
রেমিট্যান্স প্রবাহের ইতিবাচক ধারা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ধারাবাহিক ডলার কেনার ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও শক্ত অবস্থানে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩৩.১৮ বিলিয়ন ডলার।
তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) নির্ধারিত ব্যালেন্স অব পেমেন্টস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম–৬) পদ্ধতি অনুসারে হিসাব করলে বাংলাদেশের নিট রিজার্ভ ২৮.৫১ বিলিয়ন ডলার। বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
রেমিট্যান্সে জোরালো প্রবৃদ্ধি
ডিসেম্বর মাসজুড়ে প্রবাসী আয় প্রবাহে উল্লেখযোগ্য গতি দেখা গেছে। চলতি বছরের ১ থেকে ২৯ ডিসেম্বর সময়ে দেশে এসেছে ৩ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স, যা গত বছরের একই সময়ের ২ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ২০ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি।
একদিনের হিসাবেও রেমিট্যান্স প্রবাহ শক্তিশালী ছিল। ২৯ ডিসেম্বর দেশে এসেছে ১০৫ মিলিয়ন ডলার।
চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে রেমিট্যান্সের চিত্র আরও ইতিবাচক। জুলাই ২০২৫ থেকে ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত সময়ে দেশে এসেছে মোট ১৬ দশমিক ০৮ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার কেনা অব্যাহত
বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিত ডলার কিনছে। ৩০ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ৮৯ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ১২২ টাকা ৩০ পয়সা, যা একইসঙ্গে কাট-অফ রেট হিসেবেও নির্ধারিত হয়।
এর ফলে শুধু ডিসেম্বর মাসেই বাংলাদেশ ব্যাংকের মোট ডলার কেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ০১ বিলিয়ন ডলার। আর চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট কেনা হয়েছে ৩ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার।
অর্থনীতিবিদদের মতে, রেমিট্যান্সের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সক্রিয় ভূমিকার কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে যে স্থিতিশীলতা ফিরছে, তা অর্থনীতির জন্য স্বস্তির বার্তা। এতে আমদানি ব্যয় পরিশোধ, বৈদেশিক ঋণের কিস্তি দেওয়া এবং বাজারে ডলারের চাপ কমাতে সহায়ক হবে।
তবে তারা সতর্ক করে বলছেন, আইএমএফের বিপিএম–৬ পদ্ধতিতে নিট রিজার্ভের হিসাবই প্রকৃত সক্ষমতা বোঝায়। তাই, রিজার্ভের এই উন্নত ধারা ধরে রাখতে রেমিট্যান্স প্রবাহ অব্যাহত রাখা এবং বৈদেশিক লেনদেনে শৃঙ্খলা বজায় রাখা জরুরি।