
লাদাখকে রাজ্যের মর্যাদা এবং সংবিধানের অধীনে ষষ্ঠ তফসিলের দাবিতে অনশন করা সোনম ওয়াংচুককে গ্রেপ্তারের পর তার স্ত্রী গীতাঞ্জলি জে আংমো স্বামীর বিরুদ্ধে ভারত সরকারের করা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
গীতাঞ্জলি জানান, তার স্বামীকে লাদাখ থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর ৪৮ ঘণ্টারও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও কোনো অফিসারের কাছ থেকে কোনো তথ্য পাননি।
ওয়াংচুকের বিরুদ্ধে কঠোর জাতীয় নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে; যেখানে জামিন ছাড়াই দীর্ঘদিন আটক রাখার বিধান রয়েছে।
গীতাঞ্জলি অভিযোগ করেন, চার বছর আগে ওয়াংচুক যখন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এবং ষষ্ঠ তফসিলে একটি আইনসভা থাকার কথা সরকারকে মনে করিয়ে দিতে শুরু করেছিলেন, তখন থেকেই হয়রানি এবং ‘ডাইনি শিকার’ শুরু হয়েছিল।
তিনি বলেন, গোয়েন্দা কর্মীরা তখন থেকে তাদের দরজায় কড়া নাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে তাদের দুটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের জন্য বিদেশি তহবিল গ্রহণের লাইসেন্সের আবেদন অনুমোদন না করার হুমকি দেওয়া হয়।
গীতাঞ্জলি বলেন, একটি প্রতিষ্ঠানে কাছে ইতোমধ্যেই ফরেন কন্ট্রিবিউশন রেগুলেশন অ্যাক্ট (FCRA)-এর অধীনে লাইসেন্স ছিল। গত সপ্তাহে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাঁচটি অভিযোগ লঙ্ঘনের উল্লেখ তুলে এটিকে বাতিল করে দেয়।
তিনি বলেন, লাদাখীদের জন্য একটি আইনসভা পাওয়ার এবং পার্বত্য অঞ্চলকে ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় আনার প্রত্যাশায় বিপুল সংখ্যক নাগরিক বিজেপিকে ভোট দেয়। প্রতিটি মোড়ে মোড়ে দলটিকে সমর্থন করা সত্ত্বেও দাবিগুলো একটি অন্তহীন অপেক্ষায় পরিণত হয়। সমস্যার শুরু হয় এখান থেকেই।
তিনি বলেন, গত সংসদ নির্বাচনে ওয়াংচুক যখন জিতেছিলেন, তিনি নিজেই বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন। এখানকার সকলেই তাদের (বিজেপি) ক্ষমতায় আনার জন্য ভোট দিয়েছিলেন। কারণ তারা আমাদের চাহিদা পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
গীতাঞ্জলি বলেন, চার বছর আগে এভাবেই শুরু হয়েছিল। তিনি (ওয়াংচুক) শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করেছেন। কিন্তু ধীরে ধীরে আমাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়।
ভারতের পুলিশ ওয়াংচুকের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি যোগসূত্র থাকার অভিযোগের কথা বলেছে। ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার এমন অভিযোগকে ওয়াংচুকের স্ত্রী ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা’ বলে অভিহিত করেন।
লাদাখের পুলিশ মহাপরিচালক এসডি সিং জামওয়াল গত শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ওয়াংচুকের পাকিস্তান সফর নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, লাদাখের এই সমাজকর্মী পাকিস্তানে ডন পত্রিকা আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত একজন পাকিস্তানি ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন।
গীতাঞ্জলি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যদি এমন কিছু খুঁজে পেয়ে থাকে, তাহলে সেটা তাদের ব্যর্থতা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কী করছে? একজন পাকিস্তানি গোয়েন্দা কর্মকর্তা এখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে? তারা তাদের কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হয়েছে। আমি চাই, তাদের জবাবদিহি করতে হবে।
তিনি বলেন, তার স্বামী একজন বিজ্ঞানী হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করা একজন ব্যক্তি। সেই সংশ্লিষ্ট একটি সম্মেলনে (ডন সংবাদপত্র আয়োজিত) যোগ দিতে গিয়েছিলেন।
তিনি উল্লেখ করেন, এটি জাতিসংঘের নির্দেশে অনুষ্ঠিত একটি সম্মেলন ছিল… যা হিমালয় অঞ্চলের সকলের সঙ্গে কাজ করে। কিছু বিষয় ভূ-রাজনীতির বাইরেও যায় এবং যেখানে দেশগুলোর ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা থাকলেও তাদের একসঙ্গে কাজ করতে হয়।
তিনি আরও বলেন, ওয়াংচুকের পাকিস্তানের অনুষ্ঠানে হাজার হাজার মানুষের সামনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বায়ু দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই, কার্বন নিঃসরণ হ্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগের প্রশংসা করার ভিডিও রয়েছে।
গীতাঞ্জলি বলেন, তাহলে মানুষ কোথা থেকে তার (ওয়াংচুকের) পাকিস্তান সফর এবং এর মধ্যে এই সংযোগ খুঁজে পাচ্ছে? মোদি চীন ভ্রমণ করেন। তিনি মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে করমর্দন করেন। এটি সভাগুলোর পেছনের উদ্দেশ্য থাকে। সুতরাং সবাই যারা চীনে যায়, তারা সন্ত্রাসী নয়।
তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন যে, তার স্বামীর উস্কানিমূলক বক্তব্য জনতাকে সহিংস হতে উস্কে দিয়েছে। তিনি বলেন, ওয়াংচুক তাৎক্ষণিকভাবে তার অনশন ত্যাগ করেছেন এবং সহিংসতার নিন্দা করেছেন। কারণ তিনি চাননি, বিক্ষোভকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হোক।
গীতাঞ্জলি বলেন, ‘সে তার অনশন স্থগিত করেছেম কারণ সে চায়নি এটি আরও তীব্র হোক। শোকাহত পরিবারগুলো, এমনকি তাদের ছেলেদের হারানোর পরেও বলেছে, এটি মোটেও সোনম ওয়াংচুকের দোষ নয়। সে এটা উস্কে দেয়নি। সে জানতও না, এটি ঘটছে। সে শান্তিপূর্ণভাবে অন্য একটি পার্কে ছিল।’
তথ্যসূত্র: এনডিটিভি