
সুদানের দারফুর অঞ্চলের এল-ফাশের শহরের একটি মসজিদে ড্রোন হামলায় কমপক্ষে ৭৮ জন নিহত এবং ২০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে একটি শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসা সূত্র। শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে নামাজ চলাকালে এ হামলা হয়।
হামলার জন্য দায়ী করা হয়েছে আধাসামরিক গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-কে। তবে গোষ্ঠীটি এখনো হামলার দায় স্বীকার করেনি।
বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “সকালের নামাজের সময় হঠাৎ ড্রোন হামলা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে বহু মানুষ প্রাণ হারায়।” ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার কাজ এখনও চলছে বলে জানা গেছে।
বিবিসি ভেরিফাইড একটি ভিডিও বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে, মসজিদের পাশেই প্রায় ৩০টি মৃতদেহ কাপড় ও কম্বল দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় দেখা গেছে। মসজিদটি শহরের পশ্চিমাংশে অবস্থিত।
চিকিৎসা সূত্র বলছে, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে, কারণ ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো অনেকের মরদেহ আটকে থাকতে পারে।
সুদানে দুই বছরের বেশি সময় ধরে সেনাবাহিনী ও আরএসএফ-এর মধ্যে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ চলছে। বর্তমানে আরএসএফ ধীরে ধীরে এল-ফাশার শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পথে অগ্রসর হচ্ছে।
এল-ফাশার হলো দারফুর অঞ্চলে সেনাবাহিনীর শেষ ঘাঁটি, যেখানে তিন লক্ষাধিক বেসামরিক নাগরিক যুদ্ধের ফাঁদে আটকে আছেন।
এই সপ্তাহেই আরএসএফ এল-ফাশারে নতুন করে অভিযান শুরু করে, যার মধ্যে শহরের পাশে অবস্থিত আবু শৌক শরণার্থী ক্যাম্পেও হামলা চালানো হয়।
স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণকারী ইয়েল ইউনিভার্সিটির হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব (এইচআরএল) জানায়, আরএসএফ বর্তমানে ওই ক্যাম্পের বড় একটি অংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
এইচআরএল-এর তথ্য অনুযায়ী, আরএসএফ বাহিনী এখন সেনাবাহিনীর মিত্র বিভিন্ন গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত “জয়েন্ট ফোর্সেস”-এর সদর দপ্তরেও প্রবেশ করেছে, যা আগে জাতিসংঘের একটি ঘাঁটি ছিল।
বিবিসি আরএসএফ যোদ্ধাদের সেখানে উপস্থিত থাকার একটি ভিডিও যাচাই করেছে, তবে তারা পুরো সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে কি না, তা নিশ্চিত নয়।
এই পরিস্থিতিতে, এল-ফাশার বিমানবন্দর এবং সেনাবাহিনীর প্রধান ঘাঁটি আরএসএফ-এর সরাসরি আক্রমণের আওতায় চলে এসেছে।
জাতিসংঘ শুক্রবার এক রিপোর্টে সতর্ক করেছে যে, “সংঘাতটি ক্রমেই জাতিগত রূপ নিচ্ছে”, যেখানে উভয় পক্ষ একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত মানুষদের ওপর প্রতিশোধমূলক হামলা চালাচ্ছে।
তবে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার মতে, আরএসএফ বিশেষভাবে আরব নয়—এমন সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে জাতিগত নির্মূল অভিযান পরিচালনা করছে।
আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সহায়তা সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস জানিয়েছে, আরএসএফ যোদ্ধারা “এল-ফাশার শহরকে আরব নয় এমন সম্প্রদায়ের মানুষদের থেকে পরিষ্কার করার” পরিকল্পনার কথা বলেছে।
আরএসএফ এ ধরনের অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে, এবং বলছে তারা “জাতিগত সংঘর্ষের সঙ্গে জড়িত নয়।”
সূত্র: বিবিসি