
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের যুক্তরাজ্য সফর উপলক্ষে বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে উইন্ডসর ক্যাসলের সেন্ট জর্জেস হলে একটি রাজকীয় নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছিল। রাজা তৃতীয় চার্লস এবং রানি ক্যামিলা এই ভোজের আয়োজন করেন, যেখানে বিশ্বের ১৬০ জন গণ্যমান্য ব্যক্তি অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিবিসি সূত্রে এই খবর জানা গেছে।
ঐতিহ্যবাহী এই নৈশভোজে খাবার পরিবেশনের জন্য সৈন্যদের মতো শৃঙ্খলিত কর্মীরা নিয়োজিত ছিলেন। টেবিলগুলো ১ হাজার ৪৫২ পিস ছুরি, চামচ এবং অন্যান্য তৈজসপত্র দিয়ে সাজানো ছিল, এবং প্রতিটি অতিথির সামনে ছিল পাঁচ ধরনের গ্লাস। খাবারের তালিকা ফরাসি ভাষায় লেখা ছিল।
এই রাজকীয় ভোজে পরিবেশিত খাবারের মধ্যে ছিল, হ্যাম্পশায়ারের ওয়াটারক্রেস পানা কটা: এটি পারমেজান শর্টব্রেড এবং কোয়েল পাখির ডিমের সালাদের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়।
জুচিনি দিয়ে মোড়ানো অর্গানিক নরফোক চিকেন ব্যালোটিন- এই পদটি থাইম এবং সেভরি মসলা মেশানো সসের সঙ্গে পরিবেশিত হয়। কেন্টের রাস্পবেরি সারবেত- এটি ভ্যানিলা আইসক্রিমের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়, যার ওপর হালকা পোচ করা ভিক্টোরিয়া পাম ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
অতিথিদের বিভিন্ন পদের ওয়াইনও পরিবেশন করা হয়েছিল। সবচেয়ে বিশেষ আকর্ষণ ছিল ট্রান্স-আটলান্টিক হুইস্কি সাওয়ার ককটেল, যা জনি ওয়াকার, কমলার জেলি, পেকান ফোম এবং টোস্ট করা মার্শমেলোর একটি অনন্য মিশ্রণ ছিল।
ট্রাম্প এবং তার স্ত্রী ছাড়াও এই রাজকীয় নৈশভোজে ট্রাম্প-কন্যা টিফানি, প্রিন্স অব ওয়েলস উইলিয়াম, প্রিন্সেস অব ওয়েলস কেট মিডলটন এবং রাজা তৃতীয় চার্লসের বোন প্রিন্সেস অ্যান উপস্থিত ছিলেন। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, লন্ডনে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ওয়ারেন স্টিফেনস, ব্রিটিশ উপপ্রধানমন্ত্রী ডেভিড লামি এবং আরও অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।
প্রযুক্তি এবং ব্যবসা জগৎ থেকে অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক, ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান, ব্ল্যাকস্টোনের প্রধান নির্বাহী স্টিফেন শোয়ার্জম্যান এবং মিডিয়া মোগল রুপার্ট মারডক এই নৈশভোজে অংশ নেন। গলফার নিক ফাল্ডো এবং অ্যাথলেট ডেম ক্যাথলিন গ্রেইঞ্জারের মতো তারকারাও উপস্থিত ছিলেন, তবে হলিউড বা লন্ডনের কোনো বড় তারকাকে দেখা যায়নি।
গত মঙ্গলবার রাতে ট্রাম্প এবং মেলানিয়া লন্ডনে পৌঁছানোর পর তাদের বহনকারী এয়ারফোর্স ওয়ান বিমান স্ট্যানস্টেড বিমানবন্দরে অবতরণ করে। লন্ডনে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ওয়ারেন স্টিফেনস তাদের স্বাগত জানান। দুই দিনের এই রাষ্ট্রীয় সফরে ট্রাম্পকে ব্রিটিশ রাজপ্রাসাদ উইন্ডসর ক্যাসলে লালগালিচা সংবর্ধনা, তোপধ্বনি এবং অশ্বারোহী বাহিনীর প্রদর্শনীর মতো রাজকীয় আয়োজনে স্বাগত জানানো হয়।
ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে করমর্দন করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকেও একই রকম তোপধ্বনি হয়। এই সংবর্ধনা আয়োজনে ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য এবং প্রায় ১২০টি ঘোড়া অংশ নেয়। যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য এটি ছিল স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা।
উল্লেখ্য, দায়িত্ব পালনকালে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের যুক্তরাজ্যে দুবার রাষ্ট্রীয় সফর করা একটি বিরল ঘটনা। ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে ২০১৯ সালের জুন মাসে প্রথমবারের মতো যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফরে গিয়েছিলেন।
 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	