
মধ্যপ্রাচ্যের দীর্ঘস্থায়ী সংকট ও সংঘাতের কেন্দ্রে বরাবরই রয়েছে ইসরায়েল। পার্শ্ববর্তী আরব দেশগুলোর ভূখণ্ডে একের পর এক হামলা চালিয়ে আসা এই রাষ্ট্র বারবার আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেও পেয়ে এসেছে দায়মুক্তি। ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে বারবার প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে ইসরায়েলি নেতৃত্ব।
তবুও, এ সংকটময় পরিস্থিতির ভেতর থেকেও কখনো কখনো শান্তির আশার আলো জ্বলেছে। সেই শান্তি প্রচেষ্টার স্বীকৃতি স্বরূপ একাধিক ইসরায়েলি নেতাকে দেওয়া হয়েছে নোবেল শান্তি পুরস্কার—যা ইতিহাসে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।
ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি: যুদ্ধ থেকে শান্তির পথে
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী মেনাকেম বেগিন ও মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত ১৯৭৮ সালে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এর মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘ শত্রুতার অবসান ঘটে এবং স্থাপন হয় কূটনৈতিক সম্পর্ক।
এটি ছিল প্রথমবারের মতো কোনো আরব রাষ্ট্র ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিল, আর ইসরায়েল ফিরিয়ে দিল সিনাই উপদ্বীপ। এই ঐতিহাসিক শান্তি উদ্যোগের জন্য দু’জনকেই দেওয়া হয় নোবেল শান্তি পুরস্কার। মধ্যস্থতায় ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার।
তবে এই শান্তিচুক্তির পেছনের একজন ছিলেন কট্টর ডানপন্থি নেতা বেগিন, যিনি একসময় নেতৃত্ব দিয়েছেন সশস্ত্র সংগঠন ইরগুন-এর। নোবেল কমিটি তার এই রূপান্তরকে দেখেছে ‘সাহসিকতার নিদর্শন’ হিসেবে।
অসলো চুক্তি: ইসরায়েল-ফিলিস্তিন স্বীকৃতি বিনিময়
দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর ১৯৯৩ সালে নরওয়ের অসলো চুক্তির মাধ্যমে নতুন করে শান্তির চেষ্টা শুরু হয়। গোপন আলোচনার মধ্য দিয়ে আসা এই চুক্তিতে ইসরায়েল প্রথমবারের মতো পিএলওকে ফিলিস্তিনিদের বৈধ প্রতিনিধি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। অপরদিকে পিএলও-ও স্বীকৃতি দেয় ইসরায়েলকে।
এরই স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৪ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান ইসরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী শিমন পেরেস এবং পিএলও চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাত। ওয়াশিংটনে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে রবিন-আরাফাতের করমর্দন বিশ্ব রাজনীতিতে এক স্মরণীয় দৃশ্য হয়ে ওঠে।
অসলো চুক্তি যদিও আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হয়, কিন্তু ইসরায়েলের অভ্যন্তরে এর তীব্র বিরোধিতা শুরু হয়। কট্টর ডানপন্থিরা চুক্তিকে ‘জাতীয় আত্মঘাত’ বলেও অভিহিত করে।
এর চূড়ান্ত পরিণতি ঘটে ১৯৯৫ সালের ৪ নভেম্বর, যখন তেল আবিবের এক শান্তি সমাবেশে আইজ্যাক রবিনকে গুলি করে হত্যা করে এক ইহুদি উগ্রবাদী। এখনো অনেকেই রবিনকে মনে করেন ‘শান্তির জন্য জীবন উৎসর্গকারী’ হিসেবে।
যদিও শান্তির নামে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, বাস্তবে ফিলিস্তিন সংকট আজও রয়ে গেছে অমীমাংসিত। গাজা, পশ্চিম তীর আর জেরুজালেমে সংঘাত দিন দিন আরও তীব্র হচ্ছে।
নোবেল কমিটি বলেছে, তারা পুরস্কার দেয় চেষ্টা ও সাহসিকতার স্বীকৃতি হিসেবে। কিন্তু সমালোচকরা মনে করেন, ফল না আসা পর্যন্ত তা ‘খালি কাগজে পুরস্কার’ দেওয়া ছাড়া কিছুই না।