
তিন দিনের সফরে এখন ভারতে আছেন বিশ্ব ফুটবলের মহাতারকা লিওনেল মেসি। সফরের প্রথম দিনেই কলকাতার সল্টলেক স্টেডিয়ামে চরম অব্যবস্থাপনার শিকার হয়েছেন গ্যালারিভর্তি দর্শক। মেসিকে ঠিক মতো দেখতেই পাননি কলকাতার ফুটবলপ্রেমীরা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা স্টেডিয়ামে ভাঙচুর চালিয়েছেন।
ফুটবলভক্তদের ক্ষোভের মুখে অনুষ্ঠানের আয়োজক শতদ্রু দত্তকে আটক করেছে কলকাতা পুলিশ। মেসির সফরে এমন তুলকালাম কাণ্ড নিয়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন (এআইএফএফ)।
মেসির সফর আয়োজন থেকে পুরো ঘটনায় নিজেদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই জানিয়ে এক বিবৃতিতে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন জানায়, ‘বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন থেকে ছড়িয়ে পড়ায় ঘটনায় এআইএফএফ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। যেখানে ফুটবলের বিশ্বতারকা মেসি, সুয়ারেজ ও ডি পলকে দেখতে হাজারও মানুষ জমায়েত হন। এই ইভেন্টের আয়োজক বেসরকারি পিআর এজেন্সি। এই সংক্রান্ত কোনো সংস্থা, পরিকল্পনা কিংবা ইভেন্ট বাস্তবায়নের সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নয় এআইএফএফ।’
সবার প্রতি সহযোগিতার আহবান জানিয়ে এআইএফএফ বলছে, ‘এই ইভেন্টের কোনো বিস্তারিত কিছু আমাদের জানানো হয়নি। কিংবা ফেডারেশনও কোনো ছাড়পত্র দেয়নি। আমরা ওই ইভেন্টে অংশগ্রহণকারী সকলের প্রতি আহবান করি– যেন তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করে এবং যথাযথ শৃঙ্খলা অনুসরণ করে। এই মুহূর্তে সংশ্লিষ্ট সবার সুরক্ষা ও নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।’
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) ভারত সফরের প্রথম দিনে সকাল সাড়ে ১১টায় যুবভারতীর মাঠে ঢোকে মেসির গাড়ি। তবে স্টেডিয়ামে ছিল চরম অব্যবস্থাপনা। গাড়ি থেকে মেসি নামার সঙ্গে সঙ্গে তাকে বেশ কিছু মানুষ ঘিরে ধরেন তাকে। ফলে গ্যালারি থেকে প্রায় ২০ মিনিট মেসিকে দেখাই যায়নি। এক সময় ক্ষুব্ধ ফুটবলপ্রেমীরা ‘উই ওয়ান্ট মেসি’ স্লোগান দিতে শুরু করেন।
মেসিকে ঘিরে রাখেন নিরাপত্তা রক্ষীরা। এতে গ্যালারি থেকে তাকে দেখা যাচ্ছিল না। চড়া দামে টিকিট কেটে মেসিকে দেখতে যাওয়া ফুটবলপ্রেমীদের ভরসা ছিল স্টেডিয়ামের তিনটি জায়ান্ট স্ক্রিন। মোহনবাগান এবং ডায়মন্ড হারবারের প্রাক্তন ফুটবলারদের সঙ্গে মেসি পরিচিত হওয়ার সময়ও ভিড় ঘিরে ছিল তাকে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং প্রধান আয়োজক শতদ্রু দত্তকে মাইক্রোফোনে ঘোষণা করতে হয়। এতেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। ১১.৫২ মিনিটে আচমকা মেসিকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়।
মেসি স্টেডিয়াম থেকে বের হওয়ার পরই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। চড়া দামে টিকিট কিনে মাঠে এসেও মেসিকে দেখতে না পেয়ে দর্শকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এ সময় গ্যালারিতে লাগানো হোর্ডিং ভাঙচুর শুরু করেন তারা। ক্ষোভে গ্যালারির চেয়ার ভেঙে মাঠে ছুড়তে শুরু করেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দিশেহারা হয়ে যায় পুলিশ। এক সময় মাঠের ধারে ফেন্সিংয়ের গেট ভেঙে হুড়মুর করে মাঠে ভক্ত-সমর্থকরা ঢুকতে শুরু করেন। এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
এ ঘটনায় মেসির কাছে ক্ষমা চান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এক্সে দেওয়া তিনি লেখেন, ‘আজ সল্টলেক স্টেডিয়ামে যে অব্যবস্থাপনা হয়েছে, তাতে আমি গভীরভাবে বিচলিত ও মর্মাহত। আমি নিজেও হাজার হাজার ক্রীড়াপ্রেমীর সঙ্গে প্রিয় ফুটবলার মেসিকে দেখতে অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে ছিলাম।’
মেসির কাছে ক্ষমা চেয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, ‘এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার জন্য আমি আন্তরিকভাবে লিওনেল মেসি এবং সব ক্রীড়াপ্রেমী ও তার ভক্তদের কাছে ক্ষমা চাইছি।’