
বিশ্বকাপ সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জনের পথটা বাংলাদেশের জন্য এখন বেশ জটিল। প্রতিটি সিরিজ, প্রতিটি ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ। এমন একসময় আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৫ উইকেটের পরাজয় দলকে ফেলেছে চিন্তায়। ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটিং আবারও ব্যর্থ, বিশেষ করে শুরুর দিকে উইকেট হারানোর প্রবণতা ফিরে এসেছে পুরোনো রোগের মতো।
ম্যাচ শেষে অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ স্পষ্টভাবেই জানিয়েছেন, ‘প্রথম ১৫ ওভারে অনেক উইকেট হারানোই দলের বিপদ ডেকে এনেছে। তার ভাষায়, ‘উইকেটটা ব্যাটিংয়ের জন্য সহজ ছিল না, কিছুটা টার্নও ছিল। আমরা শুরুতে কয়েকটা উইকেট হারিয়ে ফেলেছি, সেখান থেকেই চাপ তৈরি হয়।’ যদিও মিরাজ তাওহীদ হৃদয়ের ইনিংসের প্রশংসা করেছেন, যিনি এক প্রান্তে ঠান্ডা মাথায় ব্যাট করে দলের ভরসা জুগিয়েছিলেন।
তবে বড় সমস্যা থেকে গেছে শেষ দিকের ব্যাটিংয়ে। বাংলাদেশ দল নিয়মিতই ভালো শুরু বা মাঝপথের জুটি গড়ে আবারও তা ভেঙে দিচ্ছে শেষ দিকে। মিরাজও স্বীকার করেছেন, ‘শেষ দিকে আমরা ভালো জুটি গড়তে পারিনি। এই উইকেটে ২৬০ রানের ওপরে করতে পারলে ভালো হতো। অন্তত ৪০ রান কম করেছি।’
বাংলাদেশের ব্যাটিং অস্থিরতার আরেকটি প্রতিচ্ছবি জাকের আলী অনিকের ইনিংস। টি-টোয়েন্টির মতো হতাশ করা শট খেলে ১৬ বলে ১০ রান করে ফেরেন তিনি। তা সত্ত্বেও হৃদয় তার পক্ষে কথা বলেছেন, ‘জাকের ভালো টাচে আছে। সব খেলোয়াড় সব সময় ভালো খেলে না, এটা স্বাভাবিক। আমি এটাকে ব্যাডপ্যাচ বলব না, হয়তো এক্সিকিউশনে সমস্যা হচ্ছে।’
বাংলাদেশের ব্যাটিং দুর্বলতার বিপরীতে আফগানিস্তান দেখিয়েছে নিয়ন্ত্রিত ক্রিকেটের উদাহরণ। শুরুতে গুরবাজ ও রহমত শাহর জুটি ম্যাচের ভিত গড়ে দেয়। যদিও আফগান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শাহিদি ম্যাচ শেষে রহমতের আউট নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ‘গুরবাজের আউটটা ঠিক ছিল, কিন্তু রহমত নিজের উইকেট ছুড়ে দিয়েছে। একজন সিনিয়র খেলোয়াড় হিসেবে ওর উচিত ছিল ইনিংসটা শেষ করা।’
আফগানিস্তানের বোলাররাও করেছেন প্রশংসনীয় কাজ। মাঝের ওভারে তারা কিপটে লাইন-লেন্থে বল করে বাংলাদেশের রান তোলার গতি আটকে দেন। শাহিদি বলেছেন, ‘বোলাররা দারুণ বল করেছে, বিশেষ করে মাঝের ওভারে। পাশাপাশি ফিল্ডিংয়েও আমরা ভালো ছিলাম, রানআউট আর ক্যাচগুলো ম্যাচে বড় প্রভাব ফেলেছে।’
এই ম্যাচের পর সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে আফগানিস্তান। বাংলাদেশের সামনে এখন আর কোনো ভুলের সুযোগ নেই-সিরিজ জিততে হলে পরের দুই ম্যাচই জিততে হবে। হৃদয় সেটাই মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘আমরা ভবিষ্যৎ নয়, সামনের ম্যাচে ফোকাস করতে চাই। একটা ম্যাচ ভালো খেলতে পারলে বাকিটিও আমাদের হাতে আসবে।’
প্রথম ম্যাচে ব্যাটিং ব্যর্থতা, শেষ দিকে ভাঙা জুটি, বড় ইনিংসের অভাব-সবই পুরোনো চিত্র। এখন দেখা যাক, দ্বিতীয় ম্যাচে মিরাজ-হৃদয়ের আত্মবিশ্বাস মাঠে কতটা প্রতিফলিত হয়। সিরিজে টিকে থাকতে হলে ব্যাটিং ইউনিটকেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে, নয়তো আবারও হারের আফসোসই গুনতে হবে টাইগারদের। সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আগামীকাল সন্ধ্যা ৬টায় মুখোমুখি হবে দুদল।