
ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসের ভাই প্রিন্স অ্যান্ড্রুর ‘রাজপুত্র’ উপাধি কেড়ে নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে তাকে উইন্ডসর ক্যাসেল প্রাঙ্গণে অবস্থিত রাজকীয় অ্যাপার্টমেন্ট ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হবে।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে বাকিংহাম প্যালেস বলেছে, ‘মহামান্য (রাজা তৃতীয় চার্লস) আজ প্রিন্স অ্যান্ড্রুর পদবি, উপাধি এবং সম্মাননা অপসারণের জন্য একটি আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘প্রিন্স অ্যান্ড্রু এখন অ্যান্ড্রু মাউন্টব্যাটেন উইন্ডসর নামে পরিচিত হবেন। রয়্যাল লজে তার ইজারা পরিত্যাগ করার জন্য আনুষ্ঠানিক নোটিশ জারি করা হয়েছে এবং তিনি বিকল্প ব্যক্তিগত বাসস্থানে চলে যাবেন। এই তিরস্কারগুলো প্রয়োজনীয় বলে মনে করা হচ্ছে, যদিও তিনি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে চলেছেন।’
বিবিসি জানিয়েছে, অ্যান্ড্রু এখন নরফোকের রাজকীয় স্যান্ড্রিংহাম এস্টেটে চলে যাবেন এবং রাজা তার নিজস্ব তহবিল থেকে তার থাকার ব্যবস্থা করবেন।
এর আগে প্রিন্স অ্যান্ড্রু বলেছিলেন, আমেরিকান অর্থদাতা জেফ্রি এপস্টাইনের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে তিনি ‘ডিউক অফ ইয়র্ক’ উপাধি ব্যবহার বন্ধ করবেন। তবে তিনি একজন ‘রাজপুত্র’ হিসেবে থেকে গেছেন, কারণ তিনি রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের পুত্র। তার কন্যা বিট্রিস এবং ইউজেনি ‘রাজকন্যা’ উপাধি ধরে রাখবেন।
রাজপুত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ
২০১৯ সালে রাজপরিবারের সদস্য হিসেবে প্রিন্স অ্যান্ড্রুকে তার দাপ্তরিক দায়িত্ব থেকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়। একজন আমেরিকান নারী অভিযোগ করেছিলেন, ১৭ বছর বয়সে ‘এপস্টাইনকাণ্ডে’ যাদের সঙ্গে তাকে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে বাধ্য করা হয়েছে, তাদের মধ্যে অ্যান্ড্রু ছিলেন।
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর অনুসারে, বছরের পর বছর ধরে রাজপুত্র তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। তবে ওই নারী যুক্তরাষ্ট্রে মামলা দায়ের করেন। এরপর অ্যান্ড্রু আদালতের বাইরে ওই নারীকে ১ কোটি ২০ লাখ পাউন্ড দিয়ে ‘বিরোধ’ নিষ্পত্তি করেন।
২০২২ সালে দ্বিতীয় এলিজাবেথের সিদ্ধান্তে রাজপুত্রকে সম্মানসূচক সামরিক পদ এবং বেশ কয়েকটি সরকারি সংস্থার পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকা থেকে বঞ্চিত করা হয়। তিনি ‘মহামান্য’র সরকারি উপাধি ব্যবহারের অধিকারও হারান, যদিও নিজে তা বজায় রেখেছিলেন।
২০১৯ সালের জুলাই মাসে এপস্টাইনকে পুনরায় গ্রেপ্তার করা হয়। মার্কিন প্রসিকিউটরের কার্যালয় জানিয়েছে, ২০০২-২০০৫ সালে এপস্টাইন তার ম্যানহাটনের বাড়িতে কয়েক ডজন অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের সঙ্গে রাজপুত্রের দেখা করার ব্যবস্থা করেছিলেন বলে প্রমাণ রয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট মেয়েটির বয়স ছিল ১৪ বছর।
যুক্তরাষ্ট্রে এপস্টাইনের মামলা বেশ আলোচিত। তার বন্ধুবান্ধব এবং পরিচিতদের মধ্যে কেবল যুক্তরাষ্ট্রই নয়, বরং অন্যান্য অনেক দেশের বর্তমান এবং অবসরপ্রাপ্ত শীর্ষ কর্মকর্তারাও রয়েছেন। এর মধ্যে প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধান, প্রধান উদ্যোক্তা এবং শো-বিজনেস তারকারাও যুক্ত।
২০১৯ সালের ১০ আগস্ট কারাগারে আত্মহত্যার পর যুক্তরাষ্ট্রে এপস্টাইনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা বাতিল করা হয়।
‘চীনা ঘনিষ্ঠতা’
দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ ইঙ্গিত দিয়েছিল, প্রিন্স অ্যান্ড্রুকে ‘ডিউক অব ইয়র্ক’ পদবি ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল কেবল এপস্টাইনের সাথে তার দীর্ঘমেয়াদী বন্ধুত্বের নতুন তথ্যের আলোকে নয়। তার সঙ্গে চীনা কর্মকর্তাদেরও যোগাযোগ রয়েছে।
সংবাদপত্রটি দাবি করেছে, ২০১৮-২০১৯ সালে রাজপুত্র চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) বেইজিং সিটি কমিটির তৎকালীন সচিব কাই কি’র সঙ্গে কমপক্ষে তিনবার দেখা করেছিলেন।
 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	