
ভারতে ম্যাচ ফিক্সিংকে সরাসরি ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে আবেদন করেছে বিসিসিআই। ক্রিকেটে নৈতিকতা, স্বচ্ছতা ও জনআস্থা টিকিয়ে রাখতে এই পদক্ষেপ জরুরি বলে উল্লেখ করেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, ক্রিকেট–বিশ্বের ধনীতম বোর্ড বিসিসিআই সুপ্রিম কোর্টের কাছে জমা দেওয়া আবেদনে বলেছে, ‘ম্যাচ ফিক্সিংকে অপরাধ হিসেবে ঘোষণা না করলে খেলাটির সততা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং ন্যায্য প্রতিযোগিতার ভিত্তি ভেঙে পড়বে।’ গত ১৪ অক্টোবর আদালতের রেজিস্ট্রারের কাছে দাখিল করা নথিতে বিসিসিআই স্পষ্ট করে জানায়, ক্রিকেটে দুর্নীতির বিস্তার প্রতিরোধ এখন জাতীয় স্বার্থের বিষয়।
বিসিসিআই বলছে, ম্যাচ ফিক্সিং মূলত প্রতারণা, যা ভারতীয় দণ্ডবিধিতে অপরাধ হিসেবে বিদ্যমান, তাই এটি ফৌজদারি অপরাধ হিসেবেই বিবেচিত হওয়া উচিত। এই আইনি লড়াইয়ের সূত্রপাত ২০১৮–১৯ মৌসুমে কর্ণাটকের একটি স্থানীয় ক্রিকেট লিগে ফিক্সিং কেলেঙ্কারি থেকে, যেখানে ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও ২০২২ সালে রাজ্য হাইকোর্ট মামলা খারিজ করে দেয়, যুক্তি দিয়ে যে ম্যাচ ফিক্সিং অপরাধের আওতায় পড়ে না। বিসিসিআই বলছে, “যদি জনগণ প্রতিযোগিতার সততার ওপর থেকে বিশ্বাস হারায়, তাহলে ক্রিকেটের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়বে।”
ভারতে বড় আকারে প্রথম ফিক্সিং কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে ২০০০ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক হ্যানসি ক্রনিয়ে ও বুকমেকারদের কথোপকথন ফাঁস হওয়ার পর। ওই ঘটনায় ভারতের অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের নামও জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের আইপিএল স্পট–ফিক্সিং কেলেঙ্কারি আবারও দেশজুড়ে চরম বিতর্ক তৈরি করে, যার জেরে দুই ক্রিকেটারসহ রাজস্থান রয়্যালস ও চেন্নাই সুপার কিংসকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়।
২০১৯ সালে বিসিসিআই নিজস্ব দুর্নীতিবিরোধী নীতিমালা প্রণয়ন করে, যাতে খেলোয়াড় ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জরিমানা, দীর্ঘমেয়াদি নিষেধাজ্ঞা বা আজীবন বহিষ্কারের ক্ষমতা বোর্ডকে দেওয়া হয়। তবে বোর্ডের দাবি, আইনি কাঠামোর সুরক্ষা ছাড়া এই শাস্তি যথেষ্ট হয় না।
এদিকে, প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কা ২০১৯ সালে ম্যাচ ফিক্সিং দমনে সংসদীয় আইন পাস করে, যেখানে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ কোটি রুপি জরিমানার বিধান রয়েছে। দেশটিতে এই আইনের অধীনে প্রথম অভিযুক্ত হন সাবেক স্পিনার সচিত্রা সেনানায়েকে, যিনি বর্তমানে বিচারাধীন।