাহান বেগম। তিনি আশা প্রকাশ করেন, শুরু হওয়া সংস্কার কার্যক্রম ভবিষ্যতে আরো সম্প্রসারিত হবে।