
২০১৯ সালের পর প্রথমবারের মতো বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। দক্ষিণ কোরিয়ার গিওংজুতে অনুষ্ঠিতব্য এশিয়া-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা (এপেক) শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে দুই নেতার এই বৈঠক হবে। বুধবার (২৯ অক্টোবর) সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
যদিও ওয়াশিংটন ও বেইজিং উভয়েই সম্পর্কের উত্তাপ কমানোর চেষ্টা করছে, তবু বিশ্লেষকদের ধারণা, দুই পরাশক্তির বিরোধপূর্ণ নানা ইস্যুর সমাধান এখনই সম্ভব নয়।
এই বৈঠককে ঘিরে আগেই আলোচনায় এসেছে সম্ভাব্য চুক্তির খসড়া। এতে বলা হয়েছে, চীন বিরল খনিজ উপাদানের ওপর কঠোর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ স্থগিত করতে পারে। আর যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের হুমকি থেকে সরে আসতে পারে। একইসঙ্গে দুই দেশ সয়াবিন বাণিজ্য, ফেন্টানাইল উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ ও টিকটক সংক্রান্ত ইস্যুতেও সহযোগিতার সম্ভাবনা খুঁজছে।
তবে বাণিজ্য যুদ্ধের বড় অংশ এখনো অক্ষুণ্ণ থাকবে। বর্তমানে চীনা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের গড় শুল্ক ৫৫ শতাংশেরও বেশি, আর মার্কিন পণ্যের ওপর চীনের শুল্ক প্রায় ৩২ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র শত শত চীনা কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে এবং উন্নতমানের এআই চিপ ও সরঞ্জাম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে চীনও বেশ কয়েকটি মার্কিন প্রতিষ্ঠানকে ‘অবিশ্বস্ত সত্তা’ তালিকায় যুক্ত করেছে।
বাণিজ্যিক উত্তেজনার কারণে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য প্রবাহও দ্রুত কমছে। সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানি কমেছে ২৭ শতাংশ, আর মার্কিন পণ্যের আমদানি ১৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধারা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকতে পারে।
রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওয়াং ওয়েন বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের কাঠামোগত দ্বন্দ্ব এখনো অমীমাংসিত। ভবিষ্যতে সম্পর্ক আরও কঠিন হতে পারে।
অন্যদিকে সাংহাইয়ের হুটং রিসার্চের বিশ্লেষক শান গুও মনে করেন, এই বৈঠকের মূল লক্ষ্য হবে উত্তেজনা এড়ানো, কোনো স্থায়ী সমাধান নয়।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেনিস ওয়াইল্ডার আশা প্রকাশ করেছেন, এই আলোচনায় কৌশলগত ইতিবাচক ফলাফল আসতে পারে, তবে বাণিজ্য যুদ্ধ এখানেই শেষ হবে না।
ট্রাম্প যেখানে চীনকে আমেরিকার অর্থনীতি ‘ধ্বংসের’ দায়ে অভিযুক্ত করেন। অপরদিকে শি জিনপিং সেখানে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে চলেছেন। বিশ্লেষকদের মতে, দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত। তবে উভয়পক্ষই বুঝতে পারছে, লড়াই নয়, কথোপকথনই এখন একমাত্র পথ।