
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যদি মানুষের মস্তিষ্কের মতো কাজ করার চেষ্টা করে তবে তা আরও ভালোভাবে সিদ্ধান্ত নিতে, শিখতে বা সমস্যা সমাধান করতে পারবে বলে নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে।
এক নতুন পদ্ধতি তৈরি করেছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ সারে’-এর গবেষকরা, যাতে এমন প্রমাণ মিলেছে।
বিবিসির প্রতিবেদন অনযায়ী, এ পদ্ধতিতে মানুষের মস্তিষ্কের নেটওয়ার্ক বা কাজের ধরন অনুকরণ করেছেন তারা, যেন মানুষের মস্তিষ্কের মতো করে শেখার ও চিন্তা করার চেষ্টা করতে পারে এআই।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নিউরোকম্পিউটিং’য়ে।
গবেষণা বলছে, মানুষের মস্তিষ্কের মতো স্নায়ু নেটওয়ার্কের কাজ অনুকরণ করলে জেনারেটিভ এআই ও চ্যাটজিপিটির মতো আধুনিক এআই মডেলের কার্যসক্ষমতা বাড়তে পারে।
‘টপোগ্রাফিকাল স্পার্স ম্যাপিং’ নামের পদ্ধতিতে প্রতিটি নিউরন কেবল তার প্রয়োজনীয় বা কাছের নিউরনের সঙ্গে সংযোগ রাখে, ঠিক যেমন মানুষের মস্তিষ্ক বিভিন্ন তথ্যকে দক্ষভাবে সাজায় বিষয়টি তেমনই।
‘ইউনিভার্সিটি অফ সারে’-এর জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ড. রোমান বাউয়ার বলেছেন, “আমাদের গবেষণা থেকে ইঙ্গিত মেলে, বিভিন্ন এআই সিস্টেম অনেক বেশি কার্যকরভাবে তৈরি করা সম্ভব, যা শক্তি চাহিদা কমিয়ে আনলেও কর্ম সক্ষমতা কমাবে না।”
গবেষকরা বলেছেন, এআই মডেল তৈরির সময় অনেক অপ্রয়োজনীয় সংযোগ থাকে, যা কেবল শক্তি খরচ করে, তবে কাজের কোনো উন্নতি করে না। এ নতুন মডেল সেই অপ্রয়োজনীয় সংযোগ বাদ দিয়ে কেবল দরকারি সংযোগ রাখে। ফলে এটি দ্রুত, শক্তি সাশ্রয়ী ও সঠিকভাবে কাজ করতে পারে।
ড. বাউয়ার বলেছেন, ‘বর্তমানে বিভিন্ন জনপ্রিয় এআই মডেলকে ট্রেইনিং দিতে ১০ লাখ কিলোওয়াট-ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ খরচ হতে পারে। এআইয়ের ব্যবহার যে হারে বাড়ছে, এভাবে এত বেশি শক্তি খরচের বিষয়টি টেকসই নয়।’
এ উন্নত সংস্করণটি ‘এনহ্যান্সড টপোগ্রাফিক্যাল স্পার্স ম্যাপিং’ নামে পরিচিত, যা এ গবেষণায় আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়েছেন গবেষকরা। এটি প্রশিক্ষণের সময় জীববৈচিত্র্য-অনুপ্রাণিত ‘প্রুনিং’ বা অপ্রয়োজনীয় সংযোগ কেটে ফেলার প্রক্রিয়া ব্যবহার করে।
মানুষের মস্তিষ্কের মতোই কাজ করে এই সিস্টেম। মানুষের মস্তিষ্ক যখন নতুন কিছু শেখে তখন অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন লিংক সরিয়ে ফেলে যাতে শেখা আরও কার্যকর হয়। ঠিক তেমনভাবে এআইও শেখার সময় অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন সংযোগ বাদ দেয়।
গবেষণা দলটি বলছে, ‘নিউরোমরফিক কম্পিউটার’ তৈরির মতো আরও বাস্তবসম্মত ক্ষেত্রে কীভাবে এ পদ্ধতিটি ব্যবহার করা যেতে পারে তা খতিয়ে দেখছেন তারা। নিউরোমরফিক কম্পিউটার’ হচ্ছে, মানুষের মস্তিষ্কের কাঠামো ও কাজের ধরন অনুকরণ করে তৈরি কম্পিউটার।’