
ফুটবল মাঠে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো নামলেই যেন ইতিহাসের পাতায় নতুন লাইন যোগ হয়। বয়স যতই বাড়ুক, গোল করার ক্ষুধা একটুও কমেনি পর্তুগিজ মহাতারকার। এক মাসেরও বেশি সময় পর মাঠে ফিরে জোড়া গোল করে এবার তিনি ছুঁয়ে ফেললেন ৬৫ বছর ধরে অক্ষত থাকা এক ঐতিহাসিক রেকর্ড।
সৌদি প্রো লিগে আল আখদৌদের বিপক্ষে ৩–০ গোলের জয় পেয়েছে আল নাসর। ম্যাচের নায়ক ছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, যিনি করেন দুটি গোল। এই জয়ে লিগে টানা ১০ ম্যাচ জয়ের রেকর্ড গড়েছে আল নাসর। ৬৬তম মিনিটে রোনালদো হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেছিলেন বটে, তবে অফসাইডের কারণে ভিএআরে সেটি বাতিল হয়ে যায়।
বয়স যে রোনালদোর জন্য কেবলই একটি সংখ্যা—তা তিনি বহু আগেই প্রমাণ করেছেন। সাধারণত ত্রিশ পেরোলেই যেখানে ফুটবলারদের পারফরম্যান্সে ভাটা পড়ে, সেখানে রোনালদো যেন আরও ভয়ংকর হয়ে উঠেছেন। বরং ক্যারিয়ারের ত্রিশের পরের অধ্যায়েই তিনি আগের চেয়েও বেশি গোল করেছেন।
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৩০তম জন্মদিনের আগে রোনালদো খেলেছিলেন ৭১৮ ম্যাচ, যেখানে তার গোলসংখ্যা ছিল ৪৬৩—গড়ে প্রতি ১২২ মিনিটে একটি গোল। অথচ ত্রিশে পা রাখার পর থেকে তিনি করেছেন আরও ৪৯৩ গোল। এই কীর্তির মাধ্যমে তিনি স্পর্শ করেছেন ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি ফুটবলার রনি রুকের দীর্ঘদিনের রেকর্ড।
আরএসএসএসএফ-এর তথ্য অনুযায়ী, ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ত্রিশের পর সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডটি এককভাবে ধরে রেখেছিলেন রনি রুক। আল আখদৌদের বিপক্ষে জোড়া গোল করে সেই রেকর্ডে এবার রুকের পাশে বসেছেন রোনালদো। ত্রিশের পর চারশোর বেশি গোল করা অন্য উল্লেখযোগ্য ফুটবলারদের মধ্যে রয়েছেন রোমারিও ও হোসেফ বিকান—যাদের রোনালদো অনেক আগেই ছাড়িয়ে গেছেন।
রনি রুক ১৯৪১ সালে ৩০ বছরে পা রাখেন এবং প্রায় দুই দশক ধরে পেশাদার ফুটবল চালিয়ে যান। ১৯৬১ সালে ৫০ বছর বয়সে অবসর নেওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি আর্সেনাল, ক্রিস্টাল প্যালেস ও ফুলহ্যামের হয়ে খেলেন। বিশেষ করে ফুলহ্যামে তার সময়টা ছিল স্মরণীয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ক্লাবটির হয়ে ৮৭ লিগ ম্যাচে করেন ৫৭ গোল। যুদ্ধকালীন সময়ে রয়্যাল এয়ারফোর্সে দায়িত্ব পালন করলেও ফুটবল চালিয়ে যান এবং সে সময় ফুলহ্যামের হয়ে ১৯৯ ম্যাচে করেন অবিশ্বাস্য ২১২ গোল। সব মিলিয়ে ৩০ বছর বয়সের পর রুকের গোলসংখ্যা ছিল ৪৯৩—যে রেকর্ডটি এতদিন অক্ষত ছিল।
তবে ফুটবলপ্রেমীরা ধরে নিচ্ছেন, এই রেকর্ড খুব বেশি দিন যৌথ থাকবে না। হাজারতম গোলের লক্ষ্যে এগিয়ে চলা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো আগামী মঙ্গলবার বছরের শেষ ম্যাচে আল ইত্তিফাকের বিপক্ষে সেই রেকর্ড এককভাবে নিজের করে নিতেই মাঠে নামবেন।