
জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত তেতসুয়া ইয়ামাগামি আদালতে দোষ স্বীকার করেছেন। সোমবার (২৮ অক্টোবর) টোকিও আদালতে বিচার শুরুর প্রথম দিনেই তিনি বলেন, ‘সবকিছু সত্যি’।
‘আবেনোমিকস’ নামে পরিচিত অর্থনৈতিক নীতি ও কট্টর পররাষ্ট্রনীতির জন্য পরিচিত এই নেতার হত্যাকাণ্ডে জাপানের রাজনীতিতে বড় ধরনের আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ঘটনার পর প্রকাশ্যে আসে শাসক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ও বিতর্কিত ধর্মীয় সংগঠন ইউনিফিকেশন চার্চের (মুনিজ নামেও পরিচিত) ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।
তদন্তকারীদের কাছে ইয়ামাগামি স্বীকার করেছেন, তিনি আবেকে গুলি করেছিলেন কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন, আবে ওই ধর্মীয় গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়েছেন, যার কারণে তার মা ও পরিবার আর্থিকভাবে ধ্বংস হয়ে যায়। ইয়ামাগামির অভিযোগ, ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রমাণ হিসেবে তার মা ওই চার্চে প্রায় ১০ কোটি ইয়েন (প্রায় ৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার) দান করেছিলেন।
এই ঘটনার পর ইউনিফিকেশন চার্চের কার্যক্রম নিয়ে তদন্ত শুরু হয়। দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রতিষ্ঠিত ও গণবিবাহ আয়োজনের জন্য পরিচিত এই সংগঠনের বিরুদ্ধে তদন্তের একপর্যায়ে জাপানের চার মন্ত্রী পদত্যাগ করেন। চলতি বছরের মার্চে টোকিও আদালত চার্চটি বিলুপ্তির নির্দেশ দেয়, তাদের করমুক্ত সুবিধা বাতিল করে এবং সম্পত্তি বিক্রির নির্দেশ দেয়।
তবে জাপান টাইমস-এর বরাতে বিবিসি জানায়, ইয়ামাগামির মা এখনও তার বিশ্বাস থেকে সরে আসেননি। তিনি স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড আমার বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করেছে।’
ইয়ামাগামির বিচার আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও তিনি অস্ত্র আইন ভঙ্গের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার আইনজীবীর দাবি, অভিযুক্তের তৈরি বন্দুকটি জাপানের প্রচলিত অস্ত্র আইনের আওতায় পড়ে না।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে পশ্চিম জাপানের নারা শহরে নির্বাচনী প্রচারণার সময় ঘরে তৈরি বন্দুক দিয়ে গুলি করে আবে’কে হত্যা করেন ৪৫ বছর বয়সী ইয়ামাগামি। গুলিবিদ্ধ হয়ে সেদিনই মারা যান জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে।
জাপানে অস্ত্র সহিংসতা অত্যন্ত বিরল। শিনজো আবে হত্যার পর থেকে দেশটিতে ঘরে তৈরি আগ্নেয়াস্ত্রের ওপর আরও কঠোর আইন কার্যকর করা হয়েছে।