
মার্কিন সামরিক বাহিনীকে আফগানিস্তানে ফিরে আসার এবং বাগরাম বিমানঘাঁটি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া প্রস্তাব আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে তালেবান সরকার।
শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বিবৃতিতে বলেছেন, কাবুল ওয়াশিংটনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে প্রস্তুত, তবে পুনরায় সামরিক উপস্থিতির অনুমতি দেওয়া হবে না।
গতকাল বৃহস্পতিবার ট্রাম্প বলেন, তার প্রশাসন বাগরাম ঘাঁটি ‘পুনরায় দখল’ করার জন্য চাপ দিচ্ছে। তিনি নিজেও দীর্ঘদিন ধরে এই ঘাঁটি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য আশা প্রকাশ করেছেন। তার মতে, চীনের নিকটবর্তী হওয়ার কারণে এর অবস্থান কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এটি ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছি। আমরা এটি বিনামূল্যে দিয়েছি। চীন যেখানে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে, (ঘাঁটিটি) সেখান থেকে ঠিক এক ঘণ্টা দূরে।’
তবে আফগান কর্মকর্তারা এই ধারণা উড়িয়ে বলেন, ‘আফগানিস্তানের কোনো অংশে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সামরিক উপস্থিতি বজায় না রেখে…আফগানিস্তান এবং যুক্তরাষ্ট্রের একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।’
তিনি আরও বলেন, কাবুল পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং অভিন্ন স্বার্থের ভিত্তিতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে প্রস্তুত।
আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুসারে, আফগানিস্তানে দুই দশক ধরে মার্কিন সামরিক বাহিনীর অভিযানের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করেছে কাবুলের ঠিক উত্তরে অবস্থিত বাগরাম ঘাঁটি। এখানে একটি কুখ্যাত কারাগার ছিল।
যুক্তরাষ্ট্র তথাকথিত ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ চলাকালীন হাজার হাজার মানুষকে বছরের পর বছর ধরে কোনো অভিযোগ বা বিচার ছাড়াই এই স্থানে বন্দী করে রেখেছিল। তাদের অনেকের ওপর নির্যাতন চালানো হয়।
মার্কিন সেনা প্রত্যাহার এবং আফগান সরকারের পতনের পর ২০২১ সালে তালেবানরা এই স্থাপনাটি পুনরুদ্ধার করে। ট্রাম্প বারবার ঘাঁটিটি ‘পরিত্যক্ত হওয়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে’ বলেছেন, ওয়াশিংটনের উচিত ছিল চীনের কাছে অবস্থানের কারণে একটি ছোট বাহিনী সেখানে বজায় রাখা।
এদিকে, ঘাঁটি চেয়ে তালেবানের কাছে আহ্বান জানানোর দিনই ট্রাম্প প্রথমবারের মতো নিশ্চিত করেন, তার সরকার আফগান কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করছে।
গত সপ্তাহে তার বিশেষ দূত অ্যাডাম বোহলার এবং আফগানিস্তানের প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূত জালমে খলিলজাদ কাবুলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে দেখা করেন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মার্চ মাস থেকেই বাগরামে নিজেদের উপস্থিতি পুনঃপ্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা বিবেচনা করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।
ট্রাম্প এবং তার উপদেষ্টারা যুক্তি দেন, এই বিমানঘাঁটি কেবল ‘নিরাপত্তার’ উপরই নয়, বরং আফগানিস্তানের মূল্যবান খনিজ সম্পদে মার্কিন প্রবেশাধিকারও নিশ্চিত করতে পারে।
প্রসঙ্গত, মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর সঙ্গে ২০ বছর ধরে সংঘাতের পর ২০২১ সালে ক্ষমতায় ফিরে আসা তালেবান সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি।