
ইলন মাস্কের মালিকানাধীন মহাকাশ সংস্থা স্পেসএক্সের স্টারলিংক স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট সংযোগের নতুন যুগ সূচনা করলেও, এর দ্রুত সম্প্রসারণ এখন বিজ্ঞানীদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিনই একাধিক স্টারলিংক স্যাটেলাইট পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পুনঃপ্রবেশ করছে, যা মহাকাশে আবর্জনার শৃঙ্খল প্রতিক্রিয়া বা ‘চেইন রিঅ্যাকশন’ সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে নিম্ন-পৃথিবী কক্ষপথের (LEO) স্থিতিশীলতা ও ভবিষ্যৎ মহাকাশ অভিযান মারাত্মকভাবে ঝুঁকির মুখে পড়বে।
স্মিথসোনিয়ান অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট জনাথন ম্যাকডাওয়েল জানিয়েছেন, বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দুটি স্টারলিংক স্যাটেলাইট বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে পুড়ে যাচ্ছে। তিনি আর্থস্কাইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আগামী বছরগুলিতে এই সংখ্যা বেড়ে প্রতিদিন প্রায় পাঁচটি স্যাটেলাইটে পৌঁছাতে পারে। কারণ, শুধু স্পেসএক্সই নয়, অ্যামাজনের প্রজেক্ট কুইপার ও চীনের স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কসহ একাধিক সংস্থা একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করছে।
ম্যাকডাওয়েল বলেন, ‘ইতোমধ্যেই আমাদের মাথার ওপর ৮ হাজারেরও বেশি স্টারলিংক স্যাটেলাইট কক্ষপথে রয়েছে। সবগুলো নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণ হলে এই সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়াবে, আর চীনা সিস্টেমগুলোর স্যাটেলাইট যোগ হলে তা আরও ২০ হাজার ছাড়াতে পারে।’ প্রতিটি স্যাটেলাইটের আয়ুষ্কাল সাধারণত পাঁচ থেকে সাত বছর, ফলে পুরোনো ইউনিটগুলো নিয়মিতভাবে অবসরে যাচ্ছে বা ত্রুটি ও সৌর প্রভাবের কারণে ধ্বংস হচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করছেন, কক্ষপথে পুরোনো স্যাটেলাইট, রকেটের ধ্বংসাবশেষ ও অন্যান্য টুকরো মিলিয়ে একসময় পৃথিবী ‘কেসলার সিনড্রোম’-এর মুখে পড়তে পারে। এই অবস্থায় এক সংঘর্ষ থেকে আরেক সংঘর্ষের সূত্রপাত হবে, যা একটি ক্যাসকেডিং প্রতিক্রিয়া তৈরি করে মহাকাশের অংশবিশেষকে ভবিষ্যতের ব্যবহারের অযোগ্য করে তুলবে এবং স্থলভিত্তিক জ্যোতির্বিজ্ঞানেও মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।
ম্যাকডাওয়েল আরও বলেন, সূর্যের ১১ বছরের চক্রের সবচেয়ে সক্রিয় সময়, অর্থাৎ বর্তমান ‘সৌর ম্যাক্সিমাম’, স্যাটেলাইট ক্ষয়ের গতি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। সূর্যের তীব্র বিকিরণ, সৌর শিখা এবং করোনাল ভর নির্গমন (CME) পৃথিবীর উপরের বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে তুলছে, ফলে তা প্রসারিত হয়ে অতিরিক্ত টান বা ড্র্যাগ তৈরি করছে, যা স্যাটেলাইটগুলোকে ধীরে ধীরে নিচের দিকে নামিয়ে আনে।
তিনি বলেন, ‘কিছু স্যাটেলাইটকে নতুন করে উপরে তোলা সম্ভব, কিন্তু অনেকগুলোর পতন অনিবার্য।’ আগামী কয়েক বছরের মধ্যে যদি হাজার হাজার নতুন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ অব্যাহত থাকে, তবে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, মহাকাশে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ ও ধ্বংসাবশেষ ব্যবস্থাপনা হবে এই দশকের অন্যতম বড় প্রযুক্তিগত ও নীতিগত চ্যালেঞ্জ।
সূত্র: এনডিটিভি