
ভারতের বেশ কয়েকটি তেল শোধনাগার রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি কমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের পর এ খবর জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ট্রাম্প বুধবার বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে সহযোগিতা করতে ভারত রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধের আশ্বাস দিয়েছে। তার পরদিন, বৃহস্পতিবার, বিষয়টি নিশ্চিত করে রয়টার্সকে জানিয়েছেন ভারতের জ্বালানি খাতের তিনটি সূত্র।
২০২২ সালে ইউক্রেনে হামলার পর ইউরোপে বিক্রি কমে যাওয়ায় রাশিয়া ছাড়মূল্যে তেল বিক্রি শুরু করে। এ সুযোগে ভারত ও চীন রাশিয়ার সমুদ্রবাহী অপরিশোধিত তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতায় পরিণত হয়।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, ভারতীয় শোধনাগারগুলো ডিসেম্বর থেকে ধীরে ধীরে রাশিয়ান তেল কেনা কমাবে। যদিও সরকার এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এ নিয়ে কোনো নির্দেশ দেয়নি।
ওয়াশিংটনে বাণিজ্য বৈঠকে জ্বালানি ইস্যু প্রাধান্য পাচ্ছে
ভারতের বাণিজ্য কর্মকর্তারা বর্তমানে ওয়াশিংটনে আলোচনায় রয়েছেন। মার্কিন পক্ষ ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করেছে এবং আমদানি শুল্ক কমাতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। আলোচনায় রাশিয়ান তেল আমদানি কমানো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, “বর্তমান মার্কিন প্রশাসন ভারতের সঙ্গে জ্বালানি সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী, এ নিয়ে আমাদের আলোচনা চলছে।”
ট্রাম্প–মোদির কথোপকথন নিয়ে দ্বন্দ্ব
হোয়াইট হাউসে এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, “ভারত রাশিয়া থেকে যে তেল কিনছিল, তাতে আমি সন্তুষ্ট ছিলাম না। প্রধানমন্ত্রী মোদি আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন, ভারত আর রাশিয়া থেকে তেল কিনবে না।”
তিনি আরও যোগ করেন, “এটি বড় পদক্ষেপ। এবার আমরা চীনকেও একই পথে আনব।”
তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার জানায়, ট্রাম্প ও মোদির মধ্যে বুধবার কোনো টেলিফোনালাপ হয়নি।
ভারতের জ্বালানি খাতের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, “ভারতীয় রিফাইনারিগুলো রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা কিছুটা কমাতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র থেকেও তেল আমদানির বিষয়ে বিবেচনা চলছে।”
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, “যদি ভারত ও চীন উভয়ই রাশিয়ান তেল কেনা বন্ধ করে, তাহলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম দ্রুত বেড়ে যেতে পারে।”
রাশিয়ার আত্মবিশ্বাস অটুট
রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক বৃহস্পতিবার বলেন, “ভারতের সঙ্গে আমাদের জ্বালানি অংশীদারত্ব অব্যাহত থাকবে বলে আমরা আত্মবিশ্বাসী। ভারত আমাদের সম্পদের চাহিদা রাখে এবং এটি অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক।”
রাশিয়ার ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভও বলেন, ট্রাম্প যেসব দেশকে রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করতে বলছেন, মস্কো তাদের ছাড়মূল্যে সরবরাহ দিতে পারবে। “যদি এসব দেশকে নিজেদের পছন্দমতো কেনাকাটার স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা হয়, তবে তা মুক্তবাণিজ্যের পরিপন্থী হবে,” বলেন তিনি।
বাণিজ্য তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে ভারতের মোট তেল আমদানির ৩৬ শতাংশ এসেছে রাশিয়া থেকে, যা প্রতিদিন প্রায় ১৭ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল।