
সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি নিরাপত্তা চুক্তি কার্যকর করতে দামেস্কের একটি বিমান ঘাঁটিতে সেনা মোতায়েনের প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) বিশ্বস্ত ছয়টি সূত্রের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের মিত্র এবং দীর্ঘদিনের সিরীয় নেতা বাশার আল-আসাদের পতনের পর সিরিয়া কৌশলগতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে সম্পর্ক স্থাপন করছে, মার্কিন বাহিনী মোতায়েনের এই পদক্ষেপ তারই একটি বড় লক্ষণ।
ধারণা করা হচ্ছে, সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে নিরাপত্তা চুক্তির অংশ হিসেবে দক্ষিণ সিরিয়ার কিছু অংশে সৈন্যমুক্ত অঞ্চল তৈরি হওয়ার কথা। এই বিমান ঘাঁটিটি সেই অঞ্চলের প্রবেশদ্বারেই অবস্থিত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের মধ্যস্থতায় চুক্তিটি সম্পন্ন হচ্ছে।
ট্রাম্প ও সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎ
আগামী সোমবার (১০ অক্টোবর) হোয়াইট হাউসে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সঙ্গে দেখা করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সিরিয়ার কোনো প্রেসিডেন্টের এটিই হবে প্রথম হোয়াইট হাউস সফর।
ঘাঁটির প্রস্তুতির সঙ্গে পরিচিত ছয়টি সূত্রের সঙ্গে কথা বলেছে রয়টার্স। এর মধ্যে দু’জন পশ্চিমা কর্মকর্তা এবং একজন সিরিয়ার প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাও রয়েছেন। তারা নিশ্চিত করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সম্ভাব্য ইসরায়েল-সিরিয়া চুক্তি পর্যবেক্ষণে সহায়তা করার জন্য ঘাটিটি ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছে।
পেন্টাগন এবং সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই পরিকল্পনা সম্পর্কে মন্তব্যের অনুরোধে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও পরিকল্পনা সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো উত্তর দেয়নি।
মার্কিন প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমেরিকা আইএসআইএস’কে (ইসলামিক স্টেট) কার্যকরভাবে মোকাবেলা করার জন্য সিরিয়ায় আমাদের প্রয়োজনীয় অবস্থান ক্রমাগত অবলোকন করছে এবং (আমরা) অবস্থান বা (যেখানে) বাহিনী কাজ করে, তার সম্ভাব্য অবস্থান সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করি না।’
একজন পশ্চিমা সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পেন্টাগন গত দুই মাস ধরে ঘাঁটিতে বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা অভিযানের মাধ্যমে তাদের পরিকল্পনা ত্বরান্বিত করেছে। এই অভিযানের ফলে ঘাঁটির দীর্ঘ রানওয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত বলে প্রমাণিত হয়েছে।
সিরিয়ার দুটি সামরিক সূত্র জানিয়েছে, কারিগরি আলোচনায় রসদ, নজরদারি, জ্বালানি সরবরাহ এবং মানবিক কার্যক্রমের জন্য ঘাঁটির ব্যবহারের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে – যেখানে সিরিয়া এই স্থাপনার ওপর পূর্ণ সার্বভৌমত্ব বজায় রাখবে।
একজন সিরিয়ান প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রানওয়ে ব্যবহারযোগ্য কি না, তা নিশ্চিত করার জন্য মার্কিন সামরিক সি-১৩০ পরিবহন বিমান ঘাঁটিতে গিয়েছিল।
ঘাঁটির প্রবেশপথের একজন নিরাপত্তারক্ষী রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ‘পরীক্ষামূলকভাবে’ আমেরিকান বিমান সেখানে অবতরণ করেছে।
তবে মার্কিন সেনাদের ঘাঁটিতে পাঠানোর সময় নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু স্পষ্ট করা হয়নি।
সিরিয়ান-আমেরিকান উপস্থিতি
রয়টার্সের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নতুন মার্কিন পরিকল্পনাগুলো এই অঞ্চলে যুদ্ধবিরতি চুক্তি পর্যবেক্ষণের জন্য আরও দুটি নতুন মার্কিন সামরিক উপস্থিতির প্রতিফলন বলে মনে হচ্ছে। একটি লেবাননে, যারা হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে গত বছরের যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ করে। আরেকটি ইসরায়েলে, যারা ফিলিস্তিনি মুক্তিকামী সংগঠন হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে ট্রাম্প-যুগের যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ করে।
ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কুর্দি নেতৃত্বাধীন বাহিনীকে সাহায্য করার জন্য ইতোমধ্যেই এক দশক ধরে উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। গত এপ্রিল মাসে পেন্টাগন বলেছিল, তারা সেখানে সৈন্য সংখ্যা অর্ধেক করে ১ হাজার করবে।
প্রেসিডেন্ট শারা বলেছেন, নতুন সিরিয়ান রাষ্ট্রের সঙ্গে যে কোনো মার্কিন সেনা উপস্থিতির বিষয়ে একমত হওয়া দরকার।
মার্কিন ও সিরিয়ার কর্মকর্তারা বলছেন, সিরিয়া শিগগিরই মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যাপী আইএসআইএস-বিরোধী জোটে যোগ দিতে চলেছে।
ঘাঁটিটি নিয়ে আলোচনার সঙ্গে পরিচিত একজন ব্যক্তি বলেছেন, ১২ সেপ্টেম্বর মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ডের (সেন্টকম) কমান্ডার অ্যাডমিরাল ব্র্যাড কুপারের দামেস্ক সফরের সময় এই ঘাঁটি স্থানান্তরের বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল।
সেন্টকমের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কুপার এবং সিরিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত থমাস ব্যারাক শারা’র সঙ্গে দেখা করেছেন এবং সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবদান রাখার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এটি ট্রাম্পের ‘একটি সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্য এবং নিজের ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিতে স্থিতিশীল সিরিয়ার স্বপ্ন’ অর্জনে সহায়তা করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিনের দুই শত্রু ইসরায়েল এবং সিরিয়ার মধ্যে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য কয়েক মাস ধরে কাজ করে আসছে। আলোচনার সঙ্গে পরিচিত একটি সিরিয়ান সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগ করছে, যাতে চলতি বছরের মধ্যে এবং আল-শারা’র ওয়াশিংটন ভ্রমণের আগে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো যায়।