
মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং সামরিক অংশীদারত্ব আরও জোরদার করার লক্ষ্যে, কাতারের বিমানবাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের ইডাহোর মাউন্টেন হোম বিমানঘাঁটিতে একটি নতুন অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ অবকাঠামো গড়ে তোলার অনুমতি পাচ্ছে।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের ঘোষণা দেন। এই স্থাপনায় কাতারের নতুন কেনা এফ-১৫ যুদ্ধবিমান এবং পাইলটরা অবস্থান করবেন এবং মার্কিন সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যৌথ প্রশিক্ষণে অংশ নেবেন।
পেন্টাগনে কাতারের প্রতিরক্ষাবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সাউদ বিন আব্দুল রহমান আল-থানির সঙ্গে বৈঠকের পর হেগসেথ এই চুক্তিকে ‘অংশীদারত্বের আরও একটি দৃষ্টান্ত’ হিসেবে প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এর ফলে সম্মিলিত প্রশিক্ষণ উন্নত হবে এবং দুই দেশের সামরিক সক্ষমতা ও যৌথভাবে কাজ করার সক্ষমতা (আন্তপরিচালনা সক্ষমতা) ব্যাপকভাবে বাড়বে।
এই গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিটি এমন এক সময়ে ঘোষিত হলো, যখন যুক্তরাষ্ট্র-কাতার সম্পর্ক নতুন করে সংজ্ঞায়িত হচ্ছে। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে ন্যাটোবহির্ভূত আরব মিত্র হিসেবে কাতারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরান ও মধ্যপ্রাচ্যে তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মার্কিন সামরিক অভিযানে কাতার সমর্থন জুগিয়েছে, বিশেষ করে জুনে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার সময়।
একই সঙ্গে, হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময়ের আলোচনায় কাতার ‘উল্লেখযোগ্য ভূমিকার’ জন্য মার্কিন প্রশাসনের প্রশংসা পেয়েছে। যদিও এই ঘোষণার কিছুদিন আগে দোহায় বসবাসরত হামাস কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে ইসরায়েল বোমা হামলা চালালে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু পরে ক্ষমাও চেয়েছিলেন।
মার্কিন কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, ইডাহোতে এই সামরিক স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা কোনো তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার ফল নয়, বরং এটি জার্মানি ও সিঙ্গাপুরের মতো অন্যান্য সহযোগী দেশের সঙ্গে বিমানবাহিনীর গত কয়েক দশকের নিয়মিত একটি কার্যক্রমের অংশ। উল্লেখ্য, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি আল-উদেইদ কাতারে অবস্থিত।
সামরিক পরিভাষায় এই স্থাপনাকে ‘বেডডাউন’ অপারেশন বলা হয়, যা মূলত একটি প্রশিক্ষণ স্কোয়াড্রনের পরিচালনার জন্য স্থায়ী অবকাঠামো বোঝায়। এই পরিকল্পনার প্রাথমিক কাজ শুরু হয় ২০২২ সালে, যখন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় ছিলেন। এই স্থাপনায় স্থায়ীভাবে নিয়োজিত ১২টি এফ-১৫ কিউএ যুদ্ধবিমান, সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম এবং প্রায় ৩০০ অতিরিক্ত কাতারি ও মার্কিন বিমানবাহিনীর কর্মী থাকবেন।
এই স্থাপনা নির্মাণে প্রয়োজনীয় অর্থ কাতার বৈদেশিক সামরিক বিক্রয় কর্মসূচির মাধ্যমে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রকে সরবরাহ করবে। এই ঘাঁটির কার্যক্রম প্রাথমিকভাবে ২০২৪ অর্থবছরের শুরু থেকে অন্তত ১০ বছর ধরে চলার কথা রয়েছে। এই বেডডাউন স্থাপনা কাতারি পাইলটদের প্রশিক্ষণ, ব্রিফিং এবং বিমান পরিচালনার সময়সূচি নির্ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় স্থান ও লজিস্টিক সাপোর্ট দেবে। মার্কিন সামরিক বাহিনী এই নির্মাণকাজের জন্য স্থানীয় শ্রমিক নিয়োগ করবে, যা ঘাঁটি সংলগ্ন অধিবাসীদের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে এই চুক্তি ঘোষণার পরপরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং কট্টর ডানপন্থী কর্মী লরা লুমার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এই চুক্তিকে ‘জঘন্য কাজ’ এবং ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ বলে বর্ণনা করেছেন।
এই সমালোচনার মুখে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ দ্রুত এক্সে একটি পোস্ট করে পরিস্থিতি স্পষ্ট করার চেষ্টা করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, এ স্থাপনাটি কোনোভাবেই কাতারের মালিকানাধীন স্থায়ী ঘাঁটি নয়, বরং এটি এফ-১৫ কিউএ যুদ্ধবিমানের সঙ্গে যুক্ত একটি সহযোগিতামূলক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম মাত্র।
সূত্র: আল জাজিরা