
বলিউডের লাস্যময়ী নায়িকা দিয়া মির্জা। পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি বিষয়ক একটি আলোচনা সভায় যোগ দিতে সম্প্রতি কলকাতায় এসেছিলেন এই বলি-তারকা। দিয়ার মা যেহেতু বাঙালি তাই বাংলা ও বাঙালিয়ানার সঙ্গে তার একটা আত্মিক যোগ রয়েছে। কলকাতায় আসা মানে দিয়ার কাছে ঘরে ফেরা। বাঙালি সংস্কৃতি তাকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করে বলে জানিয়েছেন অভিনেত্রী।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর আগে দিয়া একটি বাংলা ছবিতে অভিনয় করেছেন। এবার প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে একটি নতুন ছবিতে অভিনয় করতে চলেছেন, তাই তিনি খুবই এক্সাইটেড। এদিন কলকাতায় সবুজায়ন নিয়ে আয়োজিত ওই আলোচনা সভায় যোগ দিয়ে অভিনেত্রী বলেন, ‘প্রকৃতিকে ধ্বংস করা বন্ধ না হলে এবং বৃক্ষরোপণ না করলে আমরা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি সুস্থ পৃথিবী রেখে যেতে পারব না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইনার বিউটি ও ইনার পিস হল তার সৌন্দর্যের চাবিকাঠি।’
অনুষ্ঠানের শুরুতেই দিয়া মির্জা বলেন, ‘আমি কিন্তু আধা বাঙালি। জানেন তো? স্পষ্ট বাংলা বলতে পারি। আমার মা বাঙালি। আর বাবা জার্মান ছিলেন। ৯ বছর বয়সে বাবাকে হারাই। তারপরে আমি এক মুসলিম পরিবারে বড় হয়েছি। তারা আমাকে অ্যাডপ্ট করেছিলেন। সেই পারিবারিক শিক্ষাই আমি এখনও বহন করি। মুসলিম পরিবার মানেই একটা ধারণা তৈরি হয়, মেয়েরা কথা বলতে পারবে না। অথচ আমি সব ডিবেটে অংশ নিতেই শিখেছি পরিবার থেকে।’
হঠাৎ পরিবেশের বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর কথা মনে হলো কেন? জবাবে দিয়া বলছেন, ‘ফিকি ফ্লো’-এর এই আলোচনায় এসে বলতে চাই, দশ বছর হয়ে গেল আমি প্লাস্টিকের কিছু ব্যবহার করি না। এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে মাইক্রো প্লাস্টিক পাওয়া যাচ্ছে মানুষের শরীরেও। ছেলের জন্মদিন আমি বরাবর এনভায়রনমেন্ট ফ্রেন্ডলি রাখি। বেলুন ব্যবহার করি বাচ্চার জন্মদিনের সেলিব্রেশনে। আইরনিটা হলো সেই প্লাস্টিকই আমাদের সন্তানের আয়ু কমিয়ে দিচ্ছে। তাই প্রথম থেকেই আমি এই বিষয়ে সচেতন।’
অভিনেত্রী নাকি বিশেষ কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করেন জীবনে। যেমন, মেটালের বোতলে জল রি-ফিল করে খাওয়া, কেনাকাটা করতে গেলে কাপড়ের থলি রাখা, একই পোশাক বারবার পরা আর নিরামিষ খাবার খাওয়া। দিয়ার মতে, এই সব ক’টা পদক্ষেপই নাকি বিশেষ পরিবর্তন আনতে পারে পরিবেশ রক্ষায়।
মাত্র ২৬ বছর বয়সে নিজের প্রযোজনা সংস্থা শুরু করেছিলেন দিয়া। তিনি বলেন, ‘তখন আমাকে অনেক নায়িকা বলেছিলেন যে পুরুষতান্ত্রিক ইন্ডাস্ট্রি এই বিষয়টা ভালো চোখে দেখবে না। আমি আর কোনও কাজ পাবো না। এমনিতেও কাজ পাচ্ছিলাম না। ‘রেহনা হ্যায় তেরে দিল মে’-র পরে এমন সব চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পাচ্ছিলাম যা আমার মানসিকতার সঙ্গে একদম মিলছিল না। সব সময়ে শুনতে পেতাম আমি খুব সুন্দরী তাই কোনও গ্রামের মহিলার চরিত্রে অভিনয়ের জন্য, কোনও সিরিয়াস চরিত্রের জন্য, কোনও মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য পারফেক্ট নই। বিষয়টা অত্যন্ত বিরক্তিকর ছিল। তাই প্রযোজনা সংস্থা খোলার কথা ভাবি। অনেক কাজও করেছি তার পরে।’
৪০ বছরের পরে নাকি দিয়া বুঝতে শিখেছেন ‘না’ বলতে পারায় কোনও লজ্জা নেই। নায়িকার সংযোজন, ‘৪০ বছর হয়ে গেলে ভিশনটা ক্লিয়ার হয়ে যায়। তখন অপ্রয়োজনীয় কাউকে জীবনে জায়গা দিতে ভালো লাগে না। সে বন্ধু হোক বা কোনও সম্পর্ক হোক বা আত্মীয়। ৪০ হওয়ার পরে বুঝতে শিখেছি না বলতে পারাটা কতটা এম্পাওয়ারিং। নিজেকে প্রাধান্য দেওয়াটা কখনও দোষের নয়। আমার ১৬ বছরের কন্যা, যাকে আমি বিবাহসূত্রে পেয়েছি, সব বিষয়ে আমাকে আর ওর বাবাকে না বলে। ওর কাছ থেকে শিখেছি না বলতে পারাটা দোষের কিছু নয়।’
মেয়ের কথা উঠতেই কিছুটা আপ্লুত হয়ে পড়েন দিয়া। ছেলের কথাও যোগ করেন তিনি। বলেন, ‘আমার মেয়ে টিনএজার আর ছেলে টডলার। দু’জন পুরো দুই মেরুর মানুষ। একবার মেয়ের মানসিক পরিবর্তনের কথা ভাবতে হয়, একবার আবার ছেলের সঙ্গে ছোটাছুটি করতে হয়। দুটোই খুব মজার। তবে বেশ চ্যালেঞ্জিং-ও।’