
ক্রিকেটে ভদ্রতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাই যেন সবচেয়ে বড় অলংকার। প্রতিটি ম্যাচে জয়-পরাজয়ের সঙ্গে ক্রীড়াসুলভ মনোভাবই এই খেলার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান ম্যাচগুলোতে সেই সৌন্দর্যে দেখা যাচ্ছে রাজনীতির কালো ছায়া। গতকাল নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপে দুই প্রতিবেশী দেশের লড়াইয়ে এমনই এক দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটল কলম্বোয়।
কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে বসেছিল ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ। পুরুষদের এশিয়া কাপের পর নারীদের বিশ্বকাপেও ভারতের ক্রিকেটাররা হাত মেলাননি। এদিকে গতকালের খেলায় ২৮ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ১২২ রানে ব্যাট করছিল ভারত। সে সময় ঝাঁক ঝাঁক মশার আক্রমণে খেলা থমকে যায়। ক্রিজে থাকা জেমিমাহ রদ্রিগেজ ও হার্লিন দেওল দুজনেই নাজেহাল হয়ে পড়েন।
পাকিস্তানের ক্রিকেটাররাও তখন সমস্যায় পড়লেও মজার ছলে পরিস্থিতি সামাল দিতে দেখা যায় তাদের। স্পিনার নাশরা সান্ধু আম্পায়ারের সঙ্গে কথা বললে মাঠে আনা হয় মশার স্প্রে। প্রথম দফায় মিনিট কয়েক খেলা বন্ধ থাকার পর আবার ৩৪তম ওভারে শুরু হয় মশার দ্বিতীয় হানা। এবার পেশাদার কীটনাশক ছেটানো কর্মীদের মাঠে এনে পুরো আউটফিল্ডে স্প্রে করা হয়। দুই দলের ক্রিকেটাররা তখন বাইরে অপেক্ষা করেন প্রায় ১৫ মিনিট। খেলা বন্ধ হওয়ার আগে ভারতের সংগ্রহ ছিল ৩৪ ওভারে ৪ উইকেটে ১৫৪ রান।
তবে খেলার বাইরেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে ম্যাচটি। ক্রিকেটকে ‘ভদ্রলোকের খেলা’ বলা হলেও, মাঠে দেখা গেছে তার উলটো চিত্র। পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাত মেলাতে অস্বীকৃতি জানান ভারতীয় অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌরসহ তার সতীর্থরা। ম্যাচ শেষে যে সৌজন্য বিনিময়ের দৃশ্য ক্রিকেট সংস্কৃতির অংশ হয়ে আছে, তা যেন হাওয়া হয়ে গেল কলম্বোর গরম হাওয়ায়।
পুরুষদের এশিয়া কাপেও এমন আচরণে সমালোচনায় পড়েছিল ভারত। রাজনৈতিক টানাপড়েনের কারণ দেখিয়ে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাত মেলাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন সূর্যকুমার যাদবরা। নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপে একই আচরণের পুনরাবৃত্তি কেবল হতাশাই বাড়িয়েছে ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে। কলম্বোর মাঠে মশার উপদ্রব সামাল দেওয়া গেল স্প্রে করে, কিন্তু ক্রিকেটের মাঠে ছড়িয়ে পড়া এই অহংকার ও অমার্জিততার ধোঁয়া মুছবে কীসে-এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে ভক্তদের মনে।